চীনের অর্থনীতির ধারাবাহিক ও দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চীনের শিল্পোদ্যোগের পরিস্থিতিও অনেক উন্নত হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা-শেষে বিদেশ-ফেরত চীনা নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাঁরা নিজেদের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে চীনে ফিরে এসে শিল্পাদ্যোগ নেন। তাঁদের অবস্থা কেমন এই প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতা চীনের সিলিকন বভ্যালী বলে খ্যাত চুং কোয়ান ছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
চুং কোয়ান ছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক পেইচিং শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলে অনন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শিক্ষা সম্পদ আছে। এখানে বিভিন্ন ধরণের বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা ১শ'রও বেশী, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০টি'রও বেশী। তাছাড়া, শিক্ষা-শেষে বিদেশ-ফেরত ব্যক্তিদের এখানে শিল্পোদ্যোগ গ্রহনে উত্সাহ দেয়ার জন্য একটি শিল্পোদ্যোক্তাদের পরিসেবা দফতরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাতে বিদেশ-ফেরত ব্যক্তিদের আর্থিক সমর্থন যুগিয়ে দেয়া হয়।
এসব ব্যবস্থা অনেক বিদেশ-ফেরত ব্যক্তিকে এখানে শিল্পোদ্যোগ গ্রহনে উদ্বদ্ধ করেছে। গত বছরে ব্রিটেন থেকে ফিরে শিল্পোদ্যোগ নেয়া ছ্যুয় ছুন কোয়াং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"আমরা প্রধানতঃ হাই-টেক ক্ষেত্রে গবেষণা করি। শিল্পোদ্যোগ নিতে চাইলে একটি ভালো জায়গায় বেছে নিতে হয়। প্রযুক্তি-শিল্প ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সহযোগিতা ও সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ। চীনে এমন হাই-টেক-ঘনিষ্ঠ অঞ্চল বেছে নেয়ার সময়ে চুং কোয়ান ছুন হলো প্রথম পছন্দ। তাছাড়া, আমরা সরকারের প্রবল সমর্থন পাই এবং অর্থ ক্ষেত্রের অনেক বন্ধুও চিনতে পারি।"
মিঃ ছ্যুই ছুন কোয়াংর শিল্প প্রধানতঃ বেতার তথ্য-প্রযুক্তি বা তারবিহীণ ভিডিও এডেন্টিফাই প্রযুক্তি (আর এফ আই ডি আই এন সি)গবেষণা করা। জানা গেছে এই প্রযুক্তি লোজিস্টিক্স, বাণিজ্য যোগাযোগ, গোয়েন্দা যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন ধরুন সুপারমার্কেটে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে খরিদ্দারদের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেয়ার কষ্ট আর করতে হবে না। কারণ পরিশোধ কাউনটারে এসে এক মুহূর্তে স্ক্যানারে পণ্যের দাম নিরূপন করা যায়।
ছ্যুই ছুন কোয়াংর এই প্রযুক্তি সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকারের নব-কৌশল উদ্ভাবন পুরস্কার পেয়েছে। তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"এই প্রযুক্তি সারা পৃথিবীতেও অগ্রসর, দেশীবিদেশী খদ্দেররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এই প্রযুক্তির ভবিষ্যত বাজার খুব বিরাট, এটি একটি শিল্প-বিপ্লব বলা যায়।"
আরেকজন ইতালি থেকে ফিরে আসা জাং পাও ছেং স্থাপিত শিল্পেও সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। তাঁর গবেষণায় পানি-বিশুদ্ধকরণ মেশিন পৃথিবীতে উন্নত মানে পৌঁছেছে। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন:
"আমাদের এই কোম্পানি স্থাপনের পর অল্প সময়ে কিছু গ্রাহক আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বিশেষ করে আমাদের পণ্য বিদেশী খদ্দেরদের কাছেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন আমাদের পণ্য জাপান, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।"
চুং কোয়ান ছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে ছ্যুয় ছুন কোয়াং ও জাং পাও ছেং-র মতো শিক্ষা-শেষে বিদেশ-ফেরত চীনা নাগরিক অনেক বেশী। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সম্প্রতি চুং কোয়ান ছুনে শিল্পোদ্যোক্তাদেরসংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। প্রতিদিন গড়পড়তা দু'টি শিল্পসংস্থা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত ৬০০০জনের বেশী শিক্ষা-শেষে বিদেশ-ফেরত চীনা নাগরিক ২৩০০টি শিল্পসংস্থা চুং কোয়ান ছুনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মার্কিন সিলিকন ভ্যালীসহ পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের মতো প্রগতিশীল বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গবেষণা করছে।
জানা গেছে, আরো বেশী প্রবাসে অধ্যয়নরত চীনা নাগরিকদের আকর্ষন করার জন্য চুং কোয়ান ছুন ইতিমধ্যে ওয়াশিংটন, টরন্টো,টোকিও লন্ডনইত্যাদি শহরে কার্যালয় স্থাপন করেছে। এসব কার্যালয়ে সব সময়ে কিছু অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে চুং কোয়ান ছুনের শিল্পোদ্যোগের সুবিধাজনক নীতি, শিল্পের উন্নয়ন ইত্যাদি দিক তুলে ধরা হয়।
|