দাঁতের যত্ন ৬ মাস বয়স থেকে সারা জীবনই নিতে হয়। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করার কথা ভুললে চলবে না। গর্ভাবস্থায় দাঁতের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থার দুই মাস পর থেকে মুখ এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।
অ্যাপথাস আলসারঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেরই মুখের অভ্যন্তরে বার বার অ্যাবথাস আলসার হতে দেখা যায়। এই সময় পোভিডন আয়োডিন মাউথওয়াশ ১% সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুই বার কুলি করতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফলিক এসিডও দেয়া যেতে পারে।
প্রেগন্যান্সি জিনজিভাইটিসঃ গর্ভাবস্থার দুই মাস পরে মাড়ির প্রদাহ দেখা দিতে পারে যা প্রেগন্যান্সি জিনাজিভাইটিস নামে পরিচিত। মাড়িতে পাথর থাকলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধি করে গর্ভবর্তী মায়ের ক্ষতি করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভাল হয় গর্ভাবস্থায় পুরো সময় একজন ডেন্টাল সার্জনের তত্ত্বাবধানে থাকা।
পায়োজেনিক গ্রানুলোমাঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মাড়িতে এক ধরনের টিউমার দেখা যায় যা পায়োজেনিক গ্রানুলোমা নামে পরিচিতি। তবে অনেকে এ টিউমারকে প্রেগন্যান্সি ইপুলিস বলে থাকেন। গর্ভাবস্থা শেষ হলে এ টিউমার আপনা আপনিই ভাল হয়ে যায়। তবে কোন জটিলতা দেখা দিলে বা কোন সমস্যা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাথে সাথে চিকিত্সা নেয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিত্সার সময়ঃ গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিত্সার সবচেয়ে উত্তম সময় হল গর্ভাবস্থার তিন মাস থেকে ছয় মাস সময়। এ সময় ওষুধ সেবনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে জরুরী চিকিত্সা যেকোন সময়ই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এবং শেষ মাষঃ এ সময়ে ডায়াজিপাম বা মিডাজোলাম জাতীয় ঘুমের ওষুধ একেবারেই দেয়া উচিত্ নয় বাধ্যতামূলক না হলে। এ সময় জেনারেল এনেসথেশিয়া বা সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে কোন অপারেশন না করাই ভাল।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাসঃ এ সময় মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ খাওয়া নিষেধ। এতে গর্ভবতী মায়ের ক্ষতি হয়। টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা কোনভাবেই উচিত নয়।
গর্ভাবস্থার সময় যেসব এন্টিবায়োটিক বা এন্টিমাইক্রোবায়ালস ব্যবহার করা যাবে না, সেগুলো হলোঃ
১. টেট্রাসাইক্লিন, ২. কো-ট্রাইমোক্সাজল, ৩. মেট্রোনিডাজল, ৪. রিফ্যামপিছিন,
৫. ফ্লুকোনাজল, ৬. সালফোনেমাইডস, ৭. অ্যামাইনো গ্লাইকোসাইডস।
গর্ভাবস্থায় যেসব এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবেঃ
১. পেনিসিলিন, ২. নেফালসপরিন, ৩. ইরাইথ্রোমাইসিন।
পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিকের মধ্যে অ্যামোক্সিসিলিন সবচেয়ে নিরাপদ। পেনিসিলিনে যাদের সংবেদনশীলতা রয়েছে তারা এন্টিবায়োটিক হিসাবে ইরাইথ্রোমাইসিন ব্যবহার করবেন।
গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ যা ব্যবহার করা যাবে নাঃ
১. এসপিরিন, ২. NSAID জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ, ৩. মেফিনামিক এসিড।
গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধঃ গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ হিসাবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করাই সবচেয়ে উত্তম। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ব্যাথানাশক ঔষধ কোনভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবর্তী মাকে দেয়া উচিত নয়।
ষ্টেরয়েড জাতীয় ওষুধঃ বাধ্যতামূলক না হলে ষ্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। পরিশেষে একথা বলাই বাহুল্য যে, গর্ভবতী মা সুস্থ থাকলে আগত সন্তানও সুস্থভাবে জন্ম লাভ করে থাকে। তাই আমাদের সবার উচিত গর্ভবর্তী মায়ের সার্বিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা।
---ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন, দৈনিক ইত্তেফাক
|