v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-21 19:01:51    
বিশ্ব বিখ্যাত লিওইয়াং নগর

cri
    গতবারের আসরে আমরা আপনাদের চীনের হুনান প্রদেশের লিওইয়াং নগরে নিয়ে গেছি। সেখানে আপনারা বিশ্ব বিখ্যাত লিওইয়াং নগরের আতশবাজি সম্বন্ধে কিছু জানতে পেয়েছেন। তা ছাড়া, আপনারা লিওইয়াংএর আতশবাজি তৈরীর প্রণালী দেখেছেন ।উপরন্তু লিওইয়াং নগরের আতশবাজি যাদুঘরে বিচিত্র্যময় আতশবাজিও উপভোগ করেছেন। আশা করি আপনাদের খুব ভাল লেগেছে। আজকের এই আসরে আপনাদের হুনান প্রদেশের আরেকটি সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। জায়গাটি রুপকথায় বর্ণনা করার মতো জায়গা।আজকের চল না ঘুরে আসি বিশেষ অনুষ্ঠানে আমরা এক সংগে এই জায়গার সৌন্দর্যস্নাত দৃশ্য দেখে যাচ্ছি।

    চীনে এমন একটি রুপকথা আছে যাতে বলা হয়েছে , এক দিন একজন জেলে দিশাহারা হয়ে পীচের ফুলে আচ্ছন্ন একটি উপত্যকায় হাজির হন। এই জেলে সংগে সংগে বুঝতে পান যে এই উপত্যকায় বসবাসরত মানুষ বহিবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।বহির্বিশ্বে কি যে ঘটচ্ছে তা সম্বন্ধে তাদের একেবারে জানা নেই।রুপকথায় বলা হয়, দৈনন্দিনপার্থিব ব্যাপারে যাদের ক্লান্ত হন এই জায়গা তাদের পক্ষে একটি আদর্শনীয় জায়গা হত। বংশনুক্রমে সেখানে বসবাসরত অধিবাসীরা নিরুদ্বগে জীবন যাপন করে থাকতেন। জেলে সশরীরে যে দেখেছেন তা বংশনুক্রমে লোকেদের মধ্যে মুখে মুখে প্রচলিত হয়।রুপকায় যে জায়গা বর্ণনা করা হয় তার নাম হলো চীনের হুনান প্রদেশের ছাংডে শহরের "পীচ উদ্যান"।

    এক দিন আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা এই জায়গায় দেখতে গিয়েছেন যাকে তুনিয়ার স্বর্গ বলে আখ্যায়িত।ছাংডে শহরের দক্ষিণ দিকে এই উদ্যান অবস্থিত। এই উদ্যানে পৌছতে গাড়িতে আধা ঘন্টার পথ।একটি বিরাটাকারের কাঠের খোদাই-করা দ্বার পার হওয়ার পর তেপান্তরের পীচ গাছের উদ্যান মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।জানা গেছে , এই পীচের উদ্যানের আয়তন ১৩০ একর।উদ্যানে মোট এক লক্ষেরও বেশী পীচ গাছ আছে।তখন শরতকাল। পীচ উদ্যানে কেবল সবুজ রংয়ের সমুদ্র। কল্পনা করা যায় যে , বসন্তকালে যখন পীচের ফল ফুটে তখন এ সব পীচ গাছের ফুল যেন আকাশ থেকে তুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া লাল মেঘের মতো দেখায় ।পীচ গাছের উদ্যানের পাশের পাহাড়ী পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাঝপথে একটি ছোট গুহার লোকের নজরে পড়ে ।গুহার এত ছোটা যাকে সহজেই দেখা যায় না।গুহারের ওই পাশে বের হওয়ার পর রুপকথায় বণির্ত বহিবির্শ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন জায়গা---ছিন রেন গ্রাম পৌছানো হয়।

    এই গুহার পার হওয়ার পর , বাড়িঘর , ফসলের খাত এবং মাছ চাষ করার পুকুর মানুষের চোখে পড়ে। গ্রামে ৯টি পরিবার।অধিবাসীদের মধ্যে বেশীর ভাগ ছিং নাম ডাকা পরিবার ।গ্রামের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশীর ভাগ পাহাড়ের নীচ থেকে নেওয়া হয়েছে।এখানকার স্থাপত্যগুলোর মধ্যে সাধারণত কাঠ বা বাঁশের তৈরী।

    এই প্রাচীন গ্রামের ভিতরে হাটাঁহাটি করার সময়ে মানুষের যে অনুভূতি হয় তা জনব্যস্ত শহরগুলোতে পাওয়া যায় না। ফসলের খাত আর পুকুরের মাঝখানে এক একটি কাঠ আর বাঁশের তৈরী বাড়িঘর। বাড়িঘরের পিছনে পীচ গাছ , বাড়িঘরের সামনে শিশুরা খেলাদুলায় আলন্দে মেতে উঠে। গ্রামের তিন দিকে পাহাড়ের বেষ্টিত, এক দিকে হ্রদের মুখোমুখি। কিংবদন্তিতে বলা হয়েছে , দু হাজারের বেশী সময় আগে অথার্ত চীনের ছিং রাশবংশ আমলে যুদ্ধের দুর্যোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে এই গ্রামের অধিবাসীদের পুর্বপুরুষরা এখানে পালিয়ে আসেন ।তখন থেকে তারা এখানে বংশনুক্রমে জীবনযাপন করেন এবং বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রহস্যময় জায়গা দেশী-বিদেশী পযর্টকদের শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।তা সত্ত্বেও এই গ্রামের পরিবেশ শান্ত এবং গ্রামের রীতিনীতি আগের মতো সরল।একটি ছোট ঘরের সামনে সংবাদদাতা একজন মধ্য বয়সী নারীর সংগে কথাবার্তা বললেন।খানিক ক্ষণ পর এই নারী ঘরে ফিরে গেলেন। একটু পর, নিতি ঘরের ভিতর থেকে এক বাতি পানীয় জিনিস সংবাদদাতার জন্যে নিয়ে এলেন।সফর সংগী, স্থানীয় গাইড মিষ্ট থাং সংবাদদাতাকে বললেন, এটা হলো ছিংবাসীদের বিখ্যত চা।কোনো মাননীয় অতিথী থাকলে স্থানীয় লোক এই চা পরিবেশন করেন।

    আদা, চাল, কাঁচা চা , তিল আর বাদাম মিশ্রভাবে একটি বাটিতে ঢুকিয়ে দিয়ে চুরমান করা হয়।তার পর সিদ্ধ করা হয়।এই চা খেয়ে মানুষ সহজেই সর্দি হয় না।তিনি বলেছেন, এখানকার গ্রামবাসীরা অবসর পেয়ে আতীয়সজন এবং প্রতিবেশীদের সংগে বসে বসে এই চা খেতে পছন্দ করেন।মাঝে মাঝে বিকাল থেকে সন্ধ্যান পর্যন্ত তারা চা খেতে খেতে গল্প করে থাকে।বুঝা যায় এখানকার মানুষ খুব শান্তিতে জীবন নির্বাহ করে থাকে।এই গ্রাম ত্যাগ করার সময় বিপরীত পীচ গাছের উদ্যান থেকে ঢাক বাজানোর শব্দ কানে আসে।পরে জানা গেছে, একটি মন্দিরে পুজার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছিল।এখানকার ধর্মের বিশ্বাস সুদীর্ঘকালের।ইতাহাসে এখানকার পাহাড়ে অনেক মন্দির ছিল।দুভার্গ্যক্রমে কয়েক শো বছর আগে বেশির সংখ্যক মন্দির যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়।এখন যেখানে সেখানে মন্দিরের ধ্বংবশেষগুলো দেখা যায়। মন্দিরের প্রধান ব্যাখ্যা করে বললেন, এখন থাওছুয়ানভিয়েসিও মন্দিরের আয়তন দু হাজারের কাছাকাছি।তবে আকেগার মন্দিগুলোর তুলনায় এই মন্দির অনেক ছোট।

    চি রাজবংশে এই মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। পরে সম্প্রসারিত হয়।অতীতে এখানে ৪৮ তলা একটি মন্দির ছিল।মন্দিরের দরজাগুলো বন্ধ করলে ঘোড়ার পিঠে চলাতে হত।এই ৪৮ তলা উচু মন্দিরের নিচ থেকে উপরে পৌছতে দুই কিলোমিটারের বেশী পথ।এই মন্দিরের অদূরে প্রশান্ত উয়েন নদী।আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ ধরে নদীর তীরে এসে সৌন্দর্যস্নাত দৃশ্য মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।পাহাড়ের চুড়ার প্রতিবিম্ব ষ্পষ্টভাবে নদীতে প্রতিফলিত হয়।দেখতে চীনের গুয়েলিনের দৃশ্যের মতো।নদীতে কয়েকটি লম্ব লম্ব চর আছে ।চরগুলোর উপর সময়ে সময়ে কয়েকটি ঝাঁক পাখি ঘুরপাক খাচ্ছিল।গাইড বলেছেন, উয়েন নদীর বরাবর ৬০টিরও বেশী কিলোমিটার জায়গায় কেবল সৌন্দর্যস্নাত দৃশ্য।

    সিয়েফু টাওয়া হচ্ছে এই নদীর দৃশ্য উপভোগের শ্রেষ্ঠ জায়গা।

    এই টাওয়া মিং রাজবংশ অথার্ত ৫০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়।এটা একটি তিন তলার টাওয়া।এখানে দাঁড়িয়ে উয়েন নদীর গোটা দৃশ্য দেখতে পারি।প্রত্যেক দিন সুর্য অস্ত যাওয়ার সময়ে নদীতে সুর্যের দুটো প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

    পীচ গাছের উদ্যানে ভ্রমণ করতে পরিবহণ অত্যন্ত সুবিধাজনক।পেইচিং আর কোওয়াংচৌ প্রভৃতি বড় শহরগুলো থেকে জাডে শহর পৌছতে সরাসরি বিমান লাইন আছে।হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশা থেকে জাডে শহর যেতে হাইওয়ে ধরে মাত্র এক ঘন্টার বেশী সময় লাগে।শ্রোতা বন্ধুরা , আজকের আসর এখানে শেষ হলো।আগামী আসরে আপনাদের পশ্চিম হুনানের পুরানো ফিনিস্ম নগরে বেড়াতে নিয়ে যাবো। শোনার জন্যে আগে থেতে ধন্যবাদ জানাছি।