জিংপো জাতির লোকসংখ্যা এক লক্ষ দশ হাজার। জিংপো জাতির অধিকাংশ লোক বাস করেন দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের তেহং থাই আর জিংপো জাতির স্বায়ত্ব শাসিত বিভাগে । বাকী অল্প সংখ্যক লোক থাকে সুজিয়াং লিলি জাতির স্বায়ত্ব শাসিত বিভাগে।
ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়,প্রাচীনকালে জিংপো জাতির পূর্বপুরুষরা থাকতেন ছিং-হাই তিব্বত মালভূমির দক্ষিণাঞ্চলে। পরে তাঁদের বংশধররা উততর-পশ্চিম ইয়ুন-নান প্রদেশ আর নুজিয়াং নদীর পশ্চিম তীরে স্থানাস্তরিত হয়।
জিংপো জাতির মেয়েরা সোন্দর্যের পুজারী। তাঁদের মাথায় উলের লাল পাগড়ি বাধাঁ। তাদের লুংগী বা থামী রংগিন উল দিয়ে বোনা। তাঁদের রূপার অলংকার-শোভিত জামা দেখতে ভাবী সুন্দর। তাদের মেখলাও লাল রংয়ের।
জিংপো জাতির পুরুষরা সাধারণত কালো কামিজ পরেন,তাঁদের পায়জামা ছোটো আর ঢিলা। বাইরে গেলে তাদের কোমরে তলোয়ার ঝুলে থাকে। কেউ কেউ বাইরে বার কাঁধে বন্দুক নিয়ে। তাঁদের কাঁধে ঝোলানো সুক্ষ্ম কারুকাজ করা থলে সুপারি আর তামাকে ভরা। জিপো জাতির-অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়,তাপমাত্রা উঁচু,সেখানকার গভীর বনে অনেক প্রকার ফল আর বন থেকে চল্লিশ শাকসবজির চাষও করেন।
"মদ দিয়ে দুটো পাহাড় এঁটা দেয়া যায় এবং বন্ধুদের হৃদয় বাধাঁ যায়",জিপো জাতির মানুষের জীবনে মদ যে কত গুরুত্বপূর্ণতা এই প্রবাদ থেকে বোধ যায়। বাইরে অতিথিপরায়ন কৃষকরা তাদের সুগন্ধী মদ খাওয়ান। নতুন বাড়ি নিমানের কাজ শেষ হওয়ার পর আয়োজিত উদযাপনী অনুষ্ঠান এবং বিয়ের অনুষ্ঠানেও অতিথিদের মদ খাওয়ানো হয়।
জিংপো জাতির মানুষ নাচগান পছন্দ করেন। প্রতিবছর চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব পালনের জন্য জিংপো জাতি অধ্যুষিত এলাকায় বিরাটাকারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জিংপো জাতি অধ্যুষিত পাহাড়ী এলাকা মুল্যবান সম্পদে সমৃদ্ধ। সেখানে যেমন আছে সেগুন,দেবদাবু প্রভৃতি গাছ এবং হুয়া-নান বাঘ,ব্ন্য গরু,হরিণ.ময়ুর প্রভৃতি বন্যপ্রাণী তেমনি আছে লোহা,তামা.সামী.হীরক প্রভৃতি খনিজ সম্পদ। কিস্তু ১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ঐতিহাসিক কারণে অর্থনীতির দিক থেকে অধ্যুষিত অঞ্চল অনুন্নত ছিলো। নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানকার দারিদ্র্য মোচনের জন্য চীন সরকার কৃষি আর শিল্প উত্পাদনের উন্নয়ন সাধন করতে স্থানীয় জনসাধারণকে সাহায্য করে। এখন সেখানে অনেক প্রশস্ত সড়কপথ তৈরী হয়েছে,এবং বিদ্যুত্ কারখানা,কৃষি যন্ত্র তৈরী কারখানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পনদ্যদ্রব্য তৈরীর কারখানা স্থাপিত হয়েছে। লংচুয়ান জেলায় ইয়ুন নান প্রদেশের বৃহত্তম? চিনির কারখানাও গড়ে উঠেছে। ফলে জিংপো জাতির সমাজ,অর্থনীতি আর জনসাধারণের জীবনের গভীর পরিবর্তন ঘটেছে।
চীনর সংস্কার অভিযানের কল্যানে গত বিশ বছরে জিংপো জাতির জনসাধারণের ধ্যান-ধারনারও বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। অতীতে তারা মনে করতেন,ব্যবসা একটি লজ্জাকর কাজ। কিন্তু এখন মেয়েরাও বাজারের প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছেন।
|