v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-28 21:57:28    
চীনের বিখ্যাত অভিনেতা চাং থিয়ে লিন

cri
    চীনে এমন একজন অভিনেতা আছে তিনি প্রায়ই প্রাচীন রাজবংশের রাজার ভূমিকায় অভিনয় করেন , এই অভিনেতার নাম চাং থিয়ে লিন । চীনের অনেক দর্শক তার সৃষ্ট রাজার চরিত্র দেখে তার পরিচয় পেয়েছেন । কাজেই চীনে অনেকে চাং থিয়েন লিনকে ' রাজা ' ডাকেন । ' রাজকুমারী হুয়ান চু ' নামে এক কমেডি নাটকে চাং থিয়ে লি ছিং রাজবংশের রাজা ছিয়েন লুনের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন । তার সৃষ্ট এই রাজা আর অন্যান্য চলচ্চিত্র বা সিরিজ নাটকগুলোর রাজার মধ্যেতফাত বেশী । তার সৃষ্ট রাজার চরিত্র এক রসিক রাজা , তিনি দেখতে কড়া, তবে মন নরম , ছেলেমেয়েদের কড়া শাসন করেন না , উদার মনোভাব পোষণ করে তাদের খুব আদর করেন । তিনি নিজের মা , রাণী ও ছেলেমেয়েদের দ্বন্দ্বে সমন্বয়কারীর ভুমিকা পালন করেন এবং প্রায়ই তার আদুরে ছেলেমেয়ের সংগে খেলেন । তার সৃষ্ট এই রাজা প্রানবন্ত এবং আবেগময় , তাই দর্শকরা পছন্দ করেন । এই সিরিজ নাটক থেকে চাং থিয়ে লিন চীনে ক্রমেই বিখ্যাত হন , ' রাজকুমারী হুয়ান চু 'র পর চাং থিয়ে লিন আরো কয়েকটি কমেডি নাটকে ছিং রাজবংশের রাজার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন। তার রাজার কথাবার্তা রসিকতাপূর্ণ , দর্শকরা এই ধরনের রাজা পছন্দ করেন , তারা বলেছেন , এই ধরনের রাজা গুরুগম্ভীর নয় , দেখতে হালকা মনে হয় । রাজার চরিত্র সৃষ্টির অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে চাং থিয়ে লিন বলেছেন , কেন সিরিজ নাটকগুলোতে রাজার চরিত্র একই নয় ? এর কারণ হচ্ছে অভিনেতার জীবন ও চরিত্র একই নয় । আমি যে নাটকে রাজার ভুমিকায় অভিনয় করেছি , তা কমেডি নাটক বলে আমি নিজের ইচ্ছা অনুসারে রাজার চরিত্র সৃষ্টি করতে পারি । আমার সৃষ্ট রাজার সঙ্গে ইতিহাসের সত্যিকার রাজার স্বভাবের কোনো সম্পর্ক নেই । কমেডি নাটক এক বিনোদন , পাঠ্যবই নয় । তাই আমার সৃষ্ট রাজা অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন এক অভিভাবক মাত্র ,দর্শকদের চোখে আমি শুধু রাজার পোশাক পরা এক সাধারণ মানুষ , তাই এই রাজা দর্শকদের মনে প্রবেশ করতে পারে , এই কারণে দর্শকরা আমাকে পছন্দ করেন । কমেডি নাটকে রাজার চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দর্শকরা চান থিয়ে লিংয়ের পরিচয় পেয়েছেন । কিন্তু রাজার চরিত্র সৃষ্টির আগে চান থিয়ে লিন দীর্ঘ দিন অভিনয় চর্চা করেছেন।

    চাং থিয়ে লিনের বয়স ৪৭ বছর , চীনের হোপেই প্রদেশের থান সান শহরে তার জন্ম । তিনি পল্লী অঞ্চলে ক্ষেতের কাজ করেছেন, শহরে শ্রমিকের কাজও করেছেন । ১৯৭৮ সালে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিং চলচ্চিত্র বিদ্যালয়ে ভর্তি হন , এই বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে তিনি বেশ কয়েকটি চলচিত্র বা টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন । ১৯৮৩ সালে ' সেতুর নীচে ' নামক এক চলচিত্রে চাং থিয়ে লিন নায়ক হিসেবে এক সাহসী ও দয়ালু যুবকের চরিত্র সৃষ্টি করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন । ১৯৮৭ সালে চীনে সংস্কার অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের দরজা উন্মুক্ত হতে শুরু করে ,বিদেশের সংগে আদান প্রদানও বেড়েছে । চাং থিয়ে লিন পড়াশুনার জন্য যুক্ত রাজ্যে গিয়েছেন । যুক্ত রাজ্যের রাজকীয় চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউটে মাস্টারস ডিগ্রি পাওয়ার পর চাং থিয়ে লিন বি বি সির জন্য প্রামান্য চলচিত্র তৈরী করেন । তার তৈরী প্রামান্য চলচিত্র ' বিদেশী ব্যক্তি' যুক্ত রাজ্যের একাডেমী পুরষ্কার পেয়েছে । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে চান থিয়ে লিন হংকংয়ের শিল্পী মহলে প্রবেশ করেন । চলচ্চিত্র ও সিরিজ নাটকে অভিনয়ের সংগে সংগে তিনি নাটক রচনা করেন এবং চলচিত্র পরিচালকের কাজ করেন । চান থিয়ে লিন বলেছেন , পড়াশুনার জন্য বিদেশে যাওয়া আর পড়াশুনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে তার মনে চীনা সংস্কৃতির স্থান আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে । তিনি বলেছেন , আমি বিদেশে অনেক বছর ছিলাম । আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাস করেন , আপনি বিদেশে কি শিখেছেন ? আসলে আমি বিদেশে চীনকে উপলব্ধি করার পদ্ধতি শিখেছি , এর মানে আমি বিদেশের চিন্তা ভাবনার পদ্ধতি , বিশেষ করে পাশ্চাত্য দেশগুলোর চিন্তা-ভাবনার পদ্ধতি শিখেছি , আমি বিভিন্ন দিক থেকে চীনকে উপলব্ধি করার পদ্ধতি আয়ত্ত করে দেশে ফিরে এসেছি । আমার মনে হয় আমাকে ফিরতে হবে , আমাকে চীনের মাটিতে থেকে দেশের জন্য কিছু কাজ করতে হবে ।

    সিরিজ নাটক ' হুয়ান চু রাজকুমারী'র পর চান থিয়ে লিন আরো বেশ কয়েকটি নাটকে বৈশিষ্ট্যময় চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তিনি শুধু রাজার ভুমিকায় অভিনয় করেন নি , ' মে মাসে সুগন্ধফুল ' নামক সিরিজ নাটকে চান থিয়ে লিন সাফল্যের সংগে এক অভিজাত ব্যক্তির চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , নাটক ' জীবনের শরত্কাল ' নামক নাটকে তিনি চমত্কার নৈপুণ্য দেখিয়ে এক প্রাণবন্ত চরিত্র সৃষ্টি করেছেন ।

    চাং থিয়ে লিনের অনেক শখ আছে ,তিনি পিকিং অপেরা শুনতে পছন্দ করেন , ছবি আঁকা , হস্তলিপি চর্চা আর পুরাকীর্তি সংগ্রহ সবই তার শখ । অবসরসময়ের শখ নিজের অভিনয়ে কাজে লাগাতে পারে বলে চান থিয়ে লিন আনন্দবোধ করেন । তিনি বলেছেন , আমি ছবি আঁকতে ও হস্তলিপি চর্চা করতে পছন্দ করি , এগুলো আমার দীর্ঘকালের অভ্যাস , ধীরে ধীরে এটা আমার জীবনের এক অংশে পরিণত হয়েছে । আনন্দের ব্যাপার হলো আমার এই সব শখ প্রায়ই আমার অভিনয়ের কাজে লাগতে পারে । চান থিয়ে লিনের আরেকটি অভ্যাস হলো তিনি ছোট বেলা থেকেই স্কেচের মাধ্যমে ডাইরী লিখেন ,তার এই অভ্যাস আজ পর্যন্ত বজায় রয়েছে । তিনি চীনের অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো সব সময়ই চীনের ঐতিহ্যিক লেখার পদ্ধতি—কালি ও প্রাণীর লোম দিয়ে তৈরী কলম দিয়ে লিখেন । কিছু দিন আগে ' চান থিয়ে লিনের স্কেচ ছবি ' নামে তার এক স্কেচ ছবির এলবাম প্রকাশিত হয়েছে , এতে তার গত ত্রিশ বছরের আঁকা ১৭০টিরও বেশী স্কেচ ছবি আছে , এই সব স্কেচ ছবিতে যেমন আছে পশ্চিম চীনের ছেন তু শহরের চা হাউসের অতিথি , তেমনি আছে নিরস্ত্র নারী , যেমন আছে হংকংয়ের রাস্তার সাইনবোর্ড, তেমনি আছে জাপানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিবারের বুদ্ধদেবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাচার । এই সব স্কেচ ছবিতে চান থিয়ে লিনের অভিজ্ঞতা ও তার চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় । চান থিয়ে লিনের মতে , অস্থিরতা হচ্ছে বর্তমান সমাজের এক প্রবণতা , তিনি সব সময় নিজের মন শান্ত রাখার চেষ্টা করেন । অবসর সময়ে তিনি চা খান , পিকিং অপেরার গান শুনেন , বই পড়েন , ছবি আঁকেন , হস্তলিপি চর্চা করেন এবং স্কেচের মাধ্যমে ডাইরী লিখেন ।