v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-27 21:05:48    
লিউ সিয়ের গল্প

cri
    লিউ সিয়ে ছিলেন চীনের উত্তর-দক্ষিণ রাজত্বকালের একজন পন্ডিত এবং নন্দনতাত্ত্বিক । ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা-মা মারা যান । তাঁর বাবার রেখে যাওয়া কয়েকটা বই ছিলো তাঁর একমাত্র সম্বল । কাজেই অনাহার অর্বাহার ছিল তাঁর নিত্যসংগী , কিন্তু তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল বই পড়ার দিকে । দিনের বেলা তিনি জ্বালানী কাঠ জোটাতে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন , আর সন্ধ্যা হয়ে এলে তিনি বাড়ী ফিরে রান্না করতেন । একদিন রাত্রে বাড়ীর কাজ শেষ করে একা বসে বসে তাঁর পড়ার প্রবল ইচ্ছে হোলো । কিন্তু তার বাড়ীতে না-ছিল প্রদীপ , না মোমবাতি । কিনবারও সামর্থ্য তাঁর ছিলো না । বিনা আলোতে পড়া চলবে কী করে , তাই নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাঁর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো : তাঁর বাড়ী থেকে ৫ কিলোমিটার দূলে চিন হুয়া পাহাড়ের উপর চিন হুয়া বৌদ্ধ মন্দির । মন্দিরের   দীপগুলো দিনরাত জ্বলে । সেই আলোতেই তো পড়া চলে । এ কথা মনে হতেই লিউ সিয়ে বই নিয়ে চিন হুয়া মন্দিরে চললেন । মন্দিরে পৌঁছে তিনি সারা রাত বই পড়লেন । এবং এর পর থেকে প্রতিরাত্রেই চিন হুয়া মন্দিরে গিয়ে সেখানকার আলোয় নিবিষ্টমনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলেন ।

    চিন হুয়া মন্দিরের প্রধান আচার্য ছিলেন একজন করুনাময় বৃদ্ধ । তার নাম ছিল চেন ইউ । তিনি ছিলেন বৌদ্ধশাস্ত্রে সুপন্ডিত । তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পুঁথি ছিলো । একদিন খুব ভোরে প্রধান আচার্য শস্ত্রপাঠ শেষ করতেই বাল-সন্ন্যাসী ছুটে এসে তাঁকে জানালো : মন্দিরে বুদ্ধদেবের আবির্ভাব হয়েছে । আমি স্বচক্ষে দেখেছি --গর্ভপ্রকোষ্ঠে স্বয়ং বুদ্ধদেব দুলে দুলে শাস্ত্রপাঠ করছেন । বাল-সন্ন্যাসীর কথা শুনে আচার্যের মনে খটকা লাগলো--সেটা কি করে সম্ভব ? বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের মতো ঘটনা নিজের চোখে না দেখে তিনি বিশ্বাস করতে চাইলেন না ।

    সেইদিন সন্ধ্যায় প্রধান আচার্য চেন ইউ গর্ভপ্রকোষ্ঠে লুকিয়ে রইলেন । চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এলে । তিনি দেখলেন একটি ছোটছোটো লোক মন্দিরের দেয়াল টপকে এসে পা টিপে টিপে গর্ভপ্রকোষ্ঠের ভেতরে ঢুকে পড়লো । লোকটা সামনে এগিয়ে আসতে প্রদীপের আলোয় প্রধান আচার্য দেখলেন--লোক নয় , একটি অল্প বয়স্ক ছেলে । বস্তুত , লিউ সিয়েকে প্রধান আচার্য চিনলেন । বেশ দূর থেকে প্রতিরাত্রে লিউ সিয়ের মন্দিরে আসার কারণ-যে মন্দিরের আলোয় বই পড়া , এটা বুঝতে পেরে প্রধান আচার্য মুগ্ধ হলেন , এবং লিউ সিয়েকে নিজের শিষ্য করে নিলেন । প্রধান আচার্য তার কাছে মজুদ সমস্ত পুঁথি নিউ সিয়েকে পড়তে দিলেন ।

    দশ বছর কেটে গেলো । আচার্য চেন ইউ'র শিক্ষকতায় লিউ সিয়ে অলঙ্কারশাস্ত্র , বসশাস্ত্র প্রভৃতি অনেক কিছু আয়ত্ত করলেন । তারপর লিউ সিয়ে নিজে সাহিত্য-চর্চা শুরু করলেন । তাতে আরো পাঁচ বছর গেল । তার লেখা একটা বড় বই সম্পূর্ণ হোলো । আচার্য চেন ইউ সে বই পড়ে আনন্দে তারিফ করলেন । লিউ সিয়ে-এর জ্ঞানভান্ডার যাতে আরো সমৃদ্ধ হতে থাকে , সে জন্যে আচার্য চেন ইউ লিউ সিয়েকে পাহাড়ের গেড়ার দিকে তুঙ-চুয়াং নামে এক গ্রামে বৃদ্ধ পন্ডিত সেন ইউর কাছে যেতে বললেন । গুরুর কথা মতো লিউ সিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে । সেই বৃদ্ধ পন্ডিত সেন ইউর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন । কিন্তু সে বাড়ির দারওয়ান তার সাধাসিধে বেশভূষা দেখে তার কোনো কথা কানেই না তুলে বললো : যাও , যাও , এখানে কিছু মিলবে না , পন্ডিত আজ বাড়ী নেই ।

    পন্ডিত সেন ইউর সঙ্গে দেখা করা মুশকিল বুঝে লিউ সিয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়লেন , চিন্তা করতে লাগলেন কি করে পন্ডিতের সঙ্গে দেখা করা যায় । ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো গুরু বলেছিলেন : পন্ডিত সেন ইউর বইয়ের আসক্তি খুব বেশি । এ কথা মনে পড়তে লিউ সিয়ে সেই বৃদ্ধ পন্ডিতের সঙ্গে পরিচয় করার একটা উপায় ঠাত্তরালেন ।

    নিজের লেখা বড় বাইটা একটা কাপড়ে জড়িয়ে লিউ সিয়ে সেই গ্রামে ঢোকার পথে অপেক।ষা করতে লাগলেন । সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধ পন্ডিত সেন ইউ গাড়িতে করে বাইরে থেকে গ্রামে ফিরছিলেন ।

    সেন ইউকে অনুমানে চিনে নিয়ে তাঁর গাড়ী দেখে লিউ সিয়ে হাঁকতে শুরু করলেন : বই চাই ? বই চাই কারো ? যে বই কোথাও পাওয়া যায় না সেই বাই চাই কারো ? লিউ সিয়েকে বই-এর ফেরিওয়ালা পন্ডিত সেন ইউ গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন , বললেন : তোমার কাছে সত্যিই কি দুষপ্রাপ্য কোনো বই আছে ? থাকলে আমাকে দ্যাখাও , দামের জন্যে ভেবো না । লিউ সিয়ে খুবই বিনয়ের সঙ্গে তাঁর নিজের লেখা বইটা পন্ডিত সেন ইউর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন :হুজুর , আমার কাছে কোনো দুষপ্রাপ্য বই নেই । এটা আমার নিজের লেখা একটা বই । আপনার উপদেশ পাওয়ার আশায় আমি আপনার বাড়ীতে গিয়েছিলাম , কিন্তু আপনার দারোয়ান আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে । তখন আর-কোনো উপায় না দেখে আমি বই-এর ফেরিওয়ালা সেজে এখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি । আপনি যেন কিছু মনে করবেন না । লিউ সিয়ের কথা শুনে পন্ডিত সেন ইউর মনে হোলো : এ তো কোনো মামুলী লোক নয় । লিউ সিয়েকে গাড়িতে করে তিনি নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন ।

    বাড়ী গিয়ে পন্ডিত সেন ইউ লিউ সিয়ের বইটা পড়তে শুরু করলেন । পড়তে পড়তে তিনি তন্ময় হয়ে গেলেন , মাঝে মাঝে সশব্ধে তারিখ করে উঠতে লাগলেন । তারপর গভীর রাত পর্যন্ত দুজনের আলাপ-আলোচনা চললো । পরদিন পন্ডিত সেই ইউ সেই বই আর একবার পড়ে গভীর যত্নে তন্নতন্ন করে দেখে শুদ্ধ করে দিলেন । তারপর তিনি সাহিত্য-সমীক্ষা চালিয়ে যেতে লিউ সিয়েকে উত্সাহ দিলেন , এবং মর্যাদা করার চীনা রেওয়াজ অনুসারে নিজের হাতে বইয়ের প্রচ্ছদপটে বড় হরফে বইয়ের নাম লিখে দিলেন । লিউ সিয়ে ক্রমে বিখ্যাত হয়ে উঠলেন । তার সেই বইটি সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে শতাব্দীর পর শতাব্দী জ্ঞনীগুনীদের সমাদর পেয়ে আসছে ।