v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-26 19:54:14    
সমবায়র চিকিত্সা ব্যবস্থা

cri

    চীন একটি বৃহত্ কৃষি উত্পাদনকারী দেশ, চীনে কৃষকদের সংখ্যা ৮০ কোটি । দীর্ঘকাল ধরে, চীনের গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের চিকিত্সার জন্যে পয়সার অভাব  ছিল । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সমস্যায় সরকারের নিবিড় মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে । সরকার ইতিমধ্যেই সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে সমবায়মূলক চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থার প্রবর্তন শুরু করেছে । তাই আজকের এই বর্ণচ্ছটা অনুষ্ঠানে আমি  আপনাদেরকে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে দেখাবে , সেখানে এই ব্যবস্থা কিভাবে চালু হয়েছে।

    তিব্বত অঞ্চল এক সুবিশাল ও সু-উচ্চ মালভুমি ,জন্টিল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে ,সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি মন্হর । চীনসরকারের উদ্যোগে বরাবরই সেখানকার কৃষক্আর পশুপালকদের মধ্যে বিশেষ চিকিত্সা নিশ্চয়তাব্যবস্থা চালু রয়েছে । মানে প্রতিবছরই সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে মাথাপিছু কিছু চিকিত্সাভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় । অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংগে সংগে যদিও এই ভাতাও বাড়তে থাকে , তবুও তা তাদের চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজন মেটাতে পারছে না ।

    ১৯৯৭ সাল থেকে তিব্বত অঞ্চলে এই ব্যবস্থার উন্নতির জন্যে কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যে এক নতুন ব্যবস্থা অর্থাত্ সমবায় চিকিত্সানিশ্চয়তা ব্যবস্থার প্রবর্তন শুরু হয়েছে । এই  ব্যবস্থা আসলে হলো প্রতিটি ইউনিয়পরিষদের অধীনে সমবায় চিকিত্সা তহবিল গড়ে তোলা , অর্থাত্ প্রত্যেক কৃষক আর পশুপালককে দেয়া মাথাপিছু সরকারী চিকিত্সাভাতা একত্রিত করে মূল তহবিলটিতে রাখা হয় , আর কৃষক ও পশুপালকরা প্রতিবছর তাদের বিশুদ্ধ আয়ের দেড় থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত এই তহবিলে জমা রাখেন, আসলে বছরে মাথাপিছু মাত্র পনেরো ইউয়ান ,মানে দুই ডলারেরও কম অর্থ এই তহবিলে জমা রাখতে হয় । আর যারা গরীব, বেকার বা বিকলাঙ্গ তাদের জন্যে স্থানীয় সরকারই অর্থ তহবিলে জমা রাখে ।

    তিব্বতী কৃষক আর পশুপালকরা স্বেচ্ছায় এই নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেন এবং নাও নিতে পারেন। তাতে অংশগ্রহণকারীরা অসুস্থ হয়ে চিকিত্সার জন্যে খরচ করলে ক্লিনিক চিকিত্সার খরচের শতকরা সত্তর ভাগ ঐ তহবিল থেকে পান ,আর হাসপাতালে থাকার খরচের শতকরা ৫০ থেকে ৮৫ ভাগ তহবিলটি থেকে পান ।
      প্রায় চার বছর হলো তিব্বতের দুইলোংতেছিং জেলায় এই তহবিল ব্যবস্থা চালু হয়েছে । প্রথম থেকে এ পর্যন্ত মোট তিরিশ হাজার কৃষক ও পশুপালকপরিবার এই তহবিলে যোগ দিয়েছেন , এই সংখ্যা সারা জেলার কৃষক ও পশুপালকপরিবারের মোট সংখ্যার নব্বই শতাংশেরও বেশী । জেলাটির ৬৫ বছরের বৃদ্ধা দজিচোমা বলেছেন
      সমবায়র চিকিত্সা ব্যবস্থা স্থাপন হলো মায়েদের কল্যানে সরকারের দেয়া একটি বিরাট সহায়তা । গত পরশুবছর আমার ছেলের অসুখ হয়েছে , হাসপাতালে চিকিত্সার খরচ হয়েছে দশ হাজার ইউয়ানেরও বেশী । সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থাপনাকমিটি নিয়ম অনুসারে আমাদের খরচের নির্দিষ্ট অনুপাত বহন করেছে, ফলে আমাদের পরিবারের আর্থিক বোঝা অনেক লাঘব হয়েছে । তাই আমরা দৃড়ভাবে  গ্রামাঞ্চলে সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা স্থাপনকে সমর্থন করি এবং স্বাগত জানাই । আগে যারা এই ব্যবস্থায় অংশ নেয়নি  তারাও এখন অংশ নিয়েছে এবং নিচ্ছে । তিব্বতে সমবায়চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রবর্তন থানা, ইউনিয়ন ,আর গ্রাম পর্যায়ের চিকিত্সাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে । তুই লোংতেছিং জেলার একটি ইউনিয়নপর্যায়ের চিকিত্সাকেন্দ্রের নারী ডাক্তার পোমাছিচি সংবাদদাতাকে বলেছেন : এখন আমাদের চিকিত্সাকেন্দ্রে চিকিত্সা নিতে আসা লোকদের সংখ্যা বেড়েছে । চিকিত্সাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা জোরদার হয়েছে , ওষুধপত্রের রকমারিতাও বাড়ানো হয়েছে, ছোটখাটো অসুখ হলে আমাদের এই ইউনিয়ানের বাইরে গিয়ে চিকিত্সা করার আর দরকার হয় না, এখানে চিকিত্সা হয়ে যায়।
      চালু হবার কয়েক বছরের মধ্যে সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা তিব্বতের কৃষি ও পশুচারণ এলাকায় সমাদৃত হয়েছে । বর্তমানে তিব্বত অঞ্চলের ছ' শো পঞ্চাশটিরও বেশি ইউনিয়নে সমবায় চিকিত্সাতহবিল গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে পনেরো লক্ষ কৃষক আর পশুপালক অংশ নিয়েছেন, মানে ইউনিয়নের মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশ আর কৃষক ও পশুপালকদের মোটসংখ্যার ৭৫ শতাংশ এই তহবিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । তিব্বত অঞ্চলের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা ওয়াং চিয়েনফেং বলেছেন
      সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থার প্রধান পদ্ধতি হয়েছে , রাষ্ট্র আর ব্যক্তির যৌথ-অর্থবিনিয়োগে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষার নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে কৃষক ও পশুপালকদের চিকিত্সাসমস্যার বেশ কার্যকর সমাধান হয়েছে, এবং ধাপে ধাপে তাদের স্বেচ্ছায় তহবিলে অংশ নেয়ার সচেতনতা বা আগ্রহ উন্নততর হচ্ছে । তাতে তাদের আরও পূর্ণাংগ চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থা গঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।
      জানা গেছে, তিব্বতের সকল কৃষক আর পশুপালক যাতে সমবায় চিকিত্সার সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারেন , তার জন্যে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এই ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় ও পূর্ণাংগ করার প্রয়াস চলছে । আর চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ব্যবস্থা বিপুল প্রয়াসে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করা হয়েছে । দু'হাজার দশ সালে চীনের যাবতীয় পল্লিগ্রামেই এই ব্যবস্থা চালু  হবে ।