v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-20 19:07:50    
আমার ত্রানকর্তা---- সিয়াও পিং দাদু

cri
    ২২শে আগষ্ট চীনের প্রয়াত নেতা তেং সিয়াও পিংয়ের জন্মশতবার্ষিকী । এই উপলক্ষে চীনে নানা ধরনের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । তেং সিয়াও পিং অল্প বয়সে পড়াশুনার জন্য ফ্রান্সে গিয়েছিলেন , সেখানে তিনি মার্ক্সবাদ গ্রহন করেন , যুদ্ধের সময় তিনি একজন বিখ্যাত জেনারেল , নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর তিনি চীনের গঠনব্রতে বিরাট অবদান রেখেছিলেন । বিশেষ করে গত শতাব্দীর আশির দশকে তেং সিয়াও পিংয়ের উদ্যোগে চীনে সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতি কার্যকরী করে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হয়েছে । এটা চীনা জনগনের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে , চীনা জনগনের জীবনযাত্রার মান লক্ষনীয়ভাবে উন্নত হয়েছে , এই সব কথা সবাই জানেন । তেং সিয়াও পিংয়ের আরো অনেক গল্প আছে , যা অনেকে জানেন না । তেং সিয়াও পিংয়ের এমন একটি অজানা গল্প আছে , যার কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে একটি মেয়ে , তিনি তেং সিয়াও পিংয়ের অর্থানুকূল্যে পড়াশুনা শেষ করে এখন প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষক হয়েছেন । এই মেয়ের নাম চৌ পিয়াও লিয়ান , সম্প্রতি তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন , তার প্রবন্ধের শিরোনাম হলোঃ আমার ত্রানকর্তা--সিয়াও পিং দাদু ।

    চৌ পিয়াও লিয়ান কুয়ান সি চুয়াং জাতির স্বায়তশাসিত অঞ্চলের পাই সে শহরের পিন কুও জেলার আশা প্রাথমিক স্কুলের একজন যুব শিক্ষিকা , দেশবিদেশের প্রচার মাধ্যমগুলো চৌ পিয়াও লিয়ানকে আশার তারকা আখ্যা দিয়েছে , গরীব কৃষক পরিবারে চৌ পিয়াও লিয়ানের জন্ম , টাকা পয়সার অভাবে চৌ পিয়াও লিয়ান বাধ্য হয়ে প্রাথমিক স্কুলের পড়াশুনা বন্ধ করেছিলেন । গরীব অঞ্চলের স্কুল-ছুট ছেলেমেয়ে যাতে আবার স্কুলে ফিরে যেতে পারে , সেই জন্য ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে চীনের যুব উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে চীনে আশা প্রকল্প চালু হয় । তেং সিয়াও পিং এই প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং দৃঢভাবে সমর্থন করেন । ১৯৯০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তেং সিয়াও পিং এই প্রকল্পের জন্য অভিলেখন লিখেন । ভরসা প্রকল্প চালু হওয়ার পর চীনের যুব উন্নয়ন তহবিল সংস্থা দেশের বিভিন্ন জায়গা আর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদানের অর্থ পেয়েছে , এই সব অনুদানের অর্থ চীনের গরীব অঞ্চলের স্কুল-ছুট ছেলেমেয়েদের স্কুলে ফিরে যেতে সাহায্য করেছে ।

    ১৯৯২ সালের ১০ই জুন চীনের যুব উন্নয়ন তহবিল সংস্থার অফিসে দুজন সৈনিক হাজির হলেন । তারা তিন হাজার ইউয়ান সংস্থার কর্মীর হাতে দিলেন , কিন্তু নাম লিখতে অস্বীকার করেন । সংস্থার কর্মী আবার তাদেরকে নিজের নাম লিখতে অনুরোধ করেন , তারা বলেছেন , যদি এতে নাম লিখতে হয় , তাহলে কমিউনিষ্ট পার্টির একজন প্রবীণ সদস্য লিখব । সেই বছরের ৬ই অক্টোবর এই দুজন সৈনিক আবার যুব উন্নয়ন তহবিল সংস্থায় গিয়েছেন , তারা সংস্থার কর্মীর হাতে আবার দু হাজার ইউয়ান রেখে দিলেন । অনেক প্রচেষ্টার পর যুব উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা জানতে পেরেছেন যে কমিউনিষ্ট পার্টির এই প্রবীণ সদস্যের নাম হচ্ছে তেং সিয়াও পিং । আলোচনার পর চীনের যুব উন্নয়ন সংস্থা এই পাঁচ হাজার ইউয়ান কুয়াং সি প্রদেশের পাই সে শহরের গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে , কারণ তেং সিয়াও পিং পাই সে শহরে কাজ করেছিলেন এবং সংগ্রাম করেছিলেন । ১৯২৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর স্বয়ং তেং সিয়াও পিং পাই সে অভ্যুথান পরিচালনা করেছেন এবং চীনের শ্রমিক কৃষক লাল ফৌজের সপ্তম বাহিনী ও ইউচিয়ান বিপ্লবী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তাই পাই সের জনগনের সংগে তেং সিয়াও পিংয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে পাই সে শহরের শিরেন প্রাথমিক স্কুল চীনের প্রথম কিস্তির আশা স্কুল আর কুয়াং সি প্রদেশের প্রথম আশা স্কুল হয়েছে , এই স্কলের পরে পিন কো জেলার আশা স্কুল নামে পরিবর্তিত হয়েছে । এই আশা স্কুল তেং সিয়াং পিংয়ের অনুদান করা পাঁচ হাজার ইউয়ান গ্রহনের সুযোগ পেয়েছে ।

    ১৯৯২ সালের একদিন এক অগ্নিকান্ড চৌ পিয়াও লিয়ানের বাড়ীর সবকিছু ছাই করে দিয়েছে । সেই সময় পরিবারের তিনটে সন্তানই স্কুলে পড়াশুনা করছিল , অগ্নিকান্ডের পর চৌ পিয়াও লিয়ান পড়াশুনা বন্ধ করতে বাধ্য হন । মেয়েটি তার ডাইরীতে লিখেছিলেন , স্কুল থেকে বাড়ীতে ফিরে এসে আমি মনে করি আকাশের রঙ পর্যন্ত পরিবর্তন হয়েছে , আমি একেবারে হতাশ হয়েছি , আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার জীবনে পড়াশুনার সুযোগ আর পাব না , সেজন্য আমার মন এক সময় খুব খারাপ ছিল । তেং সিয়াও পিংয়ের সাহায্যের টাকা পাওয়া চৌ পিয়াও লিয়ানের জীবনে এক বিস্ময় বলা যায় । সাহায্যের টাকা পেয়ে চৌ পিয়াও লিয়ান ও আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে আবার স্কুলে ফিরে গিয়েছেন । কিছু দিন পর তেং সিয়াও পিংয়ের কাছে লেখা একটি চিঠিতে চৌ পিয়াও লিয়ান বলেছেন , আমি যখন জানতে পেরেছি যে আপনি এক জন প্রবীন পার্টি সদস্যের নামে আশা প্রকল্পের জন্য পাঁচ হাজার ইউয়ান দিয়েছেন এবং চীনের যুব উন্নয়ন তহবিল সংস্থা এই পাঁচ হাজার ইউয়ান পাই সের স্কুল-ছুট ছেলেমেয়েদের দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে , আমি এতো মুগ্ধ হয়েছি যে চোখে পানি আসে । যদিও আপনি সুদুর পেইচিংয়ে থাকেন , কিন্তু আমরা মনে করি আপনি আমাদের কাছে দাড়িয়ে থেকে আমাদের দেখাশুনা করছেন ।

    তেং সিয়াও পিংয়ের অভিলেখন ও অনুদান চীনের আশা প্রকল্পের জন্য আশার বীজ বপন করেছে । গত ১৫ বছরে ' আশা প্রকল্প' দেশবিদেশের ২২০ কোটি ইউয়ান অনুদান পেয়েছে , এই অনুদানের অর্থানুকুল্যে গরীব পরিবারের ২৫ লক্ষাধিক ছেলেমেয়ে সাহায্য পেয়েছেন এবং দশ হাজার আশা প্রাথমিক স্কুল নির্মিত বা পুননির্মিত হয়েছে , এর মধ্যে কুয়াংসি প্রদেশ দেশবিদেশের ১৬ কোটি ইউয়ান পেয়েছে , প্রদেশটির গরীব পরিবারের এক লক্ষ ছেলেমেয়ে আর্থিক সাহায্য পেয়েছে এবং পাঁচ শ ৩০টি আশা প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

    আশা প্রকল্প চালু হওয়ার পর চীনে হাজার গরীব পরিবারের ছেলেমেয়ে আর্থিক সাহায্য পেয়েছে , চৌ পিয়াও লিয়ান তাদের একজন প্রতিনিধি , তিনি পল্লী অঞ্চলের একজন স্কুল-ছুট মেয়ে থেকে একজন শিক্ষক হয়েছেন । তিনি বলেছেন , নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে আমার প্রায়ই ত্রানকর্তা সিয়াও পিং দাদুর কথা মনে পড়ে । ২০০০ সালের জুলাই মাসে চৌ পিয়াও লিয়ান থিয়েনতুং শিক্ষক প্রশিক্ষক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর পিং কো জেলার আশা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন । চৌ পিয়াও লিয়ান এই স্কুলে পড়াশুনা করেছিলেন । তিনি বলেছেন , আমি আমি স্কুলে পাওয়া শিক্ষা দিয়ে গ্রামবাসীদের সেবা করতে চাই , যাতে আরো বেশী ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলো পায় , আমি আশা প্রকল্পের আর্থিক সাহায্যে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছি , আমি আশার বীজ বোপন করতে চাই , আমি বিশ্বাস করি সিয়াও পিং দাদু এ কথা শুনে খুশী হবেন । ২০০০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর চৌ পিয়াও লিয়ান আশা প্রকল্পের আশা তারকা নির্বাচিত হন , তিনি দু হাজার সালের সিডনী ওলিম্পিক গেম্সের অন্যতমো দূত ছিলেন । জানা গেছে , মোট ২৫জন ছেলেমেয়ে তেং সিয়াও পিংয়ের আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন , এদের মধ্যে চৌ পিয়াও লিয়ানসহ চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছেন , ১১জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন ।