অনেক অনেক দিন আগের কথা । তোং শেং মহাদেশে আওলাই নামে এক রাজ্য ছিলো । এই রাজ্যের পশ্চিমে ছিলো এক সাগর । সেই সাগরের মাঝখানে ছিলো ফুলে ফলে ভরা এক পাহাড় । আর সেই পাহাড়ের চুড়ায় ছিলো প্রকান্ড একটি অলৌকিক পাথর । সেটা থেকে বিচ্ছুরিত হতো অবিরত উজ্জ্বল আলো । মনে হতো পুরো পাহাড়টাই আলোর পাহাড় ।
এই পাথরটির উপর সকালে পড়তো সুর্যের খোলামেলা আরো আর তাপ । রাতে পড়তো চাঁদের স্নিগ্ধ আলো আর শিশির । বর্ষার পানিতে তার হতো নিত্য স্নান । বহু যুগ বহু শতাব্দি কেটে যাবার পর সেই পাথরে আঙ্কুরিত হলো একটি প্রাণ । হঠাত্ একদিন প্রচন্ড শব্দে পাথরটি ফেটে তা থেকে বেরিয়ে এলো একটি পাথরের ডিম । আর সেই ডিম থেকে জন্ম নিল একটি পাথরের বানর । কিন্তু তার প্রাণ আছে । সে একটু পরেই লাফালাফি শুরু করে দিলো। পিপাসায় ঝর্ণার পানি এবং খিদে পেলে গাছের ফলও খেতে শিখলো নিজে নিজে ।
ক্রমে কিছু বানব বন্ধু জুটলো তার । মহা আনন্দে তারা পাহাড়ে লাফালাফি ছোটছুটি করতো । একদিন তারা এক বিশাল জলপ্রপাত দেখলো । যেনো বিশাল চওড়া পানির ঘনো পর্দা । তারা বাজি ধরলো , কে পারে এই পানির তোড়ের ভেতর ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে ? এক বুড়ো বানর বললো , যে এই কাজ পারবে তাকে আমরা রাজা বানাবো।
এক লাফ দিয়ে এগিয়ে এলো সেই পাথরের বানর । তিড়িং করে এক লাফে সে ঐ জল প্রপাতের পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে গেলো পানির ওপারে । সে চোখ খুলেই দেখলো মনোরম দৃশ্য । এক চকচকে সেতুর পাশে দেখলো ছয়টি গুহা । সেখানে লেখা , "পবিত্রস্থান পুষ্পফল পর্বত , জলপর্দা গুহা" ।
গুহার ভেতর ঢুকে বানর দেখলো , সেখানে পাথরের খাট টেবিল বেঞ্চ রান্নার চুলো থালা বাটি সব আছে । খুব আনন্দিত হলো সে । জায়গাটাও বেশ বড়ো সড়ো । হাজার খানেক বানর একসঙ্গে থাকা যাবে । বানরেরা পাথরের বানরকে ধন্যবাদ জানালো অন্তর থেকে । পাথরের বানর এবার নিজেকে বানরের রাজা ঘোষণা করলো । সবাই মেনে নিলো রাজাকে । তারপর মহা আনন্দে রান্না বান্না করে আয়োজন করলো ভোজসভার । খেতে খেতে সবাই ক্লান্ত হয়ে গেলো । খুশিতে আটখানা সবাই । সেই থেকে পুষ্পফল পর্বত হলো তাদের রাজ্য , আর জলপর্দা গুহা হলো তাদের বাড়ি ।
রাজা বানর ক্রমে সেনাপতি ও মন্ত্রি নিয়োগ করলো । তারা প্রতিদিন রাজ্যময় ঘুরে বেড়াতো । এই ভাবে আনন্দের সঙ্গে কেটে গেলো কয়েকশো বছর । বানরের বয়স হলো অনেক ।
হঠাত্ একদিন বানররাজের মনে মৃত্যু চিন্তা এলো । এক বৃদ্ধ বানর বললো , এই পৃথিবির কোনো এক গুহায় থাকেন এক দেবর্ষি । তার কাছে গেলে অমর হওয়ার উপায় জানা যাবে । পরদিনই পাথরের বানর রওনা হলো দেবর্ষির খোঁজে । ভেলায় দাঁড় বেয়ে সে সাগর পাড়ি দিতে দিতে একদিন জম্বু দেশের দক্ষিণ সিমানায় পৌঁছুলো সে । সেখানে অনেক লোক । তারা তো বানরকে দেখেই ভয়ে দিলো দৌড় । তাদেরই একজনকে ধরে তার জামা কাপড় কেড়ে নিয়ে সে পরলো । দেখতে একটু সভ্য হলো এবার । জম্বু দেশেই কেটে গেলো তার আট নয় বছর । সে কথাবার্তা বলা শিখলো । আচার আচরণ শিখলো । কিন্তু দেবর্ষির সন্ধান তো পেলো না ।
|