জেডপাথর হচ্ছে চীনাদের অতি পছন্দনীয় রত্ন । প্রাচীনকাল থেকেই এটিকে ম্যাস্কট অথার্ত্ সৌভাগ্যের প্রতীক এবং এটির বিপদ এড়ানোর যাদুশক্তি রয়েছে বলে মনে করা হয় । আর জেডাইট হচ্ছে একধরণের সবচেয়ে দুলর্ভ ও সবচেয়ে দামী জেডপাথর । বতর্মানে জেডাইট দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরণের অলংকার ও শিল্পকর্ম চীনের বহু শিল্পকমর্সংগ্রহকারী ও পণ্যভোগীর সমাদর পাচ্ছে । কিন্তু মেকী জেডাইটের পণ্যের প্রাদুর্ভাবের দরুণ জনসাধারণকে এই দামী রত্ন চিনতে পেশাগত পরিসেবা দেয়ার জন্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে জেডাইট চিহ্নিতকরণ সংস্থা বেড়ে চলেছে ।
জেডপাথর চিহ্নিতকরণ খুবই কঠিন ব্যাপার । পেশাগত কারিগররাও কোনো কোনো সময় ভুল করতে পারেন । পেইচিংয়ের ব্যবসায়ী দু চুয়েন জেডপাথর খুবই পছন্দ করেন এবং প্রায়ই কেনেন । কিন্তু জেডপাথর নিরুপনের জ্ঞান তাঁর খুবই সীমিত । তিনি বলেছেন :
"দাম খুবই বেশী না হলে অথার্ত্ দু'তিন হাজার রেনমিনপি'র নীচে এবং পছন্দ হলে আমি কিনি । দাম খুবই বেশী হলে আমি কোনোমতেই কিনি না । আমি মনে করি , সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হলো তার মূল্য নিরুপন ।"
মিষ্টার দু'র মন:কষ্ট বোধগম্য । কারণ বাজারে জেডপাথরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তর লোক বেশী মুনাফা লাভের জন্যে নানা উপায়ে জেডপাথর জাল করে । জাল করার কৌশলও ক্রমেই আরো উন্নত হচ্ছে । সাধারণ লোকেরা তাদের জাল মোটেই ধরতে পারেন না । আর জেডপাথররাজ জেডাইট জালের তত্পরতাই তাদের সবচেয়ে বেশী ।
জেডাইট হচ্ছে একধরণের খনিজ পদার্থের সমষ্টি । সবুজ ,ফিকে হলুদ ,সাদা ,বেগুনী ,লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের জেডাইট আছে । আস্ত সবুজ জেডাইট অত্যন্ত দুলর্ভ বলে তার দাম খুবই উঁচু । বতর্মানে আন্তজার্তিক নিলাম বাজারে একটি সবুজ জেডাইটের তৈরী বালার দাম কয়েক মিলিয়ন রেনমিনপি পযর্ন্ত হতে পারে । ঠিক এই কারণেই সবুজ জেডাইট কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর ব্যাপক জালের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ।
জেডাইট জালের দুটি উপায় :জাল উপকরণ ও জাল রঙ । জাল উপকরণের রঙ সবুজ হলেও তার কাঠিন্য কম এবং ভেজাল বস্তু মেশানো । চিহ্নিতকরণের সময়ে ছুরি দিয়ে তার উপরে কেটে দেখা হয় । দাগ পড়লে এটি জাল জেডাইট । অথবা ম্যাগ্নিফাইয়ার দিয়ে দেখা হয় । ভেতরে ভেজাল বস্তু মেশানো বা বুদ্বুদ দেখলে তা জাল জেডাইট । জাল রঙ বলতে কৃত্রিম উপায়ে নিকৃষ্ট ধরণের জেডাইটের রঙকে দামী জেডাইটের রঙে পরিবতির্ত করা বোঝায় । এই ধরণের জেডাইটের যথাথর্তা নিরুপন সবচেয়ে কঠিন ।
চীনের হেন সিং মণিমুক্তা লিমিটেড কোম্পানির বিক্রয় বিভাগের ম্যাদাম লিউ ইয়েন বলেছেন , মণিমুক্তাশিল্প সাধারণত: জেডাইটকে এ , বি ও সি এই তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে ।
"এ. পণ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক জেডাইট পাথর দিয়ে তৈরী অলংকার । বি. পণ্য হচ্ছে এমন জেডাইটের তৈরী অলংকার যা অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময় ধরে শক্তিশালী এসিডে ভিজে থাকার ফলে যার আগেকার গঠন ধ্বংস হয়েছে এবং যার ভেতরের মেশানো দূষিত বস্তু ধুয়ে ফেলা হয়েছে এবং তারপর বায়ুশূন্য অবস্থায় থেকে সিরিশ দিয়ে ঘষে যার স্বচ্ছতা বাড়ানো হয়েছে এবং এভাবে যার দাম অনেক বেড়েছে । সি。পণ্যের সবুজ রং হচ্ছে কৃত্রিম । কিছু কিছু মাত্র কয়েক ডজন রেনমিনপি মূল্যের পাথর এসিডে ধোয়া , সিরিশে ঘষা ও রং করার পর অবুঝদের ভোলাবার মতো হয় , এমন কি কখনো কখনো কয়েক লক্ষ রেনমিনপি মূল্যে বিক্রী হয় ।"
চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘরের গবেষক চাং ইং চুনের বিশাধিক বছরের জেডাইট চিহ্নিত করার অভিজ্ঞতা রয়েছে । তিনি সংবাদদাতাকে জেডাইট চিহ্নিতকরণের একধরণের সাদামাটা যন্ত্রের কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন ,
"ডাইক্রোমিক আয়না হচ্ছে জেডাইট চিহ্নিত করার একধরণের যন্ত্র । পরীক্ষাকারী এটি জেডাইটের উপর রাখুন এবং তারপর এর ভেতর দিয়ে দেখুন , রং করা জেডাইট বাদামী রঙের হয়ে যাবে , আর যেটি রং করা হয় নি তার রং সবুজই থাকবে । এটি খুব সাদামাটা একধরণের যন্ত্র মাত্র । জেডাইট নিরুপনের চিহ্নিতকরণের আরও অনেক ধরণের যন্ত্র রয়েছে ।"
|