নাসি জাতির লোকসংখ্যা তিন লক্ষেরও কম ।তাদের অধিকাংশই সাত শো বছর পুরনো লি জিয়াং শহর আর আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে বাস করেন ।লি জিয়াং ইয়ুন কুই মালভুমি ও ছিনহাই তিববত মালভুমির সংযোগ-স্থলে অবস্থিত ।লি জিয়াংয়ের ইয়ু লং পর্বতের চুড়ায় সারা বছর থাকে জমাট বাঁধা বরফ ।বরফের গলিত পানি আর ঝরনার পানি মিলে যে নদীর রুপ নেয় তা পর্বতের পাদদেশের লিজিয়াং শহরের মধ্যে দিয়ে কুলকুল করে বয়ে যায় ।
নাসি জাতি নির্জন পরিবেশে ঝঞ্জাটশুন্যজীবন যাপন করতে পছন্দ করে ।সংগীত তাদের জীবনের একটি অনিবার্য অংগ ।লিজিয়াং অঞ্চলে যেটা সবচেয়ে জনপ্রিয়,সেটা হলো নাসি জাতির বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন সংগীত ।
এইসংগীত বাজিয়েছেন,শিক্ষক,ছাত্র,কৃষক আর সরকারী কর্মচারী নিয়ে গঠিত একটি বাদক দল ।অধিকাংশ যন্ত্রশিল্পী বাধর্ক্যে পর্দাপন করেছেন ।তাদের দাড়ি ও চুল ধবধবে সাদা,মুখের চমড়ার রং তামার মত টকটকে ।কপাল সময়ের দাগে পরিপুর্ণ ।প্রাচীন সংগীত বাজানোর সময়ে তাদের মুখে আছে শান্ত উদার ভাব ।তাদের গম্ভীর দৃষ্টি যেন শ্রোতাদের আনন্দধামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।
লিজিয়াংয়ের গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে গঠিত বাদক দলও অবসরকালে আংগিনায় জনপ্রিয় সংগীত বাজায় ।যেদিন সংগীত বাজানো হয় সেদিন পল্লীগ্রাম উত্সবমুখর হয়ে উঠে ।সংগীত শনতে আবাল বৃদ্ধ বনিতার ভীড় জমে ।যন্ত্রশিলপী ছাড়া নাসি জাতির অনেক কবি,লিপিকলাবিদ আর চিত্রশল্পীও আছেন ।নাসি জাতি যে শিল্পকলা এতে ভালোবাসে তার অনেক মজার ব্যাখ্যা আছে ।এই প্রসংগে লিজিয়াং বিভাগের পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক লি ইয়ং বলেছেন,
সাসি জাতির পরিবারের গৃহিনী গার্হস্থ্য্ কাজ ছাড়া চাষাবাদও করে ।গৃহকর্তা কোনো কাজ করে না ।অধিকাংশ পুরুষ বাদ্যযন্ত্র বাজায়,ছবি আঁকে অথবা লিপিকলার চর্চা করে ।কেউ কেউ এখন ফুলের চাষও করে ।
পরিচালক লি ইয়ং মেন করেন,নাসি জাতি যে শিল্পকলাকে ভালোবাসে,তার অন্যতম কারণ হলো,নাসির জাতির নাসিরা পরিশ্রমী,এটা অযৌক্তিক নয় ।অতীতে নাসি জাতির নারীই ছিলেন পারিবারিক অর্থনীতির স্তম্ভ ,তাঁরা ছেলেমেয়েদের লালনপালনের ভার গ্রহন করে রাতদিন ঘরকন্নার কাজে ব্যস্ত থাকেন ।স্ত্রী ও বোনেরা বাড়ির সমস্তকাজ সেরে নেয় বলে নাসি জাতির অনেক পুরুষের সংগীত শিখা আর সাহিত্যচর্চার অবকাশ হয়েছে ।
নাসি জাতি যে সংগীত ভালোবাসে লিজিয়াংয়ের প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যও হয়তো তার অন্যতম কারন ।নাসি জাতি সর্বদাই প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য বলে মনে করে ।নাসি জাতির মতে,প্রকৃতি মাসুষের আপন ভাই ।
লিজিয়াং শহরের অধিবাসীরা নদীর দু পারে থাকেন ।তাঁরা প্রাচীন কাল থেকেই নির্মল পানি সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেন ।তাঁরা পানি দুষিত করার তত্পরতা সহ্য করতে পারেন না ।লিজিয়াং শহরের নাগরিক মুজেনরং বলেছেন,
আমাদের নদীর পানি সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে ।নদীতে ময়লা পানি ঢেলে দেয়া বা আবর্জনা ফেলে দেয়া চলবে না ।তবে নদীতে শাকসবজি ধোয়া যায়,পানি দুষিতে করার তত্পরতা ঠেকানো আমাদের সকলের দায়িত্ব ।কারন এটা আমাদের প্রাচীন শহরের জলসন্পদের সংগে সন্পর্কিত ।
পানি সংরক্ষণ ছাড়া নাসি জাতির বন্যপশু আর বৃক্ষ রক্ষার রেওয়াজও চলে আসছে যুগ যুগ ধরে ।লিজিয়াং অঞ্চলে বন্য পশু শিকার করা ও গাছ কেটে জমি তৈরী করা একেবারে নিষিদ্ধ ।প্রতিটি গ্রামের পঞ্চায়েত বন্যপশু আর বৃক্ষ রক্ষার দায়িত্ব পালন করে ।কেউ নিয়ম লংঘন করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে ।
দীর্ঘকালীন প্রচেষ্টার ফলে নাসি জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের চমত্কার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে ।এখন লিজিয়াং অঞ্চলে বনানীর অনুপাত প্রায় শতকরা তেপ্পান্ন দশমিক সাত ভাগ ।একটি পরিসংখ্যা অনুযায়ী ইয়ুন নান প্রদেশের শতকরা তিরিশ ভাগ বন্যপশু অর্থাত্ ৮৩ প্রজাতির বন্যপশু এবং ইয়ুন নান প্রদেশের শতকরা সাঁয়ত্রিশ দশমিক ছয় ভাগ পাখি অর্থাত্ত দুশো নববই প্রজাতির পাখি লিজিয়াং অঞ্চলে দেখা যায় ।
নাসি জাতি যে অন্তরংগ পরিবেশে প্রকৃতির সংগে বসবাস করে,ত শিল্পকর্মেও প্রতিফলিত হয়েছে ।নাসিজাতির কথাশিল্পী ও সুরকরদের রচিত অনেক সংগীতে প্রকৃতির বন্দনা করা হয়েছে এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ব্যক্ত করা হয়েছে ।এই সব সংগীতের সরল রাগ-রাগিনা প্রকৃতির সংগে মানুষের নিবিড় সম্বন্ধের রোমান্টিক রিংগন আলোয় দীপ্যমান ।
|