নিজের প্রতি, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সামাজিক দায়দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের নিজস্ব কিছু বিশ্বাস গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠা এই বিশ্বাসগুলো অযৌক্তিক, অবাস্তব ধারণায় প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয় নিজের মনে।
ভুল প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমরা কেবল ভুলই করতে থাকি। ভুল বিশ্বাস কিংবা ভুল ধারণাগুলো বাস্তব প্রেক্ষপটে বেমানান, খাপ খায় না। নিজে সেটা বুঝতে পারি না। ফলে মনের চাওয়া-পাওয়ার ধারণাটি অযৌক্তিক অবস্থানে গিয়ে ঠেকে। সেই অবস্থানে ওঠা কঠিন, জয় করা দুঃসাধ্য।
অথচ মনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসা বিশ্বাসের টানে ছুটতে হয় অবাস্তব লক্ষ্যের দিকে। ফলে মনে চাপ বাড়ে। কখনই আর সেই চাপ মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। অতি অবাস্তব উচ্চতর ধারণার পিছু ছুটতে গিয়ে আমরা নিজের ধারণা বা বিশ্বাসটি সত্যের আলোকে আর মোপে দেখতে পারি না। ফলে হাই এক্সপেশনের ওজনের নিচে পিষ্ট হয় মন, উদ্বেগ তখন আরো পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসে মনে।
নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্ত করতে হলে তিনটি ধাপ সম্পর্কে জানতে হবেঃ
১। প্রথমে নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলো বৃঝতে হবে, শনাক্ত করতে হবে।
২। শনাক্ত করার পর নেতিবাচক চিন্তাগুলো চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
৩। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে নেতিবাচক চিন্তাগুলো তাড়াতে হবে। অর্থাত্ ইতিবাচক চিন্তা প্রতিস্থাপন করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শিখতে হবে কীভাবে ইতিবাচক চিন্তার শক্তি বেগবান করা যায়।
নেতিবাচক চিন্তা মনের উদ্বেগ বাড়ায় ইতিবাচক চিন্তা উদ্বেগ কমায়, মনের ফ্রেমে মির্থিলতা জাগায়, মন রিলাক্স হয়।
নেতিবাচক চিন্তার কারণে মানসিক চাপজনিত ঘটনার দিকে বেশি নজর থাকে, উদ্বেগ এ কারণে ধাপে ধাপে কিংবা হঠাত্ তীব্রতর হয়। ইতিবাচক চিন্তা নেতিবাচক ঘটনা থেকে মন দূরে সরিয়ে রাখে। মন এভাবে চাপমুক্ত হয়।
সামনে জটিল কাজ হাতে থাকলে, মন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হয়, সব জগাখিচুড়ি বাঁধিয়ে ফেলে। বিশৃংখলা যতো বাড়বে উদ্বেগ ততো বাড়তে থাকবে।
ইতিবাচক চিন্তার আলোকে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত বা ঐশ্বর্য ব্যবহার করে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে পারি। আমাদের মনোভাব চিন্তাগুলো পরিচালিত করে।
ইতিবাচক মনোভাব শক্তি জোগায়, ইতিবাচক চিন্তা শাণিত করে। নেতিবাচক মনোভাব শক্তি উদ্বেগ বাড়ায়। ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করে আমরা যে কোনো জটিল সমস্যার পেয়ে যেতে পারি। মনের উদ্বেগ শাসন করতে পারি।
সব কথায় শেষ কথা হচ্ছে, আমাদের মনে রাখতে হবে কীভাবে আমরা কাজ করি বা অনুভব করি তা নির্ভর করে আমাদের চিন্তার ধরনের ওপর।
আরো মনে রাখতে হবে, নিজের জীবন যেন উদ্বেগের নিয়ন্ত্রণে চলে না যায়। চলে গেলেও সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে উদ্বেগমুক্ত জীবনে।
ইতিবাচক চিন্তার চর্চা উপহার দিতে পারে আমাদের আনন্দময় বর্তমান, উদ্বেগমুক্ত সুখী জীবন।
---ডাঃ মোহিত কামাল, সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা, বাংলাদেশ (দৈনিক ইত্তেফাক)
|