১৯৯৬ সালে কানাডার এডমোনটনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশীপে দ্বৈত দফায় দুজন কালো চুল, কালো চোখ এবং পীতবর্ণ এশীয় খেলোয়াড়রা ক্রীড়া-প্রেমী বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দর্শকরা তাঁদের স্কেটিংয়ের দ্রুত গতিবেগ, দারুণ নৈপূণ্য এবং প্রাচ্যের বিশেষ প্রদর্শনমূলক পদ্ধতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।তখন তাঁরা একটি চমত্কার ফ্রি স্কেটিং প্রদর্শন করার পরে, উচ্ছ্বসিত দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে একটানা তুমুল করতালিতে স্টেডিয়াম মুখরিত করেছে। যদিও সেবার তাঁরা শুধু পঞ্চদশ স্থান অর্জন করেছেন, কিন্তু তাঁদের প্রদর্শনী দর্শকদের গভীরভাবে মিমোহিত করেছে। ফ্রান্সের ফিগার স্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান জাগিয়া বলেছেন, এই দু'জন ক্রীড়াবিদের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা বিশ্বের শীরোপা অর্জন করবেন।এই দুজন দ্বৈত দফার খেলোয়াড় হলো চীনের শেন শুয়ে আর জাও হোং বো।
কয়েক বছর পরে, জাগিয়ার ভবিষ্যদ্বানী সত্যে পরিণত হয়।এখন তাঁরা সত্যিই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাঁরা একটানা বিশ্ব ফিগার স্কেটিংয়ের পদক অর্জন করে চলেছেন। ২০০৩ সালে বিশ্ব ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত খেলায় তাঁরা "নুটক্রেকার" মাধ্যমে আরেক বার বিশ্ব শীরোপা অর্জন করেছেন।
গৌরব আর ফুলের আকর্ষনে শেন শুয়ে আর জাও হোং বো কঠোর প্রশিক্ষণ এবং দীর্ঘকালীন অপেক্ষার দেয়াল পার হয়েছেন।১৯৯২ সালের জুন মাসের একদিনে চীনের ফিগার স্কেটিং প্রশিক্ষক ইয়াও বিং এই দুজনকে নিয়ে ফিগার স্কেটিং জুটি বেঁধেছেন। তারপর তাঁরা দ্বৈত দফার প্রশিক্ষণ শুরু করেছেন। মাত্র চার মাসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে তাঁরা স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। এর পরে এই জুটি আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদকের পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৯৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে শেন শুয়ে আর জাও হোং বো দ্বৈত দফার রৌপ্যপদক অর্জন করেছেন। বিগত একটানা তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপেও তাঁরা রৌপ্যপদক অর্জন করেছেন। তাঁদের নৈপূণ্য উন্নত করেছেন এবং উচ্চ মান অর্জন করেছেন।তাঁদের স্বর্ণপদক অর্জনের শক্তি আছে। কিন্তু পাশ্চাত্যদেশবাসী এই ইভেন্টে একাধিপত্য এবং বিচারকদের স্বজন-প্রীতির কারণে প্রতি খেলায় তাঁরা স্বর্ণপদক অর্জন করেন নি।
শেন শুয়ে আর জাও হোং বো হতাশ হননি। তাঁরা বরাবরই প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।২০০১ সাল থেকে ২০০২ সালের নতুন মৌসুমে তাঁরা "টুরানডো" প্রদর্শন করেছেন। এটি একটি প্রাচীন কাহিনী। এটা চীনের রাজকুমারী টুরানডো এবং টারটারির রাজকুমার কারাফের মধ্যে একটি মর্মস্পর্শী প্রেমের গল্প। ২০০২ সালে সল্ট লেক শহরে শীতকালীন ওলিম্পিক গেমসে শেন শুয়ে আর জাও হোং বো ফিগার স্কেটিং দ্বৈত দফায় বিশ্বের প্রথমবার শাকোভ চারবার প্রদক্ষিণের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। যদিও তাঁরা অবশেষে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন ,কিন্তু তাঁরা চীনের শীতকালীন ওলিম্পিক গেমসে দ্বৈত দফার ইতিহাসে প্রথম পদক অর্জন করেছেন। তারপরে তাঁরা জাপানের নাগানোয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপেও অংশ নিয়েছেন। সেবার তাঁরা তাঁদের ক্রীড়া অভিজ্ঞতার প্রথম বিশ্ব স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন।
২০০৩ বিশ্ব ফিগার স্কেটিং পুরস্কার প্রতিযোগিতা ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেন শুয়ে সরণপণ প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার বিখ্যাত খেলোয়াড় টোটমি আনিনা আর মারিনিনের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছেন। তাঁরা বিশ্ব শীরোপা অর্জন করেছেন। সেবার তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুপ্রাণিত করেছেন, তাঁরা সারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ২০০৩ সালের নতুন মৌসুম আগে, তাঁরা কয়েক মাসের মধ্যে নতুন "নাটক্রেকার" মহড়া করেছেন। যদিও কানাডা ধাপের প্রথম প্রদর্শনে তাঁরা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছেন। কিন্তু পরে চীন ধাপের খেলায় তাঁরা চীনের পুরস্কার প্রতিযোগিতার স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। গত বছরের ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতায়ও তাঁরা "নাটক্রেকার" মাধ্যমে চমত্কার নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন এবং বিচারকদের সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন করেছেন। প্রদর্শনকালে দর্শকরা আট বার দীর্ঘ সময় ধরে তুমুল করতালি দিয়েছেন। চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় তাঁরা প্রায় ২০ পয়ন্টের ব্যবধানে টোটমি আনিনা আর মারিনিনের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছেন এবং শীরোপা অর্জন করেছেন।
তাঁরা চীনের ফিগার স্কেটিং খেলোয়াড়। এটা তাঁদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে উত্তরনের প্রক্রিয়া।
|