হজ পালন স্বচ্ছল মুসলমানদের অবশ্য-পালনীয় ধর্মীয় তত্পরতা। এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাধী সময়ে দু'লক্ষেরও বেশি মুসলমান সৌদি আরবের মক্কায় হজ পালন করতে গিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এ সব হজ যাত্রীর মধ্যে ছিলেন কয়েক হাজার চীনা মুসলমান। সম্প্রতি সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা মক্কায় হজ করতে যাওয়া চীনের একটি মুসলমান পরিবারের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তারা উত্তর-পশ্চিম চীনের সি আনের অধিবাসী।
ম্যাদাম সোফিয়া মা ছুং ইন-এর বয়স সত্তর বছর। এবছন তিনি তাঁর ছেলের বউ, নাতি ও নাতিনীর সঙ্গে মক্কায় হজ করতে গিয়েছিলেন। চীনে মুসলমান পরিবারের তিন প্রজন্মের লোক যে এক সাথে হজ করতে গিয়েছে,তা সাত্য বিরল।
ম্যাদাম সোফিয়া মা ছুং ইন-এর মোট আট সন্তান আছে। তারা সবাই বড় হয়েছেন এবং বিয়ে করেছেন। খুশির ব্যাপার এই যে, মাদাম মারম ছেলেমেয়েরা যার যার ইউনিটে ভাল কাজ করছেন এবং তাদের জীবনযাপনও অধিক থেকে অধিকতর স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। ফলে মুসলমানদের পবিত্র তীর্থ-স্থান মক্কায় হজ করতে পারার অর্থ ম্যাদাম মার বহু বছর ধরে লালিত একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।সংবাদাদাতা ম্যাদাম মা ও তাঁর নাতিনী এমিলা লিউ ইউ চুয়ানের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। ম্যাদাম মা আঞ্চলিকস ভাষায় কথা বলেন, তাই তার কথা বুঝতে সংবাদাদাতার অসুবিধা হয়। ম্যাদামের নাতিনী সংবাদাদাতাকে জানিয়েছে, তার দাদী বলেছেন, হজ পালন তার বহু বছরের আশা-আকাংক্ষা। এখন জীবনযাপন স্বচ্ছল হয়েছে, তিনি মক্কায় হজ করতে যেতে সফম হয়েছেন। আগে তাঁর অভাবের দরুন এই বিষয়টি তিনি একদম বিবেচনা করতে পারতেন না।
শতানন্দির আগে মক্কায় গিয়ে হজ পালন চীনের মুসলমানদের পক্ষে একটি অতি তঠিন ব্যাপার ছিলো। হজ করতে যেতে এক বছর লাগত। হজযাত্রীরা সাধারনত: হংকং, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক হয়ে সৌদি আরবে পৌঁছতে। বিংশ শতান্দির আশির দশকের পর চীনের অধিক থেকে অধিকতর মুসলমান মক্কায় হজ করতে যান। চীনের মুসলমানদের হজ পালনের সাফল্যমন্ডিত সম্পাদন নিশ্চিত করার জন্য চীনের ইসলাম ধর্ম সমিতি প্রতি বছর হজ-যাত্রী মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে। পেইচিং থেকে সোজাসোজি সৌদি আরবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চীনের হজ যাত্রীদের খাওয়ার, থাকা আর যানবাহনের ব্যবস্থা করার জন্য উসলাম ধর্ম সমিতি হজযাত্রীরা রওয়ানা হওয়ার আগেই সেখানে কর্মকর্তাদের পাঠায়। তা ছাড়া হজযাত্রীদের চিকিত্সার সুবিধার জন্য চীনের ইসলাম ধর্ম সমিতি প্রতি বছর হজযাত্রী দলের সঙ্গে ডাক্তার পাঠায়। এবছর চারজন অভিজ্ঞ মুসলমান ডাক্তার পাঠানো হয়েছে।
ম্যাদাম মার স্বামী ১৯৯৩ সালে মক্কায় হজ করতে গিয়েছিলেন। এবার তাঁর স্বামীর মতো তিনিও জীবনের আশা আকাংক্ষা বাস্তবায়িত করেছেন।
ম্যাদাম মার নাতিনী এমিলা লিউ ইউ চুয়ান এবার দাদীর সঙ্গে হজ করতে গিয়েছীল। সে বলেছে, প্রবীন মুসলমানদের চেয়ে অল্পবয়সী মুসলমানদের ধর্মীয় ধারনা ও চেতনা দুর্বল। সুতরাং হজ পালনের মাধ্যমে তাদের ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসের ধারনা ও চেতনা বেড়ে যাবে।
মুসলমান হিসেবে আমরা ইসলাম ধর্মের জ্ঞান সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চেয়েছি। সে বলেছে, হজ পালন তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সে বিশ্বাস করে যে, হজ পালনের পর সে আরো জানতে পেরেছে, নিজের জীবনকে কেমন করে পরিপূর্ণ করে দেয়া যায়।
ম্যাদাম ফাতিমা লিন সিয়াং লিয়ান ম্যাদাম মার পূত্রবধূ তিনিও ম্যাদাম মার সঙ্গে সঙ্গে হজ করতে গিয়েছিলেন। তার বয়স চল্লিশেরও বেশি্ তিনি একজন শিল্পপতি, এবার মক্কায় হজ করতে যাওয়া প্রসংগে তিনি আবেগের সঙ্গে বলেছেন, আগে দারিদ্রের দরুন তিনি হজ পালনের কথা একেবারে ভাবতে পারতে না।
এবার আমরা যে মক্কায় হজ করতে গিয়েছি, তা চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততা প্রবর্তনের ফরাসরি ও কল্যানকর প্রতিফলন।
ম্যাদাম লিন সংবাদাদাতাকে বলেছেন, এখন তাদের পরিবার ধনী হয়েছে, কিন্তু তারা অন্যদের সাহায্য করতে ভোলেন নি। সানসি প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গরীব ছাত্রছাত্রীদের অর্থ সাহায্য দেয়ার জন্য তারা একটি বৃত্তি-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের উপর হজ পালনের সুপ্রভাবে ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালভাবে কাজ করবেন এবং দেশ ও মুসলমানদের জন্য আরো বেশি উপকারমূলক কাজ করবেন।
|