v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-26 19:18:52    
প্রানবাচাঁনো ক্যাডার

cri
    এ বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের তা চৌ অঞ্চলে মুষলধার বৃষ্টি হয়েছিল , ফলে সুয়েন হান জেলার থিয়েন থাই মহকুমার পাহাড়ী অঞ্চলে আড়াই কিলোমিটার লম্বা দেড় কিলোমিটার উচু পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়েছে । এই মহকুমার ৩১ বছর বয়সী নারী ক্যাডার চাও পেন ছুয়ান ভুমিধসের আগে আশেপাশের এক হাজার ছয় শ'গ্রামবাসীকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করেন , তার কথা এখনও গ্রামবাসীদের মুখে মুখে , তারা চাও পেন ছুয়ানকে প্রাণবাঁচান ক্যাডার বলেন ।

    স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের কর্মীরা বলেছেন , ৩রা সেপ্টেম্বরের মুষলধার বৃষ্টি গত দু শ বছরে হয় নি , এই মহকুমার বয়োবৃদ্ধ গ্রামবাসীরা বলেন তারা জীবনে এ ধরনের বৃষ্টি দেখেন নি । ৪ঠা সেপ্টেম্বর মহকুমা ক্যাডার চাও পেন ছুয়ান জেলা কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বন্যা প্রতিরোধ সভায় অংশ নিয়ে রাতারাত মহকুমায় ফিরে যান । ৫ই সেপ্টেম্বর বিকেল দুটোর সময় চাও পেন ছুয়ান ও তার সহকর্মীরা পাহাড়ী অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করার সময় সড়কপথে দু মিটার লম্বা তিন সেন্টিমিটার চওড়া এক ফাঁক আবিষ্কার করেন , অল্প তিন মিনিটের মধ্যে এই ফাঁক তিন সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার বিস্তৃত হয় । অভিজ্ঞ গ্রামবাসীরা তা দেখে বুঝতে পেরেছেন অল্প ক্ষণের মধ্যেই ভুমি ধস ঘটবে । চাও পেন ছুয়ান গ্রামের পার্টি সদস্য ও গ্রাম কমিটির সদস্যদের একটি সভা ডাকলেন , তিনি সভায় বলেছেন , অবশ্যই ভুমি ধসের আগে গ্রামবাসীদের নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করতে হবে ।

    গত দু বছর ধরে চাও পেন ছুয়ান থিয়েন থাই মহকুমার পার্টির সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন । তিনি জানেন এই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ই হো গ্রামে বারো শ' গ্রামবাসী আছে , তা ছাড়া নদীর অপর পারের থিয়েন থাই গ্রামে তিন শ' গ্রামবাসী আছেন , ভুমি ধস ঘটলে এই ১৬ শ' গ্রামবাসীর জীবন বিপন্ন হবে । চাও পেই ছুয়ান গ্রামবাসীর বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের বিলম্ব না করে নিজের বাড়ী ত্যাগ করে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার অনুরোধ করেন । গ্রামের অনেক অধিবাসী যুগ যুগ ধরে এই গ্রামে থাকেন , তারা আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে বাড়ীর সব জিনিস রেখে দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছেন না । গ্রামবাসী হু পো ছেনের বয়স সত্তরের বেশী , তিনি চাও পেন ছুয়ানকে বলেন , আমার পরিবারের লোক যুগ যুগ ধরে এই গ্রামে থাকেন , আমি এ সব ছেড়ে যেতে পারি না , আমার বয়স বেশী হয়েছে , আমি কোথাও যাব না । চাও পেন ছুয়ান হাটু গেড়ে হু পো ছেনকে বলেন , চাচা , আমিই আপনার মেয়ে , আমি আপনাকে কহকুমা কমিটির অফিসে নিয়ে যাবো , আপনাকে অবশ্যই সেখানে যেতে হবে । এই কথা বলতে বলেত তিনি বুড়োকে তার পিঠে রেখে দরজার বাইরে যান , ৫০ মিটার পথ অতিক্রম করতে না করতে হু পো ছেনের বাড়ী ধসে পড়ে ।

    ৮৩ বছর বয়সী হু পি সিউর বাড়ী তিনতলার এক নতুন বাড়ী , দু মাস আগে তার ছেলেরা কষ্ট করে তার জন্য এই তৈরী করেছেন । বাড়ীর থামগুলো নড়ছে দেখে বৃদ্ধা চোখের পানি মুছতে মুছতে কোনো মতেই নিজের নতুন বাড়ী ছেড়ে যেতে চান না । গ্রামবাসীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য চাও পেন ছুয়ান কোনো কথা না বলে বৃদ্ধাকে নিয়ে দরজার বাইরে যান , তারা বাড়ী ত্যাগ করার অল্পক্ষণই বৃদ্ধার বাড়ী ধসে পড়ে ।

    গ্রামবাসীদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জরুরী সময় চাও পেন ছুয়ান এই আদেশ দিয়েছিলেন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে গ্রামবাসীদের প্রাণ বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । যারা বাড়ী ত্যাগ করতে চান না , তাদের জোর করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে হবে । এই গ্রামে হু ছিন ইউ নামে এক ক্যানসার রোগী আছে , তিনি দরজা বন্ধ করে চাও পেই ছুয়ান ও তার সহকর্মীদের ঢুকতে দেন না । তিনি বলেছেন , আমি একজন ক্যানসার রোগী , আমি বেশী দিন বাঁচবো না , আমি বাড়ীতেই মরতে চাই । রোগীর সংগে ভালো করে বুঝিয়ে বলার সময় নেই দেখে চাও পেন ছুয়ানের আদেশে গ্রামবাসীরা জোর করে তার বাড়ীর দরজা খুলে হু ছিন ইউকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়েছেন ।

সম্পাদক চাও পেন ছুয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই গ্রামের পার্টি সদস্য ও গ্রামকমিটির সদস্যরা নিজের ধনসম্পত্তি ও পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে গ্রামবাসীদের বাঁচানোর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন । ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি গ্রামের ২ হাজার নয় শ ৯২টি বসত বাড়ী ভুমি ধসে বিনষ্ট হয়েছে , কিন্তু গ্রাম দুটির ১৬০৬জন গ্রামবাসী নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে , তাদের মধ্যে কোনো হতাহত নেই ।

    গ্রামবাসীদের জীবন রক্ষিত পেল , কিন্তু তাদের খাওয়া থাকা ব্যবস্থা করা এক বড় সমস্যা । তখন চাও পেন ছুয়ান ও গ্রাম কমিটির সদস্যরা গ্রামবাসীদের বাঁচানোর জন্য দুদিন দুরাত বিশ্রাম করেন নি । তারা গ্রামবাসীদের বলেন , আপনারাই আমাদের আপন পিতামাতা , আপনারা চিন্তা করবেন না , আমরা অবশ্যই আপনাদের থাকা ও খাওয়ার সমস্যা সমাধান করতে পারবো । চাও পেন ছুয়ান মহকুমা স্কুলের বিশ-বাইশটি ক্লাসরুম খালি করার নির্দেশ দিলেন । তিনি গৃহহারা গ্রামবাসীদের স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করলেন এবং বাকী গ্রামবাসীদের মহকুমা সরকারের কর্মীর বাসায় পাঠিয়েঠেন । মহকুমা সরকারের কর্মীরা চাও পেন ছুয়ানের সংগে নতুন তোয়ালে ও লেপ কিনে গ্রামবাসীর হাতে দেন , কোনো কোনো কর্মী নিজের বেতন দিয়ে গ্রামবাসীদের খাবার কিনে দেন । ৬ই সেপ্টেম্বর সকাল ছয়টার পর্যন্ত যখন ৫৩০জন গ্রামবাসীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল , তখন চাও পেন ছুয়ান ক্লান্ত ও ক্ষুধায় মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হলেন ।

    ৭৮ বছর বয়সী বৃদ্ধ লিউ হাই নান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে সম্পাদক চাও পেন ছুয়ান ও তার অন্যান্য ক্যাডার আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন , তিনি সত্যই আমাদের প্রানবাচাঁনো ক্যাডার, আমরা কখনো তাকে ভুলবো না । যদিও অনেক গ্রামবাসী ভুমি ধসে পরিবারের সব ধনসম্পত্তি হারিয়েছেন , তবে সরকার দুর্গতদের সময়োচিতভাবে সাহায্য দিয়েছে । তাদের মধ্যে যারা অল্পবয়সী যুবক , তারা শহরে অথবা অন্য গ্রামে কাজ করতে গেছেন , তাদের স্ত্রী , বাচ্চা ও বাবা- মা এখন তাবুতে থাকেন , মহকুমা সরকারের সাহায্যে তাদের খাওয়া পরার কোনো চিন্তা নেই । চাও পেন ছুয়ান প্রায়ই দুর্গতদের তাবুগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং তাদের খোজখবর নেন । সম্প্রতি সি ছুয়ান প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক চান চুন সুয়ে চাও পেন ছুয়ানের কীর্তির উচ্চমূল্যায়ন করে বলেছেন , চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ক্যাডারদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন গুন হলো আপামর জনসাধারনের সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা । পার্টি ও সরকারের ক্যাডারদের জনসাধারনের স্বার্থ রক্ষার জোর প্রয়াস চালাতে হবে ।