ঐ মুহুর্তে গুরুদেব এসে বললেন , তুমি আর এখানে থেকো না । যেভাবে বিদ্যা জাহির করছো তাতে প্রাণের বিপদ হবে । যেখানে ছিলে এবার ফিরে যাও সেখানেই । তবে যেখানেই যাও , তুমি যে আমার শিষ্য ছিলে তা কক্ষনো কাউকে বলতে পারবেনা ।
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে উখোং বিদায় নিলো। গুরুদেবকে শ্রদ্ধা এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞা জানালো উখোং । গুরুভাইদের কাছ থেকেও সে বিদায় নিলো ভারাক্রন্ত মনে ।
এক ডিগবাজি খেয়ে মাত্র দু ঘন্টার মধ্যে সে পুষ্পফল পর্বতে ফিরে এলো বিশ বছর পর । কি করুন অবস্থা হয়েছে গুহার । অর্ধেক ধ্বসে গেছে । গুহার নাম ফলকটি পড়ে আছে কাত হয়ে । পর্বতের ঘাস ফুল সব থেতলে আছে । বানরেরা বসে বসে কাঁদছে । তাদের অবস্থাও খুব করুন ।
উখোং গুহার সামনে এসে হাঁক দিলো । অমনি সহস্র বানর বাইরে এসে উখোং-কে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বললো , দুই বছর আগে শুই জাং ( দুর্গন্ধ পানি ) গুহা থেকে এক দানব এসে জলপর্দাগুহা দখল করতে চেয়েছিল । তারা প্রাণপণ লড়াই করেছে । ফলে ওরা গুহা দখল নিতে পারেনি । কিন্তু দানব লুঠ করে নিয়ে গেছে এই গুহার সব কিছু । বহু বানর ধরে নিয়ে গেছে । আমরা তো ভয়ে মরমর অবস্থায় বেঁচে আছি ।
এসব শুনে রেগে আগুন হয়ে গেলো উখোং । এক লাফে মেঘে চড়ে চোখের পলকে সে পৌঁছুলো শুই জাং গুহায় ।
খুদে দানবের কাছে খবর পেয়ে দানব অনুচরদের নিয়ে বেরিয়ে এলো গুহা থেকে । তার হাতে ছিলো খ এবং বর্ম ।
শুরু হলো দুইজনের লড়াই । মুহুর্তে দানব চিত্পটাং হয়ে পড়লো । খুদে দানবের সাহায্য করতে চাইলেও পারলোনা । মুহুর্তে মুহুর্তে উধাও হয়ে যেতে লাগলো উখোং । দানব উঠে আবার উখোংকে আক্রমণ করলো । উখোং কয়েকটা লোম ছিঁড়ে তা চিবিয়ে ফুঁ দিলো । অমনি সৃষ্টি হলো দুই তিন শো বানর । তারা একসঙ্গে দানবকে আক্রমণ করলো। দিশেহারা হয়ে পড়লো দানব ।
সেই সুযোগ দানবের খ কেড়ে নিয়ে এক কোপে দানবকে দুটুকরা করে ফেললো উখোং । খুদে দানবদেরও খতম করলো সে । গা ঝাড়া দিতেই লোমগুলো আবার তার গায়ে ফিরে এলো । এখন তাকে বন্দি বানরদের উদ্ধার করতে হবে । তাদের খোঁজে লেগে গেলো সে । পেয়েও গেলো সাথিদের ।
বন্দি বানরদের উদ্ধার করে উখোং ফিরে এলো জলপর্দা গুহায় । পুষ্পফল পর্বতে সে কি আনন্দ সেদিন । বানর এর পর তার অনুচরদের সুন পদবি দিলো । অনুচরেরা খুশিতে আটখানা । বিরাট এক ভোজসভার আয়োজন করলো তারা।
উখোং পুষ্পফল পর্বতে মহা আনন্দে অনুচরদের যুদ্ধ বিদ্যা শিখিয়ে দিন কাটাতে লাগলো । হঠাত্ একদিন উখোং-এর মনে হলো , আবার যদি কোনোদিন কোনো দানব পুষ্পফল পর্বতে আক্রমণ করে ? তাহলে তো প্রচুর অস্ত্র দরকার হবে । উখোং পুবদিকের আওলই রাজ্যে গেলো । এক ঝড় তুলে অন্ধকার করে দিলো সে রাজ্য । তারপর রাজ দরবারে ঢুকে পড়লো । একগাদা লোম তুলে তাতে ফুঁ দিয়ে হাজার হাজার বানর তৈরি করলো । রাজার ভান্ডার শুন্য করে তারা সমস্ত অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ফিরে এলো পুষ্পফল পর্বতে । আর কোনো চিন্তা নেই । প্রচুর অস্ত্র এখন তাদের হাতে । বানরেরা ক্রমে অস্ত্র বিদ্যা এবং যুদ্ধে এতো পারদর্শি হলো যে দৈত্য দানব রাক্ষস সবাই এসে বানর রাজ তথা সুন উখোং-এর বশ্যতা স্বিকার করলো ।
পুষ্পফল পর্বতের উপর উড়লো রঙ্গিন পর্দা । সারাদিন সেখানে শোনা যেতে লাগলো অস্ত্রের ঝন ঝনানি আর ঢাকের আওয়াজ । কিন্তু তবুও বিপদ হলো উখোং-এর ।
|