v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-12 10:40:38    
লিন জেস্যু-র কাহিনী

cri
    চীনের ছিং রাজবংশের জিয়াংসু প্রদেশের গভর্নর লিন জেস্যু জনসাধারণের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রায়ই সাধারণ লোকের ছস্থবেশে বাইরে ঘুরে বেড়াতেন।

    শরত্কালের একদিন।সাধারণ লোকের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে লিন জেস্যু একটি জাহাজঘাটার কাছে দেখলেন, এক বুড়ো এক চাকার একটা ঠেলাগাড়ি অতিকষ্টে ঠেলতে ঠেলতে একটা ঢালু জায়গা বেয়ে ওপরের দিকে উঠছেন। এই দৃশ্য দেখে লিন জেস্যু তাড়াতাড়ি তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলেন। সামনে থেকে দড়ি দিয়ে ঠেলাগাড়িটা টানতে টানতে তিনি বুড়োর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করলেন। বুড়ো বললেন, "আমার নাম ওয়াং সান। গত তিরিশ বছর ধরে আমি মাল বওয়ার কাজ করছি। জাহাজ ঘাটা থেকে শহর পর্যন্ত মাল বয়ে নিয়ে যেতে সত্যিই বেশ পরিশ্রম হয়। এতো ঘাম ঝরিয়ে আমার অল্প কিছু আয় হয়।

    লিন জেস্যু শহরের বাজার পর্যন্ত বুড়োকে মালশুদ্ধ এগিয়ে দিলেন। বুড়ো ওয়াং দেখলেন, লিন জেস্যুর পরনে ধনী লোকের মতো রেশমী কাপড় থাকলেও তিনি বেশ দয়ালু। কাছেই বুড়োর বাড়ি, সেদিকে যেতে যেতে বুড়ো লিন জেস্যুকে তার বাড়িতে একটু বসার জন্যে আমন্ত্রণ জানালেন। বিদায় নেয়ার সময়ে লিন জেস্যুকে বুড়ো ওয়াং বললেন: "আপনার নামটা আমাকে লিখে দিন। পরে সুযোগ পেলে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসবো।" এই কথা শুনে লিন জেস্যু একটা কাগজে কিছু লিখে বুড়োকে দিলেন।

    বুড়ো ওয়াং ছিলেন নিরক্ষর। দুদিন পর তিনি কিছু পয়সা দিয়ে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিলেন কাগজটায় কী লেখা আছে।মাত্র তখন তিনি জানতে পারলেন, যিনি দুদিন আগে তাকে সাহায্য করেছিলেন, তনিনি হলেন জিয়াংসু প্রদেশের মহামান্য গভর্নর। এ কথা জেনে নেই শিক্ষকও বুড়োকে গভর্নরের সঙ্গ ভালো সম্পর্ক করার জন্য এক শুভদিন কিছু উপহার সঙ্গে নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

    কয়েক দিন পর বুড়ো ওয়াং কিছু টাকা ধার নিয়ে নানজিং শহরের গুয়ানশেংইউয়ান কেকের দোকানে গেলেন। গুয়ানশেংইউয়ান কেকের দোকানটি ছিল একটি বড় গোছের দোকান। দোকানের মালিক বুড়ো ওয়াং-এর ছেঁড়া পুরনো কাপড় দেখে খুব তাচ্ছিল্যের ভাব দেখালেন। বুড়ো ওয়াং ব্যস্তত্রস্ত হয়ে টাকা এগিয়ে দিয়ে মালিককে বললেন, আমাকে দয়া করে দুই পাউন্ড ভালো রকমের কেক দিন। দোকানের একজন কর্মচারী টাকা নিয়ে দুটো মোড়কে কেক বেঁধেছেদে দিয়ে বুড়ো ওয়াংকে টিপ্পনী কেটে বললো: তুমি কাঙালী মানুষ, আর ঠাট দ্যাখাচ্ছো লাট সাহেবের মতো! ভালো রকমের কেক চাও! কোনো লাট সাহেবের সঙ্গে আত্থীয়তা করতে যাচ্ছ নাকি?

    বুড়ো ওয়াং দোকান-কর্মচারীটির এই টিপ্পনীর কোনো জবাব নি দিয়ে কেক নিয়ে নিঃশব্দে দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন। সেখান থেকে সোজা গেলেন গভর্নর ভবনে। গভর্নর লিন জেস্যুর দেখা পেতে তাকে বেগ পেতে হোলো না। বুড়ো ওয়াং তার সেই সদ্য-কেনা কেক লিন জেস্যু করতে এলেন এতে তো আমাকে আপনি আপন লোক মনে করলেন না! তারপর কেকের পরিমাণ জেনে নিয়ে গভর্নর বুড়ো ওয়াংকে টাকা দিতে চাইলেন। তিনি হাতে করে ওজন আন্দাজ করে দেখতে বললেন। দেখা গেল, সোড়ক দুটোর একটাও এক পাউন্ড হয় না। তা দেখে গভর্নর লিন জেস্যু খুবই রেগে গেলেন, বললেন, গরীবদের একটি পয়সা খরচ করতে হলেও কতো চিন্দাভাবনা করে খরচ করতে হয়, অথচ এই অসত্ ব্যবসায়ী গরীবদের ওজনে ঠকায়! এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কী হতে পারে! লিন জেস্যু তাঁর কর্মচারীদের ওই দোকানের মালিককে ধরে নিয়ে আসার আদেশ দিলেন। দোকানের মালিককে লিন জেস্যুর সামনে নিয়ে আসার পর লিন জেস্যু তাকে জিজ্ঞেস করলেন,এই বুড়ো লোকটি কি আপনার দোকান থেকে এই কেক কিনেছেন? মানিকটি বুড়ো ওয়াংকে দেখেই ভয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। লিন জেস্যু বললেন, দুই পাইল্ড কেকের মধ্যেও আপনি কম দিয়েছেন আধা পাইল্ড! তা হলে এক হাজার খদ্দেরকে আপনি কতোখানি কম দিয়ে থাকেন বললো আমার অপরাধ হয়েছে, আমাকে সাফ করুন, আমাকে মাফ করুন।লিন জেস্যু আবার বললেন, তাহলে আপনি চাবুক খেতে চান, না জরিমানা দিতে চান? মালিক ভাবলো, চাবুক খেলে শরীরের দুর্গতি তো হবেই, মান সম্মানও থাকবে না, তার ওপর ব্যবসা চালানোও কঠিন হবে। এই সব ভেবে মালিকটি শুকনো গলায় বললো: " আমি জরিমানাই দেবো।" লিন জেস্যু মালিকটির দুহাজার টাকা জরিমানা ধার্য করলেন, তারপর বুড়ো ওয়াং-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, এই টাকা আপনি নেবেন। আর, আপনার আশেপাশের গরীবদের মধ্যে যাদের আর দিন চলে না, তাদের কিছু টাকা দিয়ে দেবেন।

    মালিকটি দোকানে ফিরে গিয়ে বুড়ো ওয়াংকে জরিমানার দুহাজার টাকা দিয়ে দিলো, তারপর দোকানের সেই কর্মচারীটির গান প্রকান্ড এক থাপ্পোড় মারলো, আর গালাগালি দিতে দিতে বললো: তুমি ঐ বুড়োটাকে ওজনে কম দিয়েছিলে কেন? জানো এতে আমার কী-বিরাট লোকসান হয়েছে? কর্মচারীটি গালে হাত চেপে রেখে বললো: আপনিই তো সবসময়ে বলেন, গরীবদের ঠকানো যায় সহজে!

    গরীবদের সম্পর্ক স্বয়ং একজন গভর্নরের এতোটা দরদ আছে সে কথা মালিকটি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারলো না। শেষে সে সাব্যস্ত করলো ছেঁড়া কাপড়-পরা বুড়োটা আসলে গরীবই নয়। গরীবদের মতো ভান করে আসলে বুড়োটা তাকে ফাঁসাতেই এসেছিল। মালিকটা তখন কর্মচরীটাকে আরো তেড়েফুড়ে গালিগালাজ করতে লাগলো, বললো: চোখ থাকেও তুমি অন্ধ। আসল গরীব আর ভুয়ো গরীবের মধ্যে তফাত্টা তোমার চোখেই পড়লো না?