লিওইয়াং নদী , কয়েক বাঁকের নদী, কয়েক ডর্জন মাইলের নৌপথে শিয়াংচিয়াং নদী পৌছানো যায় ---" লিওইয়াং নদী নামে একটি মনোরম গান আমাদের চীনের মধ্য-দক্ষিণাংশের একটি ছোটসন্দর নগর---লিওইয়াংএ নিয়ে এসেছে।ছোট হলেও এই নগর পাহাড় আর জল বেষ্টিত।জায়গাটির সম্পদ সমৃদ্ধ আর প্রাকৃতিক পরিবেশ চমত্কার। চীনে লিওইয়াং নগরকে আতশবাজি নগর বলে ডাকা হয়। সেখানে যে আতশবাজি তৈরী করা হয় তা বৈচিত্রময়।কয়েক দিন আগে হুনান ভ্রমণে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতা লিওইয়াং নগরে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি যেমন সন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য তেমনি সৌন্দর্যস্নাতআতশবাজির জাদুঘর উপভোগ করেছেন।হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশা থেকে গাড়ীতে লিওইয়াং যেতে এক ঘন্টার একটু বেশী সময় লাগে।একটি নদী লিওইয়াং নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বলে লিওইয়াং নদীর নাম দেয়া হয়েছে।তাহলে আজকে আমাদের ভ্রমণ লিওইয়াং নদী থেকে শুরু করা যাক। লিওইয়াং নদীর দু পাশে সর্বত্রই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরা ।নদীর প্রত্যেকটি বাঁকে জমে-উঠা উর্বর জমি, ঘন ঘন বাঁশের বন এবং গাছপালার ফাঁকে দেখানো এক একটি গ্রামে দক্ষিণ চীনের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।যেখানে নদীর পানি গভীর নয় সাখানে আপনি নৌকা থেকে নদীতে নামতে পারেন।যাতে নদীর তলদেশের পাথরগুলো আপনার পায়ে মেসাজ করতে পারে ।যদি আপনার ভাগ্য ভাল তাহলে আপনি ক্রিস্ন্যানথম্যাম(সোনালি পুষ্পবিশেষ) পাথর কুড়ে নিতে পারেন।এ ধরনের পাথর লিওইয়াং নদীর তলদেশের বৈশিষ্ট্যসম্পন পাথর।বংশক্রমে লিওইয়াং নদীর তীরে বসবাসকারী ম্যাডাম লি ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
ক্রিস্ন্যাথম্যাম পাথর আমাদের লিওইয়াং নগরের বৈশিষ্ট্য।কেবল নদীর তলদেশে এ ধরনের পাথর পাওয়া যায়।আমাদের খোদাইশীল্পদের হাতে এ ধরনের পাথর শিল্পকর্ম হতে পারে । সারা বিশ্বে এ ধরনের পাথরের সুনাম আছে।এই পাথর একটি অত্যন্ত দামি জিনিস। এই পাথরে ফুলের যে ভাঁজ সৃষ্টি হয় তা ২০ কোটি বছর আগে রূপায়নের সুত্রপাত হয় ।দেখতে কিস্ন্যাথম্যামের মতো বলে এ ধরনের পাথরকে ক্রিস্ন্যাথম্যামের পাথর বলে আখ্যয়িত।প্রায় ৪শো বছর আগে, লিওইয়াং বাসীরা এই ধরনের পাথর সংগ্রহ করতে শুরু করেন।এই প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে স্থানীয় লোকেরা নানা ধরনের ভাষ্কর্য খোদাই করেছেন।এ সব ভাষ্কর্যের মধ্যে রয়েছে, পাহাড়, ফুল, পাখি এবং মানুষের মূর্তি প্রভৃতি।১৯১৫ সালে পানামায় আয়োজিত একটি বহুদেশীয় প্রদর্শনীতে লিওইয়াংএর প্রবীণ শিল্পীর খোদাই-করা ক্রিস্ন্যাথম্যামের পাথরের ভাষ্কর্য এ প্রদর্শনীর স্বর্ণপদক অর্জিত হল।আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা লিওইয়াংএ এমন একটি বিরাট পাথরের ভাষ্কর্য দে
খেছেন যার আকার ৮ বর্গবিটার।পাথরের নীচে শুয়ে পড়া অব্যস্থায় একটি সবুজ রংয়ের ড্রাগন খোদাই করা হয়।ড্রাগনের গায়ে দশ-বারোটি তুষার মতো সাদা চিওহুয়া ফটে গেছে।দেখতে খুব চিত্তার্কষক। লিয়াইয়াং নদীতে ভাসতে ভাসতে অজান্তে ২০ কিলোমিটারের বেশি কিলোমিটার পার হয়ে গেল । সংবাদদাতাটি লিওইয়াং নদীর উত্স--- দাভিসেন পৌছলেন।দাভিসেন হচ্ছে একটি রাষ্ট্রীয় শ্রেণীর বন উদ্যান।বিস্তীর্ণ এই বনের সাগরে ২ হাজারেও বেশি ধরনের উদ্ভিদ এবং ৫০টির বেশি প্রাণী সমাবেশিত হয়।এখানে বছরে বার্ষিক গড়ে তাপমাত্রা ১২ সেন্টিগ্রেড। শ্রীস্মমন্ডলীতে অবস্থিত হুনানে এ ধরের তাপমাত্রা খুম কম দেখা যায়।দাভিসেন পাহাড়ের চার দিকে অনেক দর্শনীয়স্থান আছে।এই পাহাড়ে আরো আছে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি হ্রদ এবং জলপ্রপাত। বসন্তকালে সারা পাহাড়ে কেবল এজালী ফলের সমুদ্র।পাহাড়ে এমন এক ধরনের গাছ আছে যার গায়ে ছুঁয়ে দিলে নড়াচড়া করে থাকে, মানুষকে কাতুকুত করা হলে যেভাবে সাড়া দেয় গাছটিও সেভাবে সাড়া দেয়।একটু আগে আমি বলেছি যে, লিওইয়াং হচ্ছে আতশবাজির রাজধানী।এখানের তৈরী আতশবাজি বিশ্ববিখ্যাত।সুতরাং লিওইয়াংএর আতশবাজি যুদ্ধঘর দেখা আমাদের লিওইয়াং ভ্রমণের একটি প্রধান বিষয়।সেখানে লিওইয়াংএর আতশবাজির ইতাহাস সম্বন্ধে আমরা জেনে ফেলেছি।গ গাইড ইয়ান আমাদের বললেন,
লিওইয়াংএর আতশবাজি তৈরীর ইতিহাস ১৪০০ বছরের ।এই যাদুঘরে প্রধানত আতশবাজির উত্স থেকে এ পর্যন্ত আতশবাজি তৈরীর শিল্পকর্ম সংরক্ষিত হয়।বর্তমানে যন্ত্রের মাধ্যমে আতশবাজি তৈরী করা হয় বলে আকেগার হাতের তৈরী আতশবাজি কারখানায় দেখা যায় না। পরবর্তীকালের লোকেরা যাতে অতীতের আতশবাজির ইতিহাস ভালভাবে জানতে পারেন সেই জন্যে আমরা এ সব নমনা সংগ্রহ করেছি। যাদুঘরে গত ৭০০ বছরে লিওইয়াংএ প্রচলিত নানা ধরনের আতশবাজি তৈরীর যন্ত্রপাতি দেখানো হয়েছে।কয়েক জন ষাট থেকে সত্তর পর্যন্ত বছর বয়সী প্রবীণ শিল্পী সরজমিনে আতশবাজি হাত দিয়ে তৈরী করার সংক্ষিপ্ত প্রণালী দেখিয়েছেন।ছোট একটি আতশবাজি তৈরী করা হলে দশ-বারোটি প্রণালীর প্রয়োজন।আগে কেবল আকাশে আকশবাজির সৌন্দর্য উপভোগ করেছি , কিন্তু এখন আতশবাজি তৈরীর প্রণালী দেখেছি। বুঝতে পেয়েছি একটি ছোট আতশবাজি তৈরী করলে শ্রমিকদের কত কষ্ট করতে হয়! তবে গাইড বলেছেন, বর্তমানে আতশবাজি কারখানায় ডিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।সম্প্রতি লিওইয়াংএর আতশবাজির রকমাতি তিন হাজারেরও বেশী হয়েছে।বিশ্বের এক শোরও বেশীটি দেশে লিওইয়াংএর আতশবাজি বিক্রি করা হয।চীনের বিভিন্ন উত্সবে যে সব আতশবাজি নিক্ষেপন করা হয় সে সব আতশবাজির মধ্যে বেশির ভাগ আতশবাজি লিওইয়াংএর তৈরী।
লিওইয়াং নগরের ওয়াকিং সড়কে না গেলে আপনার অনুতাপ না হওয়ার কারন নেই।গাইডের পিছনে আমরা হেঁটে হেঁটে সড়কের দু পাশের ঝোলানো হস্তশিল্পের উপর চোখ বুলিয়ে দিলাম।
এটা হলো আমাদের রীতিনীতি আর সংস্কৃতি সড়ক।এখাকার ভাস্কর্য সবই প্রানতন্ড।প্রত্যেক দোকানে লিওইয়াং নগরের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায়।এগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ হলো পাথরের ভাস্কর্য।সে দিন রাতে সাংসাদদাতা এত বেশী আতশবাজি দেখেছেন তা জীবনে এর আগে কোনো দিন দেখেননি।শ্রোতা বন্ধুরা, সুযোগ পেলে লিওইয়াং নগর একবার দেখতে যাবেন।আগামী আসরে আমাদের হুনান ভ্রম অব্যহত থাকবে।আজকের আসরটি শোনার জন্যে ধন্যবাদ।
|