v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-27 17:13:06    
থিয়েনজিনের চিত্র শিল্প

cri

    থিয়েনজিন হচ্ছে স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রীতিনীতিতে সম্মৃদ্ধ একটি শহর।এই শহরে অনেক লোকশিল্প আর হস্তশিল্প কর্মশালা আছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে , থিয়েনজিনের চিত্রাংকন শিল্প দেশ-বিদেশে বিখ্যাত।এই চিত্রাংকন শিল্প বলতে চীনের বসন্ত উতসব উপলক্ষে লাগানো এক রকমের বিশেষ ছবি বুঝায়।অতীতে ভুতকে তাড়িয়ে দেয়া এবং পাপ দূর করার উদ্দেশে স্থানীয় লোকের নিজ নিজ বাসায় এ ধরনের ছবি লাগাতেন।তবে সময়ের পরিবর্তনের সংগে সংগে চিত্রগুলোতে কুসংস্কার এবং পশ্চাতপদ ধারনা ক্রমেই বাতিল করা হয়েছে।এখন এ ধরনের ছবি বাস্তবসম্মত এক রকমের জনপ্রিয় চিত্রাংকন শিল্প হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং তা শুভকামনা প্রকাশ করা এবং পরিবেশের শোভা বাড়ানোর ভূমিকা পালন করছে।

    এ ধরনের ছবি সম্বন্ধে বলতে গেলে থিয়েনজিনের ইয়াংলিওছিন ছবি উল্লেখ না করলে চলবে না।থিয়েনজিন শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের ইয়াংলিওছিন উপ-শহরে এই ধরনের চিত্র তৈরী করা হয় বলে নাম হয়েছে ইয়াংলিওছিন চিত্র ।কাঠ খোদাই এই চত্রি চীনের ব্যাপক উতরাংশে জনসাধারনের মধ্যে খুব প্রচলিত হয়।জানা গেছে , ইয়াংলিওছিন চিত্রের ইতিহাস তিন শতাধিক বছরের।ছিন রাজবংশের সময়পর্বে ইয়াংলিওছিন উপ-শহরে প্রায় এক শোটি চিত্রাংকন কর্মশালা ছিল। তিন শোরও বেশি লোক এ ধরনের চিত্র তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিলেন।বতর্মানে এই উচ্ছাস আর দেখা যায় না।বর্তমানে মাত্র কয়েকটি পরিবারে এই বংশানুক্রমিক চিত্রাংকন কলা সংরক্ষিত আছে।থিয়েনজিনের ইয়াংলিওছিন চিত্রাংকন ভবনে ঢুকলে আপনারা নানা ধরনের চিত্র উপভোগ করতে পারেন, তা ছাড়া, আপনারা চিত্র তৈরীর প্রণালিও দেখতে পারেন।চিত্রাংকন ভবনে নানা রকমের ছবি সাজানো হয় এবং ছবিগুলোর রং চকচকে । এই ভবনে ঢুকলে দেখা আর শেষ করা যায় না।ইয়াংলিওছিন চিত্রগুলোর মর্মবস্তু অত্যন্ত প্রগাঢ় । ছবিগুলোতে সাধারণত ইতিহাসের কাহিনী , রুপ কথা ও কিংবদন্তী, ধর্মনিরপেক্ষ জীবন, নৈসর্গিক , ফুল , পাখি , পোকা আর জন্তু প্রভৃতি সমবেত হয়। পর্যটন গাইড মিস লি জি ভবনের একটি সুক্ষ্ম ছবি নিয়ে পযর্টকদের তার বর্ণনা করছেন।

    এ দুটো ছবির নাম হলো সুন্দর মেয়েদের বসন্তকালীণ ভ্রমন।তার বৈশিষ্ট্য হলো, আলাদা-আলাদাভাবে দেখলে মনে হয় দুটো ভিন্ন ছবি, কিন্তু দুটো ছবি এক সংগে যুক্ত করা হলে আবার আরেকটি সম্পূর্ণ ছবিতে পরিণত হয়েছে। এই ছবিতে প্রধানত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, প্রাচীনকালে চীনের প্রাসাদে-থাকা মেয়েরা মার্চ মাসের একটি বিশিষ্ট দৃশ্য দেখতে নিবিষ্ট ।তাদের মুখের ভংগি থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে তারা খুবই খুশি ।জানা গেছে, ইয়াংলিওছিন ছবির ষ্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো, বিশেষ বিশেষ বস্তুর মাধ্যমে ভাগ্য প্রকাশিত হয়। যেমন, সোনালী মাছ, কচ্ছপ মানে সৌভাগ্য।ডালিমের অর্থ হলো, পরিবারে অনেক ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি আছে।এখানে উল্লেখ্য, ইয়াংলিওছিন ছবিতে যে শিশুর প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে তা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।ছবিগুলোতে আঁকা শিশুদের হাত আর পাগুলো খাট,তাদের মাথা বড় কিন্তু গলা নেই। মুখগুলো বড় আর গোল, দেহগুলো মোটাসুটা । দেখতে খুব মজার লাগে।আচ্ছা, তাহলে এত সুন্দর ছবি কিভাবে তৈরী করা হয়?

    একটি ছবি তৈরী করতে পাঁচটি জটিল প্রণালি দরকার।এ পাচটি প্রণালি হলো: নকশা-আঁকা, খোদাই করা, ছাপানো, চিত্র-আঁকা এবং সাজানো।চিত্রাংকন ভবনের চিত্রকর জেন কে জিয়েন পর্যটকদের জন্যে চিত্র তৈরী প্রদর্শন করছেন ।নমুনা চিত্রের উপর কালি লাগিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন,

    একটি সুন্দর উয়াংলিওছিন চিত্র তৈরী করলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এ সব প্রণালির দিকে অত্যন্ত মনোযোগ দিতে হবে।যে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিলে গোটা চিত্রের গুণমান নষ্ট হয়। সুতরাং এটি একটি বহুমুখী কর্মশিল্প। তিনি বললেন, বর্তমানে শুধু চীনের জনসাধারণ বসন্ত উতসবে ইয়াংলিওছিন চিত্র লাগাতে আর সংগ্রহ করতে ভালোভাসেন তাই নয়, অনেক বিদেশী বন্ধুরাও ইয়াংলিওছিন চিত্রের সংগে পরিচিত হয়েছেন।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থিয়েনজিনের ইয়াংলিওছিন চিত্র রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, শিংগাপুর প্রভৃতি দেশে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।

    সুক্ষ্ম ইয়াংলিওছিন চিত্র উপভোগ করার পর আপনি থিয়েনজিনের স্থানীয় খাবার একটু স্বাদ গ্রহণ না করলে চলবে না।থিয়েনজিন গেলে গোবুলি বাওজি না খেলে পযর্টকরা একটি বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত হবেন।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, গোবুলি বাওজি এক ধরনের বিশেষ রুটি জাতীয় খাবার যার ভিতরে মাংস আর অন্যান্য জিনিষের পুর দেওয়া হয়।থিয়েনজিন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত রেঁস্তোরা এলাকার গোবুলি বাওজি রেঁস্তোরাগুলোতে সারা দিন মানুষের ভীড় থাকে।

    রেঁস্তোরার নিকট পৌঁছার সংগে সংগে গোবুলি বাওজির সুগন্ধ পথচারীদের নাকে ঢুকে।বাষ্পসিদ্ধ এই বিশেষ খাবার দেখে মনে হয় যেন হালকা কুয়াশায় ফুল ফুটানোর আগে শরতকালীণ সোনালি ফুল।খুবই স্বসাদু লাগে।রেঁস্তোরার কর্মচারী মিস হো নিন চিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এখানে খাসির মাংস ছাড়াও , মুরগির মাংস , লীক ,ডিম প্রভৃতি ১২টি মিশ্র পদার্থের টুকরো দিয়ে বানানো গোবুলি বাওজি পাওয়া যায়। এই বিশেষ খাবারের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন,

    অতীতে থিয়েনজিনের একটি গলিতে দেশিই নামে একটি বাওজি রেঁস্তোরা ছিল।এই রেঁস্তোরার মালিকের নাম গাওগুয়েইউ। কিন্তু তার ডাক নাম ছিল ছোট কুকুর। এই মালিকের সকল আতীয়সজন ও প্রতিবেশীরা তার রেস্তাঁরায় এই বাওজি আস্বাদন করতে যেতেন।আস্তে আস্তে তার ব্যবসা ফুলে-ফেপে উঠল।তিনি মাঝেমাঝে এত ব্যস্ত হন যে তিনি এ সব অতিথীদের সংগে কথা বলার সময়ও পাননা।সুতরাং সবাই তাকে ছোট কুকুরের উদাসীনতার ডাক-নাম দিয়েছেন। গোবুলি বাওজি রেঁস্তোরার ইতিহাস শতাধিক বছরের।গোবুলি বাওজি থিয়েনজিনের তিনটি বিস্ময়কর খাবারের অন্যতম হিসেবে গণ্য। যদি আপনি আরো বেশি থিয়েনজিনের খাবার খেতে চান, তাহলে থিয়েনজিনের আরেকটি বিশেষ খাবার খাওয়া মন্দ নয়।এই খাবারের নাম হলো মাওয়া।মাওয়া এক ধরনের মচমচে মিষ্টি খাবার।সম্প্রতি থিয়েনজিনের যে কোনো জায়গায় মাওয়ার দোকান দেখা যায়্। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো, এখানের গুয়েফাশিয়াং মাওয়া সবচেয়ে খাটি এবং সুস্বাদু।

    চকলেট দিয়ে তৈরী, কালো তিল দিয়ে তৈরী, ষ্ট্রবেলি দিয়ে তৈরী ,কমলালেবু দিয়ে তৈরী , ইউক দিয়ে তৈরী ইত্যাদি ধরনের মাওয়া এখানে পাওয়া যায় । ফেরিওয়ালার আওয়াজ থেকে বুঝতে পারেন যে, এই ধরনের বিশেষ মিষ্টি খাবার বৈচিত্র্যময়।খেদে মচমচে আর সুগন্ধ । তা ছাড়া এই বিশেষ মিষ্টি খাবার কিছু দিন রাখলেও নরম হয়ে যায়।এই বিশেষ মিষ্টি খাবারের প্যাকিজও নানা ধরনের। আতীয়সজন, বন্ধু-বান্ধবীদের জন্যে এটা উপহার নয় হিসেবে মন্দ নয়।শ্রোতা বন্ধুরা, এখন থিয়েনজিন সম্বন্ধে অবশ্যই আপনাদের একটি মোটামূটি ধারণা হয়েছে।এই অকৃত্রিম শহরে আপনারা উতর চীনের জনসাধারণের জীবন আর রীতি-নীতি উপলদ্ধি করতে পেয়েছেন।