ক্যান্সার রোগের চিকিত্সায় আগে-ভাগেই রোগটির আবিষ্কার , চিহ্নিতকরণ ও আগে আগে চিকিত্সা করানোর সুগভীর তাত্পয্য আছে । যেমন অন্ত্রের ক্যান্সারের রোগীরা যদি আগে-ভাগে চিকিত্সা করান তাহলে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী আরও পাঁচ বছরেরও বেশী সময় বাঁচতে পারেন। কিন্তু যদি দেরীতে চিকিত্সা করান তাহলে মাত্র পাঁচ থেকে সাত শতাংশ রোগী আরও পাঁচ বছর বাঁচতে পারেন ।
চীনের মেডিক্যাল একাডেমীর ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিত্সক সি ইউয়ান খাই বলেছেন ,
"বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি আর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার চিকিত্সার উপায় আর ওষুধও বেড়ে চলেছেএবং চিকিত্সার ফলপ্রসূতাও কিছুটা বেড়েছে । কিন্তু তবুও আগে আগে আবিষ্কৃত ক্যান্সার রোগীদের রোগ চিকিত্সার ফল মাঝামাঝি সময় কিংবা দেরীতে আবিষ্কৃত রোগীদের চেয়ে ভালো ।"
চীন হচ্ছে ক্যান্সার রোগের উচ্চ ভারবাহী দেশগুলোর অন্যতম । ২০০০ সালে চীনে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ লক্ষ লোক মারা গেছে । বতর্মানে চীনে ২০ শতাংশ মৃত্যু ক্যান্সার রোগের কুফল। তাই চীনের সকল সরকার ক্যান্সার রোগ নিবারণ ও চিকিত্সার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় । বতর্মানে চীনে ক্যান্সার রোগ নিবারণ ও চিকিত্সার গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে আগে-ভাগে আবিষ্কারের উপর ব্যাপকভাবে জোর দেয়া হচ্ছে ।
উত্তরচীনের হোপেই প্রদেশের ঝি জেলা হচ্ছে খাদ্যনালীর ক্যান্সাররোগী – বহুল এলাকা । ১৯৭৩ সালে সেই এলাকায় ক্যান্সার রোগের সাবির্ক নিবারণ ও চিকিত্সা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রধানত: আগে আগে খাদ্যনালীর ক্যান্সার আবিষ্কারের সাবির্ক নিবারণ ও চিকিত্সা ব্যবস্থা নেয়া হয় । ফলে নতুন আবিষ্কৃত খাদ্যনালীর ক্যান্সাররোগীর সংখ্যা ও ক্যান্সাররোগীর মৃত্যুহার বহুলাংশে কমেছে । হোপেই প্রদেশের ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক ওয়ান সি চে বলেছেন ,
"আমরা ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে অবিরাম ও সাবির্কভাবে ক্যান্সার রোগ নিবারণ ও চিকিত্সার কাজ চালিয়েছি । ফলে ঝি জেলায় খাদ্যনালীর ক্যান্সাররোগে আক্রান্তদের হার আর মৃত্যুহার ক্রমেই কমেছে । যেমন ধরা যাক , পুরুষ রোগীদের হার ১৯৭৪ সালের দুই শতাংশ থেকে কমে ২০০২ সালে প্রায় ১.৩ শতাংশ হয়েছে ।"
সক্রিয়ভাবে ক্যান্সাররোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও জনসাধারণের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ক্যান্সাররোগ নিবারণ ও চিকিত্সার নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কমর্কর্তা খং লিন চি বলেছেন ,
"২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় 'চীনের ক্যান্সাররোগ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা' জারী করেছে । এই পরিকল্পনায় ক্যান্সাররোগের আগে-ভাগে আবিষ্কার , চিহ্নিতকরণ ও চিকিত্সার উপর জোর দেয়া হয়েছে ।"
তাছাড়া চীন কিছু কিছু নিবার্চিতএলাকায় ক্যান্সাররোগের আগে-ভাগে আবিষ্কারের আদর্শ ঘাঁটিও প্রতিষ্ঠা করেছে । চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের খং লিন চি বলেছেন ,
"২০০৪ সালে আমরা হোনান , হোপেই ও সানসি এই তিনটি প্রদেশের তিনটি ক্যান্সাররোগী-বহুল গ্রামাঞ্চল ও কুয়াংতুং প্রদেশের সেনচেন শহরের কমিউনিটি বেছে নিয়ে যথাক্রমে জরায়ুর ক্যান্সার ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের আগে-ভাগে চিহ্নিতকরণ ও চিকিত্সার আদর্শ ঘাঁটি স্থাপন করেছি । ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে আরও কিছু এলাকা বেছে নিয়ে অন্ত্রের ক্যান্সার ,যকৃতের ক্যান্সার ও নাসারন্ধ্রের ক্যান্সারের আগাম চিহ্নিতকরণ ও চিকিত্সার আদর্শ ঘাঁটিও স্থাপন করবো ।"
|