আধুনিক চীনা পরিবারে ফ্রীজ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ঘরোয়া যন্ত্রপাতি। কিন্তু ফ্রীজের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে প্রচুর শক্তি ব্যয় হয় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসৃত হয়। এই সমস্যার সমাধানে চীনে সম্প্রতি স্বল্প-বিদ্যুত ব্যয়ে পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ জোরলোভাবে প্রবর্তিত হচ্ছে। আজকের "বিজ্ঞান বিচিত্রা"অনুষ্ঠানে এই সম্পর্কে কিছু বলছি, আমি ইয়াং ওয়েই মিং। আশা করি সবাই ভালো আছেন।
চীনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যিক উত্সব -বসন্ত উত্সব উপলক্ষে পেইচিংয়ের অধিবাসী ম্যাডাম ছিয়েন ছাং সিয়া একটি ফ্রীজ কিনেছেন। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"আমাদের নতুন ফ্রীজ শুধু দেখতে সুন্দর তা নয় এবং তাতে বিদ্যুত খরচ ও প্রাকৃতিক সম্পদও বাঁচানো যায়, তা খুব ভাল। আমরা সবাই তা খুব পছন্দ করি।"
এই নতুন ফ্রীজের ধারণক্ষমতা ২০৮ লিটার, প্রতিদিন কেবল এক কিলোয়াট বিদ্যুত ব্যবহৃত হয়। মাডাম ছিয়েন বলেছেন, নতুন ফ্রীজে আগেকার ফ্রীজের চেয়ে অর্ধেক কম বিদ্যুত খরচ হয়, তাতে খরচও কম হবে। নতুনটার দাম একটু বেশী হলেও শেষ পর্যন্ত খরচ কম।
বর্তমানে চীনের বাজারে সর্বাধিক বিক্রীত ফ্রীজ হচ্ছে মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ। আর তা সম্ভব হয়েছে চীন সরকারের অনুকূল নীতির কল্যানে । চীনের জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তা ম্যাডাম সুং শিয়াও জি বলেছেন:
"চীন সরকার পরিবেশ রক্ষায় বেশ মনোযোগ দিচ্ছে। মিতব্যয়ী ও পরিবেশ মহায়ক ফ্রীজ ব্যবহারে উত্সাহ দেওয়া হলো এর উদাহরণ। তা যেমন অর্থনীতি ও পরিবেশের অনুকূল, তেমনি এর সামাজিক সুপ্রভাবও বেশী। সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে শক্তিসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করার ধারণা ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে, তা গোটা সমাজের শক্তিসম্পদ সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষার সক্রিয়ভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে।"
শক্তিসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষন করার জন্য ১৯৯৮ সাল থেকে চীন সরকার সক্রিয়ভাবে মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ চালু করেছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কয়েক বছর ধরে এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনায় সহযোগিতা চালিয়েছে। এই পরিকল্পনা প্রবর্তিত হওয়ার পর, উদ্যোক্তারা প্রধানতঃ দু'দফা তত্পরতা চালিয়েছেন। প্রথম দফা হচ্ছে উত্পাদন শিল্পসংস্থার জন্য প্রযুক্তি প্রবর্তন তত্পরতা। দ্বিতীয় দফা হচ্ছে বাজারায়ন তত্পরতা। এই তত্পরতার কারণে চীনের প্রধান ফ্রীজ উত্পাদন শিল্প সংস্থা এখন প্রধানতঃ মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ তৈরী করছে। চীনের বৃহত্তম ফ্রীজ উত্পাদক শিল্পসংস্থা হাইয়ার গোষ্ঠীর উত্পাদিত সকল ফ্রীজে ফ্লুরিন-বিহীন কম্প্রেসার ব্যবহৃত হচ্ছে।তার বিদ্যুত খরচ আগের চেয়ে অর্ধেক কম হয়েছে।
এখন হাইয়ার গোষ্ঠীর উত্পাদিত সাধারণ ফ্রীজে দৈনিক বিদ্যুত খরচ ১.৪ কিলোয়াটের নীচে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজের দৈনিক বিদ্যুত খরচ ৮০০ ওয়াটের নীচে। পাঁচ শতাধিক লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রীজে দৈনিক বিদ্যুত খরচ চার কিলোয়াটের কম। এ সব মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ উত্পাদন হলো হাইয়ার কোম্পানির নিজস্ব গবেষণার সুফল। এগুলোর মধ্যে কিছু ফ্রীজে দৈনিক বিদ্যুত খরচ উন্নত দেশের চেয়েও কম।
হাইয়ার-এর মতো চীনের দশটিরও বেশী ফ্রীজ শিল্পসংস্থার উত্পাদন মান সরকারের মানদন্ডে পৌঁছেছে।
মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ প্রবর্তনের জন্য চীনের ফ্রীজ উত্পাদন শিল্প তাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।
মা খাই মিং হলেন পেইচিং শহরের একটি দোকানের বিক্রেতা। গত বছরের মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি মোট ১০০০টি ফ্রীজ বিক্রি করেছেন, ফলে দেশের ফ্রীজ বিক্রির প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব হলো তাঁর বিক্রির প্রাণশক্তিঃ
"মানুষের জীবন-ঘনিষ্ঠ সম্পদের পরিমান দ্রুত কমে যাচ্ছে। পুরনো ধরনের দূষণ-সৃষ্টিকারী প্রাকৃতিক শক্তিসম্পদ আমাদের পরিবেশের উপর ধ্বংসের কালো ছায়া ফেলেছে। এই কথা ভেবে যখন আমি একটি মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজ বিক্রি করি, তখন আমার মনে অসীম আনন্দ। তাই আমি গ্রাহকের কাছে মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজের উপকারিতা ব্যাখ্যা করতে আগ্রহী।"
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকার, শিল্পসংস্থা ও বিক্রেতাদের মিলিত প্রয়াসে চীনের ভোক্তা বা গ্রাহকরা ধাপে ধাপে মিতব্যয়ী ও পরিবেশ সহায়ক ফ্রীজের উপকারিতা উপলদ্ধি করেছে। বর্তমানে এ ধরনের ফ্রীজ চীনের গোটা ফ্রীজ মার্কেটের বিক্রি হারে অর্ধেক দখল করেছে।
|