গত দশ বারো বছরের মধ্যে চীনের রাজধানী পেইচিং দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে।শহরের সবর্ত্র উচু উচু অট্রালিকা উঠে দাঁড়িয়েছে।কেউ যদি এক বছর ব্যাপী পেইচিংএ অনুপস্থিত থাকেন তাহলে আবার ফিরে এই শহর দেখলে তিনি অবশ্যই অবাক হয়ে যাবেন।তিনি নিশ্চয়ই হা-হা করে শহরের দ্রুত বিকাশরের প্রশংসা করে থাকেন।তবে পেইচিং শহরের উচু উচু আধুনিক অট্রালিকাগুলোর আড়ালে লুকিয়ে-থাকা চীনের সুপ্রাচীন সংস্কৃতির চিহৃ। পেইচিং শহরের দক্ষিনাংশের লিও লি চে এমন একটি জায়গা যাতে চীনের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি পাওয়া যায়।আজকের চল না ঘরে আসি বিশেষ অনুষ্ঠানে আপনাদের সংগে একত্রে ঐতিহাসিক আমেজে পরিপূর্ণ এই সড়কে ঘুরে বেড়াতে যাবো।
৫৭ বছর বয়সী মং ডে বাও যিতি গত ১০ বছর ধরে এই সড়কের পাশেপাশি রিকশা চালান। প্রত্যেক দিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন বলে তিনি সড়ক সম্বন্ধে খুব জানেন।লিও লি ছানের ইতিহাস সম্বন্ধে তার নথপণ্যে।তিনি বললেন,
ছিং রাজবংশ সময় থেকে এই সড়কের রুপ ধরে।তখন এখানে প্রধানত রাজকীয় পরিবারের জন্য লিও লি নামে এক ধরনের টালি তৈরী করা হত। ঠিক যেমন তিনি বলেছেন, ইতিহাসে এই জায়গায় লিও লি টালি তৈরী করা হয় বলে এই সড়ক লিও লি সড়ক পরিচিত হয়।ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অথার্ত চীনের ইয়েন রাজবংশ সময়কালে প্রসাদ এখানে ভাঁটি নির্মান করত। যে টালি তৈরী করা হয় তা রাজকীয় পরিবারের জন্য সরবরাহ করা হয়।ছিং রাজবংশ সময়কালে ভাঁটির আকার আরো সম্প্রসারিত হয়।সপ্তদশ শতাব্দীতে পেইচিং শহর সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি এখানে একটি শহরের অংশে পরিণত হয়।তাই ভাঁটি শহরের বাইরে সরিয়ে দেয়া হয়।কিন্তু "লিও লি ছান" এই নাম তখন থেকে বজায় রাখা হয়েছে।তাহলে যে জায়গায় এক সময় টালি তৈরী করা হত সে জায়গা পরে কেমনভাবে একটি বিখ্যাত সংস্কৃতি সড়কে বিকশিত হয়েছে? সংশ্লিষ্ট তথ্য থেকে জানা গেছে, সপ্তদশ শতাব্দীর ছিং রাজবংশ সময়কালে এই সড়কের কাছাকাছি বেশ কয়েক জন প্রাসাদের কর্মকর্তা বসাবস করতেন।তা ছাড়া, প্রাসাদ থেকে বেশ দূর নয় বলে এই জায়গা অভিসার পদের নির্বাচনে আয়োজিত পরীক্ষায় যোগ দিতে সে সব পরীক্ষার্থীকে আর্কষণ করতো।কর্মকর্তা এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীরা বইয়ের দোকানে বেড়াতে পছন্দ করতেন।তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা এখানে বইয়ের দোকান খোলতে আসেন।পরে আস্তে আস্তে লিওলিচে পেইচিংএর সবচেয়ে বড় বই বিক্রির কেন্দ্রে পরিণত হয়।পরে বইয়ের সংগে সড়িত কাগজ, কালি এবং চিত্রাংকন ও হস্তলিপি ইত্যাদি এ সব দোকানে পাওয়া যায়।গত শতাব্দীর আশি দশকের প্রথম দিকে চীন সরকার লিওলি সড়কের উপর নতুন করে মেরামত করেছে। আগের চাইতে এখন এই সড়কের আয়তন দ্বিগুণ বেড়েছে।এখন পুরোপুরি একটি সংস্কৃতি সড়ক হয়েছে। এই সংস্কৃতি সড়ক পুর্ব আর পশ্চিম দু অংশে ভাগ করা হয়।দুটো সড়ক ৭৫০ মিটার দীর্ঘ।সড়কের দুই পাশের ঘরগুলো সবই পুরানো শৈলীর ইটের তৈরী। চীনের শৈলীর এ সব এক অথবা দু তলার স্থাপত্যের ভিতরে সুক্স ইট আর কাঠের ভাস্কর্য এবং নানা ধরনের চিত্রাংকন সাজিয়ে দেয়া হয়েছে।এতে ছিং রাজবংশের শেষ দিকে পেইচিং অঞ্চলের লোক দোকানের প্রাচীন ঐতিহ্য আর রীতিনীতি প্রতিফলিত হয়। এই সড়কের দু পাশে শতাধিক দোকান উঠে দাঁড়িয়েছে।পূর্ব সড়কে প্রধানত যত্ন পথর, চীনামাটি এবং কাঠের তৈরী জিনিস বিক্রি করা হয়।পশ্চিম সড়কের পাশে প্রধানত চিত্রাংকন এবং পুরাকীর্তি বিক্রি করা হয়। দোকানের কাচের জানালা দিয়ে ভিতরের সাজানো জিনিসপত্র ষ্পষ্টভাবে লোকের নজরে পড়ে। চীনের নানা ঐতিহাসিক সময়পূবের জিনিসপত্র এখানে না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।সে সব জিনিসপত্রের মধ্যে যেমন আছে অতি মূল্যয়ন পুরাকীর্তি তেমনি আছে পুরাকীর্তি অনুশীলের জিনিস।অবশ্যই খদ্দেররা যাতে খাঁটি আর নকল জিনিস নির্ণয় করতে পারেন সেই জন্যে দোকানীরা ষ্পষ্টভাবে জিনিসের সঠিক দাম দিয়েছেন।সুতরাং দাম দেখে বুঝা যায় কোনটি জিনিস খাঁটি আর কোনটি নকল।সুতরাং খদ্দেররা নিজেদের ইচ্ছার মতো এ সব জিনিস বেছে কিনতে পারেন।তিনি তাঁর দোকানের ইতিহাস সম্বন্ধে বর্ণনা করে বললেন,
৬৫০ বছর আগে ছিনমিগে নামে দোকানের জম্ম হয়।ইয়ান রাজবংশের চার জন বিখ্যাত চিত্রকরের অত্যতম নি ইয়েন লিন এই দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।তাঁর জীবনের শেষের দিকে তিনি সমাজ থেকে নিজেকে বিছিন্ন করে পাহাড়ে বসবাস করেন।তিনিই এই দোকানের নাম দেন এবং তাঁর সমস্ত বই এই ভবনে রেখে দেন।
তাহলে এই ছিনমিগে কেমনভাবে লিওলিছেন সড়কে স্থানান্তর করা হয়েছে? এতে একটি চীনের প্রবাদ রয়েছে।চীনের ছিং রাজবংশের ছিয়েনলন সম্রাট ছোটবেলা থেকে নিজের মা ত্যাগ করে প্রাসাদে বসবাস করেন।তিনি নার্সের দুধ খেয়ে খেয়ে বড় হন। এই নার্সের নাম চো মো মো।সম্রাট হওয়ার পর এই নার্সের কথা প্রায় সম্রাট ছিলনের মনে পড়ে।এক দিন নার্সকে প্রাসাদে ডেকে পাঠান।সম্রাট ছিয়েলন নার্সের মনের চাহিদা জানতে চান। নার্স সম্রাট ছিয়েলনকে বলেন যে তার ছেলে পড়াশুনায় মন বসে না। তাকে একটি ব্যবসার কাজ দিলে ভাল হত।সম্রাট ছিয়েলন তার ছেলেকে লিওলিছেন সড়কে একটি কাগজ এবং কলম দোকান খুলতে শুপারিস করেন।সম্রাট লিয়েলন স্বয়ন "ছিমিগের" নাম নার্সের ছেলেকে বিশেষ উপহার হিসেবে প্রদত্ত করেন।ছিমিগের বর্তমান মালিক মিষ্টার চা জি রেন ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
ঔ যুগে ছিমিগের ব্যাসা জমজমাট।দোকানের সামনে ঘোড়া বাঁধের ব্যবস্থা ছিল।যারা সিড্যানে বসে এখানে সাসেন তাদেরকে সিড্যান থেকে নামতে হন, যারা ঘোড়ায় চেপে এখানে আসেন যাদেরকে ঘোড়া থেকে নামতে হন ।তারা ছিমিগে প্রথমে ঢুকে গায়ের উর্দি খুলেন।তার পর সাদা পোশাক পরিবর্তন করে চা খেতে বসেন।চা খাওয়া শেষ করে তারা দোকানে ঘুরে ঘুরে দেখেন ।অবশেষে তারা দোকানের বাইরের অন্য জায়গায় বেড়াতে যান।
আজকের ছিমিগে নি:সন্দেহে আগের বিশেষ মযার্দা হারিয়েছে।এখন সারা লিওলি সড়কের সব দোকানের ব্যবসা জমজমাট।এখানে প্রত্যেক দিন অনেক দেশী-বিদেশী খদ্দেরের ভিড় । সুইডেন থেকে আসা ম্যাডাম মাডলি বলেছেন, তিনি দ্বিতীয় বার লিওলিছানে বেড়াতে এসেছেন।তিনি এই প্রাচীন আমেজে পরিপূর্ণ সড়ক অত্যন্ত পছন্দ করেন।
আমি এই সড়ক পছন্দ করি। এখানের পরিবেশ শান্ত।এই সড়ক চীনের প্রাচীন সংস্কৃতির একটি প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা যায় ।এখানে বেড়াতে অত্যন্ত ভাল লাগে।এখানে আমি চীনের বিভিন্ন আমলের চিত্রাংকন, হস্তলিপি এবং চায়ের সংস্কৃতি দেখতে পারি।
|