তাইওয়ান থেকে পেইচিংয়ে এসে যৌবনের মিলন ঘটেছে এবং তরুণ-তরুণী একসঙ্গে ভবিষ্যত এবং আশার প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করেছে।
গত ১৪ই জুলাই বিকেলে, তাইওয়ান থেকে ১২১টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী এবং চীনের মূলভূভাগের ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী পেইচিংয়ের মহা-গণভবনে মিলিত হয়েছে।
জলদ-গম্ভীর ঘন্টা বেজে ওঠে আলো আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। কেন্দ্রীয় মঞ্চে দু'টো লাল দরজা খুলছে, দরজার সোনালী পেরেক আনন্দঘন পরিবেশকে আরো নিবিড় করে তুলেছে। নীল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে, সবুজারণ্য শোভা পাচ্ছে। " ভবিষ্যত আর আশার সঙ্গে হাত মিলানো" হচ্ছে এবারকার সম্মেলনের বিশেষ বিষয়বস্তু।
একই তারুণ্য তাদেরকে একই প্রাণোজ্জ্বল অনুভূতির অধিকারী করে তোলে। চীনা মানুষের একই মুখ স্বাভাবিকভাবে তাদের ঘনিষ্ঠ করে তুলে। একই ভাষা ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে তাদের মধ্যে বেশী অপরিচিতি বা দূরত্ব দেখা যায় নি। এবারকার সম্মেলনে তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিপক্ষ এবং নিজেদের জন্যে খোলা মনে এক চমত্কার অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছে।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হচ্ছে চীনের গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং তাইওয়ানের সিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী। চীনের কেন্দ্রীয় টিভি কেন্দ্রের উপস্থাপক লু চিয়ান শিক্ষকের মতো, তাদের সাহায্য করেছেন। তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌবণোদ্দীপ্ত ছাত্রছাত্রীরা এক চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে।
চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার দ্বৈতসঙ্গীত " ইয়াংসি নদীর গান" দিয়ে প্রীতি-সম্মিলনীর উদ্বোধন হয়। তারপর শেষ পর্যন্তহাততালি, হর্ষধ্বনি অনবরত শুনতে পাওয়া যায়। তাইওয়ানের সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রীরা বাঁশির আওয়াজের তালে তালে আনন্দদায়ক নাচ" নেচেছে। চীনের কেন্দ্রীয় জাতিতত্ত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা "রংবেরংয়ের মেঘ" নাচ পরিবেশন করেছে। তাইওয়ানের ইয়াংমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা "আ লি পাহাড়ের গান" নামক সংগীত বাজায়। পেইচিং নাচ ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা প্রাণবন্ত " সুন্দর হুয়াতান" নামের নাচ পরিবেশন করে।
তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের ছাত্রছাত্রীরা হাতেহাত মিলিয়ে সহযোগিতা করে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে। একটি গিটার নিয়ে কয়েক জন সহপাঠীর ক্যামপাসে গান গাওয়ার মতো। তাইওয়ানের সিসিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফুরেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ছেলেমেয়েরা তাইওয়ানের বিখ্যাত কবি ইউ কুয়াং চুংয়ের " সিয়াং ছৌ" নামক গান গেয়েছে। আরও অর্থবহ বিষয় হচ্ছে এই যে, তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের ছাত্রছাত্রীরা আলাদা আলাদাভাবে স্ট্যান্ডার্ড চীনা ভাষা ও দক্ষিণ ফুচিয়েন আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে এই বিখ্যাত কবিতা পাঠ করেছে।
আরো বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা তাইওয়ানের গান "নানীর ফেংহু উপ-সাগর" গেয়েছে। তাইওয়ান থেকে ৭০ জন ছাত্রছাত্রী এবং চীনের মূলভূভাগ থেকে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী সমবেত কন্ঠে এই গান গেয়েছে। এই গান উপস্থিত সবাইকে দারুণ প্রেরণা দিয়েছে।
প্রীতি সম্মিলনীতে উদ্যোক্তা ইউনিট চীনের মূলভূভাগের একজন ছাত্র আর তাইওয়ানের দুজন ছাত্রের জম্ম দিবস পালন করেছে। বিশেষ করে তৈরী কেক দেখে এবং ৪ হাজার লোকের সমবেত কন্ঠে গাওয়া "হ্যাপি বার্থদ্রেই" শুনে উপস্থাপক লু চিয়ান বলেছেন, উপস্থিত প্রত্যেক বন্ধু কেক খেতে না পারলেও সেই মধু ও সুখ তো সবাই উপভোগ করতে পারে।
আগে আমরা ছিলাম একই পরিবারের সদস্য। এখনও আমরা একই পরিবারে থাকি। একই বাড়িতে পরস্পরের হাতে-হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মৃদু কন্ঠে আমরা গান গাই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরস্পরকে ভালোবাসি, কারণ আমরা একই পরিবারের মানুষ। এখনও আমরা একই পরিবারে থাকি। যখন " আমরা একই পরিবারের সদস্য" নামক সংগীত বেজে উঠলো, তখন সবাই এই গান গাইতে শুরু করে। প্রীতি সম্মিলনীতে উত্তাল জোয়ার বয়ে যায়।
"তরুণরা দেশের ভবিষ্যত এবং জাতির আশা। তোমাদের উত্সাহব্যঞ্জক প্রাণবন্ত মুখ থেকে আমরা তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের যুবকদের হাতে হাত মিলিয়ে মনেপ্রাণে ভবিষ্যত সৃষ্টি করার আশা দেখেছি"। প্রীতি সম্মিলনীতে অংশনেয়া চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান ছেং সি ওয়েইয়ের কথা এবারকার বিশেষ সম্মলনীর মূল বিষয়বস্তুকে লক্ষনীয়ভাবে নির্দেশিত করেছে।
|