কাঠের ভেলা তৈরি করে আবার একদিন সে সাগরে নামলো । এক সময় সে গোদ্বিপ এলাকায় পৌঁছে দেখতে পেলো উচু এক পাহাড় । ভেলা থেকে নেমে পাহাড়ে গেলো । তার সঙ্গে দেখা হলো এক কাঠুরের । তাকেই ঋষি ভেবে প্রনাম করলো সে । ঋষি বলে সম্বোধনও করলো ।
কাঠুরে বললো যে সে ঋষি নয় ।তবে এই পাহাড়ের গভিরে একটি অর্ধ-চন্দ্র ত্রিতারকা গুহা আছে । সেখানে বাস করেন আচার্য বোধি নামে এক মহর্ষি ।
বানর সেই গুহা খুঁজে বের করলো । অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর গুহা থেকে বেরিয়ে এলো ঋষি বেশি এক কিশোর । সে এসে উখোংকে আচার্যের কাছে নিয়ে গেলো । বহু কক্ষ বারান্দা অতিক্রম করে তারা এসে পৌঁছলো জেড পাথরের তৈরি এক বেদির সামনে । সেখানে বসে আছেন আচার্য । ইনিই সেই মহর্ষি।
বানর বেদিতে উপবিষ্ট আচার্যকে প্রণাম করে তাকে শিষ্য করে নেয়ার প্রার্থনা জানালো । আচার্য জানতে চাইলেন তার পরিচয় । বানর বললো যে তার বাড়ি তাং শেং মহাদেশের আওলাই রাজ্যের পুষ্পফল পর্বতে । নাম , পদবি , বাবা মা , কেউ নেই তার । সে আরও বললো , আমার জন্ম পাথর থেকে । আচার্যের কাছে সে একটি নামও প্রার্থনা করলো। আচার্য বললেন , তুমি দেখতে পাইনফল প্রিয় এক হুসুন বানরের মতো । তাই তোমার পদবি হোক সুন । আর তোমার নাম রাখলাম উখোং বা ব্যোমজ্ঞানি। নাম পেয়ে বানর খুব খুশি হলো। সে আবার প্রণাম করলো আচার্যকে ।
আচার্যের দুই পাশে কিশোর শিষ্যরা । উখোং গুরু ভাইদের অভিবাদন জানালো । সেদিন থেকেই অধ্যবসায়ের সঙ্গে ভাষা শাস্ত্রচর্চা আর শিষ্টচার শিখতে শুরু করলো সে । গুরুভাইদের সঙ্গে মন্দিরের সব কাজেই সে হাত লাগাতো । একটুও বসে থাকতো নয় ।
ক্রমে উখোং বর্শা , খ আর তরোয়াল চালাতে ওস্তাদ হয়ে উঠলো। আরো কয়েক বছর তার কেটে গেলো এই গুহাতেই ।
এক সময় আচার্য তাকে জোতির্বিদ্যা আর ধ্যানজ্ঞান শেখাতে চাইলেন । কিন্তু অমর না হওয়া পর্যন্ত উখোং তা শিখতে রাজি হলো না । আচার্য রাগ করে উখোং এর মাথায় তিনবার চড় মারলেন ।
একদিন রাতে ঘুম থেকে উঠে উখোং পিছনের দরজা দিয়ে গুরুদেবের ঘরে প্রবেশ করলো। গুরুদেব জেগে গেলেন । উখোং তাকে বললো যে মাথায় তিনবার চাঁটি মারার জন্যই রাত্রি তিন প্রহরে সে এখানে এসেছে । সে অমর হওয়ার অলৌকিক বিদ্যা শিখতে চায় । গুরুদেব দেখলেন যে বানর একেবারে নাছোড় বান্দা । বেশ বুদ্ধিমানও ।
অগত্যা গুরুদেব এই অসাধারণ বানরকে অমরত্ব লাভের মন্ত্রজ্ঞান দিলেন । সেদিন থেকে উখোং গুরুভাইদের অগোচরে মাঝরাতে গুরুর কাছে এসে মন্ত্র শিখতো । ক্রমে উখোং বাহাত্তর রকমের রুপ গ্রহণ করার বিদ্যা আয়ত্ব করলো । সে এক ডিগবাজিতে এক লক্ষ আট হাজার লি পার হওয়া শিখলো । মেঘে চড়া এবং মেঘের মধ্যে ডিগবাজি খাওয়া শিখলো । আরো শিখলো নিজের গায়ের চুরাশি হাজার লোমকে মন্ত্র পড়ে ইচ্ছে মতো প্রাণি তৈরি করতে । একদিন গুরুভাইরা তার বিদ্যাচর্চার নমুনা দেখতে চাইলে সে মেঘে চড়ে ডিগবাজি খেয়ে দেখালো । মুহুর্তে পাইন গাছ হলো । তারপর মুহুর্তে হলো সারস । গুরু ভাইরা দেখ সাবাস সাবাস বলে উঠলো।
|