v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-20 10:38:32    
সাও লিন মঠের গল্প

cri
    সাও লিন মঠ বা বৌদ্ধবিহার মধ্য চীনের হো নান প্রদেশের সং সান জেলায় আবস্থিত , আর চীনের বৌদ্ধতীর্থগুলোর অন্যতম । এখানেই পৃথিবী বিখ্যাত চীনা কুংফু বা উশু অর্থাত্ সম্মুখযুদ্ধের ক্রীড়া-কসরতের উদ্ভব হয়েছে বলে সাও লিন মঠের একজন বৌদ্ধশ্রমণ বা সন্নাসীর গল্প বলছি ।

    ওয়েন চেই নামে এক সন্নাসীর ছিলো আসাধারণ দৈহিক শক্তি । তার একপাটি জুতোর মধ্যে তিন কিলোগ্রাম ওজনের কোনো শুয়োরের বাচ্চাকে অনায়াশে শুইয়ে রাখা যেত বলে সবাই তাকে "তা সেই চেন" নামে ডাকতো । "তা সেই চেন" মানে মস্ত পাওয়ালা সন্নাসী । সাও লিন মঠে তার কাজ ছিল রান্না করা । সাও লিন মঠে সমস্ত সন্নাসীকেই সম্মুখযুদ্ধের ক্রীড়াকসরত আনুশীলন করতে হতো । কিন্তু রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকতে হোতো বলে ওয়েন চেই অনুশীলনের সময় পেতো না । একদিন সে দেখলো , রান্নাঘরের কাছেই আছে বেশ বড় একটা ঘন্টা । ঘন্টাটার ওজন চার শো কিলোগ্রাম । সে ঠিককরলো , রোজ তিনবার খাবার আগে আর পরে এই ঘন্টাটা নিয়েই সে শক্তিচর্চা করবে । প্রথম তো ঘন্টাটা নাড়ার শক্তিই তার হোলো না , তোলা তো দূরের কথা । কিন্তু সে ক্ষান্ত হলো না । তিন বছর ক্রমাগত অত্যাম করে চলার পর সে ঘন্টাটা শুধু তুলতেই পারতো না , ঘন্টাটা বয়ে নিয়ে মুখের ভাব নির্বিকার রেখেই শাওলিন মঠ , তিনবার প্রদক্ষিণ করতে পারতো । একবার শাওলিন মঠে সম্মুখযুদ্ধের ক্রীড়া-কসরতের প্রতিযোগিতায় ওয়েন চেই ঘন্টাটা তুলে যে সব কসরত দেখিয়েছিল তাতে সবাই প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠেছিলো , আর তার এই কসরতের নাম দেওয়া হয়েছিল "চিন কু জা কুং ফু" ।

    এক বছর গ্রীষ্মকালে বন্যায় চারদিকের পথঘাট ভেসে গিয়েছিল । বণিকরা শাওলিন মধ্যে নিয়মিত জিনিসপত্র পাঠাতে পারছিলো না । শাওলিন মঠে লবনের অভাব দেখা দিয়েছিল । মঠের প্রধান মোহান্ত ওয়েন চেইকে দেড়শো কিলোগ্রাম গম দিয়ে বললেন এই গমের বদলে সে যেন হেং সেই বাজার থেকে লবন নিয়ে আসে । প্রধান মোহান্তের নির্দেশ অনুসারে ওয়েন চেই দেড় শো কিলোগ্রাম গম গাধার পিঠে চাপিয়ে হাটের দিকে চলতে লাগল । কিছুদূর যাওয়ার পর সে দেখতে পেলো , বেশ কিছু লোক ছুটে সেই দিকে আসছে । ওয়েন চেইকে দেখে সবাই চিত্কার করে কাকে হুঁশিয়ারী জানিয়ে বলল : " পথে ডাকাত আছে , সামনে যেয়ো না ।" ওয়েন চেই জিজ্ঞেস করলো : " কতগুলো ডাকাত?" তারা উত্তর দিল: " বোধ হয় বিশ-ত্রিশজন" । ওয়েন চেই আর কিছু না বলে সামনেই যেতে থাকলো । চলতে চলতে একটা খালের পারে এসে পৌঁছনোর পর গাধাটা আর এগুতে চাইল না । খালের ওপরের পোলটা ভালো করে দেখে ওয়েন চেই বুঝলো-বন্যায় পোলটা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে , মাত্র এক মিটারেরও কম জায়গা বাকি । দেড় শো কিলোগ্রাম গম সমেত গাধাটার পক্ষে এই ভাঙা পোর পার হওয়া খুবই কঠিন । ওয়েন চেই বিনা দ্বিধায় কাপড়ের হাতা গুটিয়ে গমের বোঝা সহ গাধাটাকে পাঁজাকোলা করে বয়ে নিয়ে সাবধানে পা ফেলে ফেলে ভাঙা পোলটা পার হয়ে গেল । ওয়েন চেই চলতে চলতে হেং সেই হাটে গিয়ে হাজির হলো । কিন্তু ডাকাতদের সঙ্গে আর তার মোকাবিলা হোলো না । আসলে ওয়েন চেইয়ের বাঘের মতো শক্তি দেখে ডাকাতরা ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ।

    লবনের দোকানে এসে ওয়েন চেই দেখলো : দোকানের দরজার সামনে দোকানের এক কর্মচারি চেঁচিয়ে বলছে : বন্যার দরুন লবনের দাম বেড়েছে । এক সের লবন কিনতে এখন দু সেরের দাম দিতে হবে । তার কথা শুনে দোকানের সামনে জড়ো হওয়া খাদ্দেররা ক্ষুব্ধ হয়ে হৈ চৈ করে উঠল । ওয়েন চেই প্রথমে গম নামিয়ে নিয়ে গাধাটাকে একটা গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধলে । তারপর ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সে যখন সেই কোকান-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলতে যাবে তখন রব উঠলো :দোকানদার আসছে । সে তাকিয়ে দেখলো :দোকানদার লোভে আনন্দে আকর্ণ হাসি হেসে বলতে শুরু করেছে : দাম না বাড়ালে আমার পোষাবে কী করে ? আমাকে সংসার চালাতে হবে তো । এর পর দোকানদার তার কর্মচারীকে লক্ষ্য করে বললো : এখন থেকে এক সের লবন কিনতে হলে আগেকার চার সেরের দাম দিতে হবে । একটা কাগজে এ কথা লিখে বাইরে লটকে দাও । দোকানদারের বচন শুনে খদ্দেররা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো ।ওয়েন চেই ভাবলো , লবনের দাম এতো বাড়লে আমার এই দেড় শো কিলোগ্রাম গমের বদলে কতটুকু লবন পাওয়া যাবে । মঠে ফিরে গিয়ে মোহান্তকেই কী বলব ? সে ভারী চিন্তায় পড়লো । চিন্তা করতে করতে তার মাথায় একটা বুদ্ধি গজালো । তাড়াতাড়ি একটা তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে দু-চোখ বুঁজে অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে দোকানদার-এর কাছে গিয়ে সে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো : দোকানদার , সবাই বলে আপনি বেজায় ভাগ্যবান , আপনাকে দেখলেই নাকি বোঝা যায় আপনি কতোখানি ভাগ্যবান । কিন্তু আমি তো চোখে দেখতে পাই না । আমাকে আপনার গাছুঁতে দেবেন ? ওয়েন চেইয়ের কথা শুনে দোকানদারের মনে খুব আত্নপ্রসাদ হোলো । সে দরাজ ভাব নিয়ে বললো : বেশ তো , ছঁয়েই দ্যাখৌ । ওয়েন চেই দোকানদারের গায়ে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলল : ঠিক , ঠিক , সত্যিই তো বেশ ভাগ্যবান মানুষ । বলতে বলতে ওয়েন চেই চোখের পলকে দোকানদারকে ক্যাঁক করে ধরে মাথার উপরে তুললো । থাবার চাপে আর ভয়ে দোকানদার ওয়েন চেই-এর মাখার উপর দুর্বলভাবে ছটফট করতে লাগলো আর চ্যাঁচাতে লাগলো : গেছি গেছি , সর্বনাশ , আমাকে ছেড়ে দাও , আমাকে ছেড়ে দাও । ওয়েন চেই দোকানদারকে আরো শক্ত করে ধরে মাটিতে আছাড় মারা উপক্রম করলো । আতংকে দোকানদার-এর দম প্রায় বন্ধ হয়ে এলো , কোনোমতে ককিয়ে ককিয়ে অনুনয় করতে লাগলো : গুরু , আমাকে মাপ করুন , আমাকে ছেড়ে দিন । ওয়েন চেই তাকে জিজ্ঞেস করলো : লবনের দাম কি বেড়েছে ? দোকানদার কাতর স্বরে বললো : না না , বাড়েনি । লবনের দাম আগের মতোই আছে । তিন পয়সায় একসের । ওয়েন চেই তখন দোকানদারকে মাথার উপর থেকে নামিয়ে মাটিতে দাঁড় করিয়ে দিলো । দোকানদার কাত্ রাতে কাত্ রাতে কর্মচারীকে বললো : দাম বাড়ানোর কাগজটা আর দোকানের সামনে লটকাবার দরকার নেই ।