v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-21 14:32:55    
চীনের বিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী ও পরিচালক কুছানওয়ে

cri
        কুছানওয়ে হচ্ছেন চীনের চলচ্চিত্র মহলের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি , তিনি চীনের শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পী বলে পরিচিত । সম্প্রতি তার পরিচালিত ' ময়ুর ' নামক একটি ছায়াছবি চীনের দর্শকদের সমাদর পেয়েছে এবং জার্মানের বার্লিং চলচ্চিত্র উত্সবে রুপার ভালুক পুরস্কার পেয়েছে । কেউ কেউ মন্তব্য করে বলেছেন , এই ছবিকে মানুষের মনোজগতের একটি মহাকাব্য বলা যায় । ছবিতে গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে চীনের এক সাধারণ পরিবারের তিনটি সন্তানের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । বড় মেয়ের মনে সবসময় বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ও আকাংখা আছে , আশেপাশের লোকদের চোখে মেয়েটি একজন অদ্ভুত মানুষ । তিনি এই সব অবাক ও অবুঝ মানুষের পরিহাসের ভেতর দিয়ে বড় হয়েছেন । তার ছোট দু'ভাইয়ের চিন্তা-ভাবনা সরল , তিনি সকলের সঙ্গে সদব্যবহার করেন , কিন্তু প্রায়ই অন্য লোকের পরিহাসের শিকার হন । তার ছোট ভাই কম কথা বলেন , তিনি আশা করেন তার সহপাঠীরা তাকে প্রয়োজনীয় মর্যাদা দেবেন । এই সাধারণ পরিবারের ভাগ্য চীনের চল্লিশোর্ধ সয়সীদের মাঝে সমবেদনা জাগিয়ে তুলেছে । সেই আমলে সাধারণ চীনা নাগরিকদের জীবন স্বচ্ছল ছিল না , তারা এই ছবিটির এই পরিবারের মতো নিজেরা টমেটো সস তৈরী করেন এবং কয়লার গুড়া দিয়ে জ্বালানী হিসেবে কয়লার বল তৈরী করেন । দর্শকদের মধ্যে অনেকেরই চলচ্চিত্রের চরিত্রের কাহিনীর মতো অভিজ্ঞতা আছে । কুছানওয়ে বলেছেন , এই ছবিতে তার নিজের জীবন অভিজ্ঞতা আছে , ছবির চরিত্রগুলো যেন তার পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশী । তিনি বলেছেন , আমি ' ময়ুর ' নামে ছবির তিনটে ছেলেমেয়ের একই যুগের লোক , আমি সাধারণ পরিবারের ছেলে , তাই এই ধরনের সাদাসিদা ব্যক্তি পছন্দ করি , এই ধরণের সাধারণ পরিবারের জীবনের ছবি পরিচালনার সময় আমি একটু কষ্ট বোধ করি , কিন্তু এই ধরনের পরিবারে উষ্ণতার অভাব নেই , আমি চীনের সাধারণ নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে এই ছবি পরিচালনা করেছি ।

    কুছানওয়ের বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশী । পশ্চিম চীনের সিআন শহরে তার জন্ম । তার বাবা ও মা দুজনই শিক্ষক । কুছানওয়ে ছোট বেলা থেকেই ছবি আকঁতে পছন্দ করেন , তার স্বপ্ন ছিল একজন চিত্রশিল্পী হওয়া । ১৯৭৮ সালে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিং চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন ,১৯৮৪ সাল থেকে কুছানওয়ে আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন । তিনি চীনের খ্যাতনামা পরিচালক চান ই মোউ ও ছেন খাই কের সঙ্গে সহযোগিতা করে ' ছোকরা সর্দার ' , ' লাল সরগম ' , ' যেতে যেতে গান ' , ' লানলিন রাজা ', ' রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলো ' , ' কুইচি লাই লা ' ও ' রাজার উপপত্নী বিদ্যা ' প্রভৃতি ছবি তৈরী করেছেন । কুছানওয়েকে চীনের শ্রেষ্ঠ ফোটোগ্রাফার হিসেবে গণ্য করা হয় , তিনি গোটা পৃথিবীতে শতাব্দীর এক শজন শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পীর একজন নির্বাচিত হয়েছেন । ১৯৯৩ সালে ছায়াছবি ' রাজার উপপত্নী বিদ্যায়' ৪৬তম কাইন্স চলচ্চিত্র উত্সবে সোনার পাল্কি পুরষ্কার জয় করেছে , একই সময় কুছানওয়ে শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন । এর পর কুছানওয়ে যুক্ত রাষ্ট্রের হলিউডে পাঁচ বছর কাজ করেন , সেখানে তিনি তিনটে মার্কিন ছবি ও তিনটে চীনা ছবি তৈরী করেন । তার প্রথম মার্কিন ছবি ' জিন্জার ব্রেড ম্যান '-এ যুক্তরাষ্ট্রের একজন ন্যায়পরায়ন উকিলের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে , তার আরেকটি মার্কিন ছবি ' উশৃঙ্খল হৈ চৈ ' এক প্রেমের ছবি । কুছানওয়ে বলেছেন , বিভিন্ন ধরনের ছবি বানানোর জন্যই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন । তার মতে গোটা পৃথিবীর নাগরিকদের অনুভুতি একই । ভালো মার্কিন ছবি চীনারা পছন্দ করেন , চীনের ভালো ছবি মার্কিনীরাও পছন্দ করেন । তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কিছু শিখেছেন এবং মার্কিন সহকর্মীদের সঙ্গে সানন্দে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন । পাঁচ বছর পর তিনি আবার চীনে ফিরে এসেছেন ।

    কুছানওয়ে নিজের কাজ সব সময় সুসম্পন্ন করার চেষ্টা করেন । ছবি তোলার কাজ নিজের ছেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ । তিনি বলেছেন , ছায়াছবি তার পক্ষে শুধু পেশা নয় , ছবি বানানো ইতিমধ্যে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে । তিনি ছবি তোলার পরিবেশ পছন্দ করেন , তিনি বলেছেন , ছায়াছবির মূল্য পুরষ্কার জয় করা নয় ,আমার মনে হয় যদি কয়েক বছর পরও দর্শকরা একটি ছবির কথা উল্লেখ করেন এবং আরেক বার উপভোগ করতে চান , তাহলে এই ছবি ভালো ছবি , এই ধরনের ছবি তৈরী করা খুব কঠিন ব্যাপার , আমি তার জন্য চেষ্টা করতে আগ্রহী ।

    কুছানওয়ে একজন লাজুক লোক , তিনি কম কথা বলেন । রাস্তায় কোনো দর্শক তাকে চিনতে পারলে তিনি সংকোচ বোধ করেন । তার পরিচালিত কাহিনী ছবি ' ময়ুর '-এর মুক্তির পর , বিশেষ করে পুরষ্কার পাওয়ার পর দর্শকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে । কুছানওয়ে এক সময় প্রচারমাধ্যমগুলোর আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হন , তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন । কিন্তু কুছানওয়ে এই ধরনের পরিবেশ পছন্দ করেন না , তিনি বলেছেন , যদিও শুটিংয়ের সময় তিনি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন না , কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে তার ইচ্ছা খুব সীমিত ।

কুছানওয়ের স্ত্রী চীনের বিখ্যাত অভিনেত্রী চিয়াংউনলি , তিনি চীনের ছায়াছবি ও টেলিভিশন নাটকগুলোতে নানা ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । দশ বছর আগে চিয়াংউনলির পরিচয় দেবার সময় লোকেরা বলতেন , তিনি কুছানওয়ের স্ত্রী , কিন্তু এখন কুছানওয়ের পরিচয় দেওয়ার সময় লোকেরা বলেন ,তিনি চিয়ানউনলির স্বামী , তার জন্য কুছানওয়ে আনন্দবোধ করেন । ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্বন্ধে কুছানওয়ে বলেছেন , ছবি নির্মান ও ছবি পরিচালনা করা এই দুটি কাজই আমি পছন্দ করি , এই দুটি কাজ করার প্রক্রিয়ায় আমি আনন্দ পাই , ভবিষ্যতে আমি দর্শকদের জন্য আরো বেশী ছায়াছবি নির্মাণ বা পরিচালনার প্রয়াস চালাবো ।