সিয়োংনুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানার জন্য বহু সংখ্যক লোককে সেনাবাহিনীতে ভতি করা হয় অথবা কায়িক শ্রমদান করতে বাধ্য করা হয়। তার ফলে কৃষকেরা প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েন। যুদ্ধের সময়ে প্রচুর পরিমাণে প্রাপ্ত লুন্ঠিত-দ্রব্য অথবা ব্যবসায়িদের পণ্যবিনিময় দ্বারি প্রাপ্ত প্রচুর সম্পদ থেকে কৃষকেরা কোন ভাগ পেতেন না। এই সব দ্রব্য এবং সম্পদ অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যক্তি, রাজকর্মচারী, ভূস্বামী এবং ব্যবসায়ীদের হস্তগত হত এবং তা দিয়ে এই সক ব্যক্তিরা কৃষকদের জমি থেকে অধিকারচ্যুত করার কাজে ব্যবহার করত।
গ্রামীণ আর্থনীতি ধ্বংস হবার ফলে পূর্ব-হান রাজবংশের পক্ষে সামন্তরাজ্য-গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। সুতরাং, দ্বিতীয় খৃষ্টাব্দের গুরুতে পূর্ব-হান কর্তৃক পরাজিত পশ্চিমের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য এবং উপজাতিসমূহ অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কানসু এবং ছিংহাই প্রদেশের পর্বতের পাদদেশে বসবাসকারী ছিয়াং নামে যাযাবর জাতির লোকেরা সর্বপ্রথম বিদ্রোহ শুরু করে। তারা পশ্চিম অঞ্চলে যাবার কানসু সংযোগ পথ অবরোধ করে। অচিরেই পূর্ব-হান রাজবংশ সংকটের সম্মুখীন হঙ। ছিয়াংদের বশীভূ করা হয় বটে তবে সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এর ফলে লোকেদের অস্থার সঙ্গীন হয়ে ওঠে এবং তারা দরিদ্রাবস্থায় পতিত হয়। এই যুদ্ধের ফলে যে দুঃস্থ অবস্থার সৃষ্টি হয় পূর্ব হান তা কাটিয়ে উঠতে পারল না। আরও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে। পূর্ব হান রাজবংশ পতনের মুখে যেতে থাকে।
খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর শেষার্ধে রাজপরিবারভুক্ত মহিলাদের আত্নীয়েরা এবং রাজপ্রাসাদের খোজা-পুরুষেরা সত্যিকারের ক্ষমতা সম্তগত করে বিভিন্ন ঘোঁট পাকায়। তাদের মধ্যে সরকারী ক্ষমতা দখল করার জন্য সংগ্রাম খুব তীব্র হয়ে ওঠে। তারা প্রকাশ্যে ঘুষ নিতে থাকে ও তহবিল তছরুপে লিপ্ত হয় এবং আইন ভ্রষ্ট করে। তারা দরিদ্রদের শোষণ করতে থাকে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক শিবিরভুক্ত ধনী সদস্যদের কাছ থেকে বলপ্রয়োগে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আদায় করে। তারা শুধু রাজকোষের অর্থই চুরি করত না, ভ্রমণকারীদের অর্থও লুন্ঠন করত। তারা বহু দক্ষ এবং গুণূব্যক্তিদের সরকারী পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এই সবের ফলে ক্ষমতাসীন শ্রেণীর মধ্যে সংগ্রাম খুব তীব্র আকার ধারণ করে।
অভিজাত পরিবারের ব্যক্তি এবং রাজকর্মচারীরা, বিশেষ করে নিম্ন-পদা-ধিকারী কর্মচারীরা এব রাজকীয় বিদ্যায়তনের ছাত্রেরা খোজা-পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত হতেন। এই সকল ব্যক্তিরা তাদের সকলের শক্রর বিরোধিতা করার জন্য মিলিত হয়ে একটি রাজনৈতিক সংঘ গঠন করেন। কথিত আছে যে ছাত্রেরা "উচ্চ রাজকর্মচারীদের এবং রাজমন্ত্রীদের সমালোচনায় লিপ্ত হন"। তাঁরা খোজা-পুরুষদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন এবং কয়েক হাজার ছাত্রদের সংগঠিত করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং রাজপ্রাসাদে গিয়ে সম্রাটের জানান।এই সংগ্রাম হয় ক্ষণসন্থায়ী। কারণ, খোজা-পুরুষরা প্রবল দমন-নীতির আশ্রয় নেয়। শত শত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় এবং হাজার হাজার ব্যক্তি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।
|