v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-12 16:30:00    
চীনে ক্রীড়া অনুরাগীদর সংখ্যা বাড়ছে

cri
    সংস্কার অভিযানের কল্যানে গত বিশাধিক বছরে চীনাদের জীবন যাত্রার মানের লক্ষনীয় উন্নতি হয়েছে ।এখন চীনারা খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টির উপর নজর রাখার সংগে সংগে ক্রীড়াচর্চার গুরুত্ব সম্বন্ধেও অধিক সচেতন হয়েছেন ।

    শীতের প্রারম্ভে ফিরে এসেছে চীনাদের পর্বতারোহনের শ্রেষ্ঠ মরশুম । প্রতিদিন ভোর বা সন্ধ্যায় পুর্বচীনের সানতং প্রদেশের চি নান শহরের ছিয়ান ফো পাহাড় ও ইং সিয়োং পাহাড়ে বহু নাগরিকদের পর্বতারোহন করতে দেখা যায় ।তাদের মধ্যে কেই একা ,কেউ কেউ দল বেঁধে সিড়ি ভেংগে উপরে উঠছে , জিজ্ঞেস করে জানা যায় , রোজ পর্বতারোহীদের সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার । তাদের মধে মি: চাও সু ফু ও মাদাম জাং লি জুন হলেন দমপতি ।তাঁদের বাসা চি নান শহরের কেন্দ্রস্থলে । তাঁরা সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, আবহাওয়া ভালো হলে তাঁরা রোজ পর্বতারোহন করতে আসেন । তাঁরা সাধারনত পাহাড়ের চুড়ায় উঠে কিছুক্ষন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন ,তারপর নীচে নেমে অসিচর্চা করেন বা থাইজি নামক চীনা শরীরচর্চা করেন । মাদাম জাং লি জুনের মতে , রোজ বাড়ির বাইরে ক্রীড়া তত্পরতায় অংশ নিলে স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং তার মনটা প্রসন্ন হয়ে থাকে। তিনি বলেছেন :পাহাড়ে চড়া আমাদের প্রচুর আনন্দ যুগিয়েছে , আমি মনে করি , পর্বতারোহনে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে , রোজ পাহাড়ে উঠানামা করতে করতে আমার ঊরুতে জোর এসে পড়েছে , হৃদযন্ত্র আর রক্তনালী পরিশীলিত হয়েছে পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনটা আমার পুরোপুরি চিন্তামুক্ত ।

    তাঁর এই বক্তব্যে সায় দিয়েছেন তাঁর স্বামী মি: চাও সু ফু । মি: চাও বলেছেন , পর্বতের উপরে উঠতে উঠতে তার ফুসফুস প্রচুর টাটকা অক্সিজেন গ্রহণ করে । তিনি মোটা ছিলেন, প্রথমে পাহাড়ে উঠার সময় ভারী ক্লান্তবোধ হত । দশ বারো সিড়ি ভাংগতে না ভাংগতেই হাঁপাতে শুরু করতেন । তবে তিনি হাল ছাড়েন নি , মাস খানেক পর তারঁ স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে ।তাঁর দেহের অপ্রয়োজনীয় মেদ অদৃশ্য হয়েছে ।এখন তাকে বেশ সতেজ সপ্রাণ বলে মনে হয় ।

    ছি নান শহরের পর্বতারোহীদের সংগে উত্তর পুর্বচীনের হারবিনের নাগরিকদের শখের ক্রীড়া একেবারে আলাদা। তাঁরা শীতকালে সাঁতার কাটার পুজারী । প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বাড়িঘরের বাইরের তাপমাত্রা শুন্যের নীচে ১৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ।নদীর জমা বরফ একমিটার পুরু । সাঁতার অনুরাগীরা নদীর বরফ ভেংগে এক একটা স্যুইমিংপুল তৈরী করেন ।তাঁরা তুলো গাদানো জামা খুলে স্যুইমিংসুইট পরে কিছুক্ষণ দৌঁড়ান আর ব্যায়াম করেন । তারপর নদীর শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটেন । সাঁতার সেরে তীরে উঠে কাপড় পরে কিছু ক্ষন দৌঁড়াতে হয় , নইলে গায়ের জল মুহুর্তেই জমে যায় ।

    শীতকালে হার্বিন শহরের সাঁতার অনুরাগীদের মধ্যে যেমন আছেন শক্ত সমর্থ জোয়ান তেমনই আছেন শ্বেতকেশী বৃদ্ধ ও নারী । ৬৮ বছর বয়স্কা মাদাম ছাং সি মিং তাঁদের মধ্যে একজন ।তিনি বলেছেন : বিশ বছর হলো আমি শীতকালে সাঁতার কাটছি । সম্প্রতি আমার যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে তা থেকে জানা গেছে যে ,আমার হৃদযন্ত্র ও রক্তনালী স্বাভাবিক রয়েছে ।

    নাগরিকদের স্বতন্ফুর্ত ক্রীড়া চর্চা ছাড়া চীনের বিভিন্ন স্তরের গণ সরকারও নাগরিকদের জন্য সক্রিয়ভাবে নানা রকম ক্রীড়া তত্পরতা আয়োজন করে । উদাহরন স্বরুপ , প্রতি বছরের জুন মাসে চীনের জাতীয় ক্রীড়া অধিদফতরের উদ্যোগে সারা দেশে সার্বজনিন ক্রীড়া সপ্তাহ আয়োজিত হয় । ক্রীড়া সপ্তাহে কর্মচারী ,কৃষক , তরুণতরুণী , কিশোর কিশোরী , বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য দড়ি লাফানো, দড়ি টানার মত যে সব জনপ্রিয় খেলাধুলার আয়োজন হয় তাতে কোটি কোটি লোক অংশগ্রহণ করে ।

    পেইচিংয়ের উত্তরাঞ্চলের মা দিয়ান পার্কে নাগরিকদের জন্য বিশেষ করে খেলার মাঠ রাখা হয়েছে, সেখানে আছে বাস্কেটবলের মাঠ , প্লাষ্টিক রাউন ওয়ে এবং নানা ধরনের সাজসরঞ্জাম । ৬৬ বছর বয়স্ক মিং লিউ ছিউ সেন এই পার্কের নিকটবর্তী একটি বাড়িতে থাকেন , তিনি রোজ এই পার্কে ব্যায়াম করতে যান ।তিনি বলেছেন :আমি প্রায় রোজ এখানে এসে একঘন্টা করে ব্যায়াম করি । ।ঊরু , কোমর বাহু এবং পেট ও বুকের পেশীকে সবল করে তোলার জন্য আমি দশাধিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে শরীরচর্চা করেছি ।

    মা দিয়ান পার্কের মত চীনের অন্যান্য বহু শহরের পার্কেও ব্যায়ম করার জায়গা আছে। সপ্তাহের প্রথম পাঁচ দিনে যারা পার্কে ব্যায়ম করে তাদের অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ও কর্মচারী । কিন্তু সপ্তাহান্তে পার্কের আশেপাশের বাসিন্দারা সবাই পার্কে গিয়ে ভিড় জমায় । ছাত্রছাত্রীরা বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে ,রাউনওয়েতে দৌঁড়াতে এবং মাটিতে হাতের উপরে ভর দিয়ে উল্টো দিকে দাঁড়ানো চর্চা করতে পছন্দ করেন । তরুন মা বাবারা তাদের বাচ্চাদর নিয়ে লুকাচুরি খেলেন বা ঝুলনা খেলেন । সর্বত্রই প্রানচঞ্চলতা দৃষ্ট হয় ।

    বড় বড় শহরের নাগরিকরা ছোটো বড় অনেক ব্যায়ামাগারে গিয়েও ক্রীড়া চর্চা করতে পারেন । পেইচিংয়ের ছিংনিয়াও ক্রীড়া কোম্পানি পেইচিংয়ের বৃহততম বিনোদন বানিজ্য কেন্দ্র । সেখানে আমাদানিকৃত সরঞ্জাম ব্যবহার করে মুষ্টিযুদ্ধ, দেহগঠনের নাচ ও ব্যায়াম , যোগচর্চা এবং ব্যালে শিখা যায় ।

    ছিংনিয়াও ক্রীড়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী তিন বছরে তার পাঁচটি ক্রীড়াচর্চ কেন্দ্র খোলা হয়েছে ।তার ক্লাবের সদস্যসংখ্যা বিশ হাজারেরও বেশী । পেইচিংয়ের একটি বাণিজ্যিক সংস্থায় কর্মরত মাদাম জাং তান ছয় মাস আগে তার ক্লাবের সদস্য হয়েছেন । তিনি বলেছেন : এখানকার পরিবেশ অসম্ভব ভালো । এখানে এলেই শরীরচর্চা করার স্পৃহা জাগে ।

    দেহের স্থুলত্ব কমানোই মাদাম জাংয়ের শরীরচর্চার উদ্দেশ্য । তিনি সপ্তাহে তিনচার বার শরীরচর্চা করেন । দু মাস ধরে শরীরচর্চা করার পর তাঁর ওজন চার কিলোগ্রাম কমেছে । শরীর স্বাভাবিক হওয়ার সংগে সংগে তিনি অনেক নতুন বন্ধু বান্ধবও পেয়েছেন ।