চীন ও রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা আগামী আগস্ট মাসের প্রথম দিকে বৈকাল হ্রদ অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু করবেন। এটি হলো এখন পর্যন্ত দু'দেশের সবচেয়ে বিরাটাকারের একটি পর্যবেক্ষণ অভিযান। চীনের বিজ্ঞান একাডেমী সুত্রে জানা গেছে, চীনা-রুশ যৌথ পর্যবেক্ষণ দল পৃথিবীর এই সবচেয়ে গভীর হ্রদের পরিবেশের পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করবে এবং উত্তরচীনের ওপর এই হ্রদের প্রাকৃতিক অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব মুল্যায়ন করবে।
গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা গেছে, বৈকাল হ্রদ সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চল সারা বিশ্বের আবহাওয়া ও পরিবেশের পরিবর্তনের স্পর্শকাতর এলাকার মধ্যে একটি। সাইবেরিয়ার শীতের উচ্চচাপ চীনের উত্তর অঞ্চলের আবহাওয়ার ওপর বেশী প্রভাব ফেলে থাকে।
চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর উপ-পরিচালক ছেন চু জানিয়েছেন, বৈকাল হ্রদ অঞ্চলের ওপর দু'দেশের যৌথ পর্যবেক্ষণ ২২ দিন চলবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা এ অঞ্চলের জলচর প্রাণী, হ্রদের ভূতত্ত্ব, আঞ্চলিক অর্থনীতি এবং ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। ছেন চু বলেছেন, এবারকার অভিযান সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চীন আর রাশিয়ার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করবে।
"সাইবেরিয়ার মনি" নামে পরিচিত বৈকাল হ্রদের সবচেয়ে গভীর এলাকা প্রায় ১৬২০ মিটার। এই হ্রদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিঠাপানির হ্রদ। তার জল ধারণের ক্ষমতা হলো ২৩ হাজার ঘন কিলোমিটার। এটা ভূগর্ভের মিঠাপানির পাঁচ ভাগের একভাগ । একই সঙ্গে এই হ্রদ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন হ্রদগুলোর মধ্য অন্যতম। ২ কোটি থেকে ২.৫ কোটি বছর আগে এই হ্রদের উদ্ভব ঘটে। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো বৈকাল হ্রদকে বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকা ভূক্ত করেছে।
চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর ৮টি গবেষণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৫জন বিশেষজ্ঞ আর সংবাদদাতারা চীনা-রুশ যৌথ পর্যবেক্ষণ দলে অংশগ্রহণ করেছেন এবং রুশ একাডেমীর সাইবেরিয়া ইনস্টিটিউটের ইর্কুটস্ক বিজ্ঞান কেন্দ্র, হ্রদ গবেষণালয়, ভূ-রসায়ন গবেষণালয় প্রভৃতি বিভাগের লোকজন এই পর্যবেক্ষণ দলে অংশগ্রহণ করেছেন। দু'দেশের বিজ্ঞানীরা বৈকাল হ্রদের তীরে একটি পর্যবেক্ষণ শিবির স্থাপন করবেন এবং জাহাজে করে হ্রদের ওপর পর্যবেক্ষণ করবেন।
চীন-রুশ বৈকাল হ্রদ পর্যবেক্ষণ দলের চীন পক্ষের প্রধান বিজ্ঞানী, চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর ভৌগোলিক বিজ্ঞান ও সম্পদ গবেষণাগারের একাডেমিশিয়ান স্যুন চিউ লিন মনে করেন, সরেজমিনে বহুমুখী পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক গবেষণার মাধ্যমে চীন এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার পদ্ধতি খুঁজে বের করবেন এবং উত্তর-পূর্ব চীনের পুরানো শিল্প ঘাঁটি ও বৈকাল হ্রদ অঞ্চলে শিল্পের কাঠামোর রূপান্তর ও বৃত্তাকার অর্থনীতির উন্নয়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবেন, যাতে দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য রণনৈতিক শর্ত যোগানো যায়।
|