বর্তমানে চীনের প্রাইমারী স্কুল থেকে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত নয় বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তিত রয়েছে। যদিও ছাত্রছাত্রীদের কোনো বেতন দিতে হয় না তবুও পাঠ্যপুস্তকের ফি ও আনুষংগিত ফি ছাত্রছাত্রীদের দিতে হয়। আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক ফিও দিতে হয়। এসব মিলে প্রতি বছর প্রায় কয়েক শো রেনমিনপি থেকে এক হাজার রেনমিনপি পর্যন্ত ফি দিতে হয়। এটা শহরাঞ্চলের অধিকংশ পরিবরের পক্ষে তেমন কিছু নয়, কিন্তু গ্রামাঞ্চলের কিছু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক অসামান্য বোঝা। কোনো কোনো ছাত্রছাত্রী এজন্য পড়া বন্ধ করে।
এই বঅস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চার বছর আগে চীন গ্রামাঞ্চলে ক্রমান্বয়ে এই সব দরিদ্র ছাত্রছাত্রীর পাঠ্যপুস্তকের ফি, আনুষংগিক ফি ও আবাসিক ফি মওকুফের নীতি প্রবর্তন করেছে।
উত্তর চীনের অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইচিনহোলো জেলা হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বল্পোন্নত এলাকা। সেখানকার কৃষক লি ফি রোং অতীতে খরগোশ পালনের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন। দিন মন্দ ছিলো না। কিন্তু গত বছর একটা আকস্মিক মড়কের ফলে তার পরিবারের পালিত কয়েক শো খরগোশের সবগুলোই মারা যায়। তাতে বেশ বড় রকমের আর্থিক ক্ষতি হয়। ফলে তার দুই মেয়ার স্কুলের ফি দেয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যখন তিনি এই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তখন তাদের এলাকায় দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তকের ফি, আনুষংগিত ফি ও আবাসিক ফি মওকুফের নীতি প্রবর্তিত হয়। লি ফি রোং আনন্দের সঙ্গে সংবাদদাতাকে বলেছেন,
"দেখুন, আমার এই বড় মেয়ের এক বছরের আবাসিক ফি ও পাঠ্যপুস্তকের ফি আট থেকে নয় শো রেনমিনপির মতো। এই ছোটো মেয়ে এখনো প্রাইমারী স্কুলে পড়েছে। তার খরচ বেশী নয়। কিন্তু তবুও প্রতি বছর এক শো সত্তর আশি রেনমিনপির মতো লাগে। এই অর্থ কি করে উপার্জন করা যায়। প্রবর্তিত নীতি আমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেছে।"
গ্রামাঞ্চলের যে সব পরিবারের মাথাপিছু আয় স্থানীয় গড়পড়তা মানের নীচে শুধু সে সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের বেলায়ই এই নীতি প্রযোজ্য ছিলো।
কিন্তু ইচিনহোলো জেলা একটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকা বলে ব্যাপক কৃষক ও পশুপালকদেরই আয় অপেক্ষাকৃত কম। তাই আর্থিক অসুবিধার অবস্থায়ও স্থানীয় সরকার এই নীতিকে গ্রামাঞ্চলের যাবতীয় পরিবারের ছেলেমেয়েদের বেলায় প্রযোজ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তি লিউ ওয়েন শান বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে সর্বপ্রথমে শিক্ষা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার উন্নয়ন হলেই কেবল আরো বেশী দক্ষ ব্যক্তি আবির্ভূত হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। তিনি বলেছেন,
"রাষ্ট্রের নীতি অনুসারে এই নীতি প্রবর্তনের প্রক্রিয়ায় আমাদের এক লক্ষ রেনমিনপি অর্থ বরাদ্দের কথা। কিন্তু এই নীতি ভালভাবে বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক ঘাটতির অবস্থায়ও আমরা এই লক্ষ ষাট হাজার রেনমিনপি বেশী বরাদ্দ করেছি। সরকারের পক্ষে বলতে গেলে আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ কমিয়েও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে চাই।"
বর্তমানে ইচিনহোলো জেলার মাধ্যমিক ও প্রাইমারী স্কুলের ষোলো হাজারেরও বেশী ছাত্রছাত্রীর সবাই এই নীতির অথানুকূল্য পেয়েছে। স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান চায থিয়ে রোং সংবাদদাতাকে বলেছেন, অতীতে দারিদ্র্যের কারণে পড়া বন্ধ করা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এখন একজন ছাত্রছাত্রীও পড়া বন্ধ করে নি।
বর্তমানে অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এই নীতি কার্যকরীকরণের অবস্থা সম্পর্কে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকারের সহসভাপতি লিয়েন চি বলেছেন,
"এখন আমাদের গোটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মোট ১০১টি জেলার মধ্যে ৮১টিতে মোটামুটিভাবে এই নীতি প্রবর্তিত হয়েছে। অর্থাত আমাদের অঞ্চলের ৮০ শতাংশরেনও বেশী জেলায় এই নীতি মোটামুটিভাবে প্রবর্তিত হয়েছে। এই কয়েক বছরে অন্তর্মংগোলিয়ার দ্রুত আর্থ-সামাজিক বিকাশ হয়েছে। কিন্তু দক্ষ ব্যক্তির অভাব রয়েছে। তাই শিশু শিক্ষা আঁকড়ে ধরতে হবে। এটাই আমাদের এই নীতি প্রবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রণনৈতিক উদ্দেশ্য।"
|