v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-25 16:51:09    
উইগুর ব্যবসায়ী কেলিমুর জীবন-কথা

cri
    উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং প্রদেশ প্রাচীন ইউরো-এশিয়া মহাদেশের সিল্ক রোডের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিতএবং এক সময় ছিলো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পথ। সেই জন্য এ ভূমিতে বসবাসকারী ইউগুর জাতির মানুষদের বরাবর ব্যবসা করার রীতি রয়েছে এবং এরা প্রাচ্যও পাশ্চাত্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।

    এখানকার আতুশি শহর পশ্চিম সিনচিয়াংয়ের পামির্স মালভূমিতে অবস্থিত। এক সময় এ এলাকা প্রাচীন সিল্ক রোডের শিল্পজাত দ্রব্যের বণ্টন সংক্রান্ত কেন্দ্র ছিলো। এ শহরের মাইগাইটি নামের একটি গ্রাম আতুশির ব্যবসায়ীদের উত্স স্থল। ৪০ বছর বয়সী কেলিমু নামের একজন ব্যবসায়ী এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। খুব স্বাভাবিকভাবে তাই ব্যবসায়ীক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন কেলিমু । এবং তাঁর বাবার প্রতিশ্রুতির কথা তাঁর ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এ সম্পর্কে কেলিমু আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, "বাবা কিভাবে একজন ভালো ব্যবসায়ী হওয়া যায় সে কথা আমাকে বলেছেন, আর সে কথাটি সব সময় আমার মনেও পড়ে। তিনি বলেছেন, একজন ভালো ব্যবসায়ী হতে হলে সিহেবে, প্রথমে তাকে দায়িত্বশীল হতে হয়। নিজের ওপর , পরিবারের ওপর এবং তারপর দেশের ওপর দায়িত্বশীল হতে পারলে একজন সকল ব্যবসায়ী হওয়া যায়।"

    ছোট বেলায় কেলিমুরের পরিবার অতো স্বচ্ছল ছিলো না। তাঁর বাবার ছোট্ট ব্যবসার আয়ে পুরো পরিবার চলতো। পরিবারের আয় বাড়ানোর জন্য ১৩ বছর  বয়েসি কেলিমু সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমছি শহরে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করতে শুরু করেন। তিনি একদিকে যেমন পরিশ্রমী অন্যদিকে সঞ্চয়ীও। শ্রমিক জীবন থেকেই তাঁর ব্যবসা জীবন শুরু করলেন।

    গত শতাব্দির ৮০'র দশকের মাঝামাঝি ২০ বছর বয়েসি কেলিমু সাহস করে শাংহাইয়ে যান। সমৃদ্ধ শাংহাইয়ে তিনি নতুন অনেক জিনিস দেখে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন।

    এক বছর শাংহাইয়ে থাকার পর তিনি দক্ষিণ চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াং চৌ-এ যান। সেখানকার বাজার তদন্ত করার পর তিনি ব্যবসা করতে শুরু করেন। তিনি সিনচিয়াংয়ের বিশেষ পণ্য কুয়াং চৌ-এ নিয়ে বিক্রয় করেন এবং কুয়াং চৌ-এর পণ্য সিনচিয়াং-এ নিয়ে বিক্রয় করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমদানি-রপ্তানি ব্যবসাও করতে থাকেন। বাজারের পরিস্থিতি সঠিকভাবে তার জানা ছিলো বলে কেলিমু একাজে সফল হয়েছেন। তিনি যেমন চীনের অনেকগুলো বড়-ছোট শহর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তেমনি তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশেও গিয়েছেন।

    অনেক টাকা-পয়সা সঞ্চয়ের পর কেলিমু রেস্তোরাঁ ও খাদ্যদ্রব্য শিল্প উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি প্রথমে উরুমছি শহরে একটি মুসলিম কেকের দোকান চালু করলেন। তারপর এ কেকের দোকানটি পর্যায়ক্রমে ফাস্ট-ফুডের দোকানে পরিবর্তিত হয়। এ দোকানে প্রধানত চীনের জাতীয় বৈশিষ্টসম্পন্ন খাদ্যদ্রব্য সেবা প্রদান করা হয়। এ দোকান চালুর পর খুব জনপ্রিয় হয়। কেলিমু মনে করেন, উইগুর জাতির ঐতিহ্যিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মানদন্ড মনে নিয়েছেন বলে তিনি এ সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি অল্প লেখাপড়া করেছি এবং আমার তেমন দক্ষতাও ছিলো না। আমি পূর্বপুরুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের মানদন্ড বিবেচনা করে ব্যবসা করি। আমার মনে হয় সময়ের সাথে ভাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে । কিন্তু মৌলিকনীতির পরিবর্তন হয় না।

    যখন কেলিমু সিনচিয়াংয়ের অন্য শহরে চেইন-ফাস্ট ফুড রোস্তোরাঁ চালু করার চিন্তা করতে থাকেন, তখন তিনি দেখতে পান যে, অন্য কেউ একজন তাঁর আগে ব্র্যান্ডটটি রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে। এ এই সমস্যার সম্মুখিণ হয়েও কেলিমু থেমে থাকেন নি।

    বরং এ ঘটনার পর,কেলিমু নিজের ব্যান্ড চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া তিনি নিজের উন্নতি করার জন্য নানান প্রশিক্ষণের অংশ নিয়েছেন। ২০০৩ সালে ৩৮ বছর বয়সী কেলিমু আবার ব্যবসা করতে শুরু করলেন। তিনি সিনচিয়াং মিলাজি খাদ্যদ্রব্য লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যথা সময়ে নিজের ব্যান্ড রেজিস্ট্রি করেছেন। উইগুর ভাষায় মিলাজি মানে সেঁড়ি, যার অর্থ হলো অব্যাহত অগ্রগতি। কেলিমু তাঁর কোম্পানিতে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন। কাও লি ছিওং এ কোম্পানির শক্তি সম্পদ বিভাগের ম্যানেজার। এ সম্পর্কে তিনি জানালেন, "জন শক্তি নিয়োগের বিষয়টি আমরা ঐতিহ্যিক পরিবারের পদ্ধতির উপর ছেড়ে দিয়েছি। খোলাখুলি পদ্ধতিতে জনশক্তি নেওয়া হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে হান জাতির ব্যক্তিও নিয়োগ করা হয়েছে। তাতে জাতীয় ঐক্যও প্রতিফলিত হয়েছে।

    অধিক ধেকে অধিকতর লোকজন জাতীয় বৈশিষ্টসম্পন্ন মিলাজি রেস্তোরাঁ পছন্দ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে কেলিমু উরুমছিতে আরেকটি চেইন শপ চালু করেছেন। বর্তমানে "মিলাজি" উরুমছিতে জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাদ্যদ্রব্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে। মিনেওয়ার সব সময় মিলাজি রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন। তিনি বলেছেন, "আমি সব সময় বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে এখানে খেতে আসি। আমরা সবাই এ রেস্তোরাঁ পছন্দ করেছি। এখানে খুব বৈশিষ্ট্যসম্পন্নভাবে সাজানো হয়েছে । ছোটবেলায় দেখেছি আমার শহরের বাড়িও এভাবে সাজানো ছিলো। সেই জন্য এখানে আসলে আমার ভালো লাগে। তাছাড়া এখানকার রান্নাও খুব মজাদার।"

    বর্তমানে কেলিমু আরেকটি নতুন লক্ষ্যবস্তু স্থীর করেছেন। তিনি আশা করেন, একদিন তার কোম্পানি নিখিল চীন -সহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তাহলে সবাই সিনচিয়াংয়ের খাবার উপভোগ করতে পারবে।