পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে অবস্থিত তাপেনছেন নামে একটি ছোট নগর প্রাচীনকালের রেশমী পথ বলে সুপরিচিত । ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে তাপেনছেন শহরের মেয়ে নামে একটি লোক সংগীত জনপ্রিয় হবার ফলে এই নগর আরও সুবিদিত হয়েছে । সবাই জানেন , তাপেনছেন শহর অসংখ্য সুন্দরী মেয়ের নিবাস। আজ এখানে বসবাসকারী কৃষক এরবুল কানও তাপেনছেন শহরের মেয়েদের জন্য সুনাম পেয়েছেন । তাহলে এই নগরের মেয়েদের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক আছে ?
তাপেনছেন শহর আসলে মাত্র একটি ছোট থানা ছিল । তা রাজধানী উরুমুচি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । শহর বড় নয় , রাস্তায় তাপেনছেনের মেয়ে নামে একটি সীমের দোকান আছে । দোকানদার এরবুল কান আন্তরিকভাবে ক্রেতাদের স্বাগত জানাচ্ছিলেন । দোকানে নানা রকম পদ্ধতিতে সিদ্ধ সীম বিক্রি করা হচ্ছিল । তার প্রকারসংখ্যা দশ -বারো । দোকানে তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম বিক্রি করা হচ্ছিল এবং পাশাপাশি তাপেনছেনের মেয়ে নামে উইগুর জাতির লোক সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছিল , ক্রেতারা এই সংগীতের তালে তালে সীম কিনছিলেন ।
সীম তাপেনছেনের লোকজ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের খাবার । এই খাবার যে তৈরী হয় , তা এই অঞ্চলের পানি , মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তাপেনছেনের সীম বড় , সুস্বাদু আর গুণগত মান উত্কৃষ্ট। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়েছে , যারা পাহাড় ও নদীর নিকটে থাকেন , তারা পাহাড় ও নদীর উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করেন । তাপেনছেনে বসবাসকারী এরবুল কান ও তার পরিবারের লোকেরা বংশপরম্পরায় সীম চাষ করেন আর সীম বিক্রি করেন । তার মনে আছে , শিশু জীবনে তিনি আর তার মা রাস্তার পাশে সীম কিনতেন। তখন তাপেনছেনে ফেরিওয়ালা বেশী ছিল , তারা সজোরে হেঁকে হেঁকে সীম বিক্রি করতো।
উইগুর জাতির লোকেরা ব্যবসা পছন্দ করেন । বড় হবার পর সীম বিক্রি করার জন্য এরবুল কান খুব সকালে উঠেন আর রাতে দেরীতে ঘুমান । তাপেনছেন ঝড়ো শহর বলেও পরিচিত । জানা গেছে , যে মৌসুমে প্রবল বাতাস আছে , সে মৌসুমে বাচ্চারা যাতে ঝড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়, তার জন্য তাদের স্কুল ব্যাগে অভিভাবকরা দুটি ইঁট ঢুকিয়ে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় , তাপেনছেনের বাতাস যে কত ভয়াবহ । এখন ওখানে চীনের বৃহত্তম বায়ু- শক্তি চালিত বিদ্যুত কারখানা স্থাপিত হয়েছে । তখন ফেরিওয়ালা হিসেবে এরবুল কান যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করতেন । তার ঠেলাগাড়ি ঝড়ে উলটে যেতো । সীম চার দিকে ছড়িয়ে পড়তো ।
গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকারের পুঁজিবিনিয়োগে বাজার নির্মিত হয়েছে । এরবুল কানের ফেরির ব্যবসা শেষ হলো । কয়েক বছরের মধ্যে এরবুল কান আ তার পরিবারের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । ছ'বছর আগে উরুমুচিতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক আর্থ-বানিজ্যিক মেলায় এরবুল কান তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করার একটি পরিকল্পনা শুরু করলেন ।
মেলায় আমি আবিস্কার করেছি , আমাদের তাপেনছেনের সীমের ট্রেড মার্কা নেই । অন্য পন্যদ্রব্যের ট্রেড মার্কা আছে । আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে তুষার পাহাড় মার্কা রেজিষ্ট্রেশন করতে উপদেশ দিয়েছেন । ফলে ২ হাজার সালে আমি নিজের তৈরী সীমকে তুষার পাহাড় মার্কা রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি ।
তখন থেকে এরবুল কান তাপেনছেনে একটি সীম প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলেছেন এবং তা বিক্রি করার জন্য তিনি উরুমুচিতে একটি দোকান স্থাপন করেছেন । কিন্তু তুষার পাহাড় মার্কা সীম তার পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনার মতো ভাল বিক্রি হতো না । তার ব্যবসা যে ব্যর্থ হয়েছে , তার মূল কারণ এই যে , পন্যের প্রক্রিয়াকরণের গুনগত মান তত ভাল নয় এবং পন্যের প্যাকিং দেখতে সুন্দর নয় ।
সেজন্য এরবুল কান সীমের পুংখানুপুংখ প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন কৌশল নিয়ন্ত্রন করতে এবং পুরানো কারখানার প্রযুক্তিগত পুনর্গঠনের কাজ শুরু করলেন ।
একদিন এরবুল কান কারখানায় কাজে ব্যস্ত ছিলেন, হঠাত্ জানালার বাইরে থেকে তাপেনছেনের মেয়ে নামে লোক সংগীত শোনা যাচ্ছিলো । তখন তার মস্তিষ্কে এমন একটি পরিকল্পনা ভেসে উঠলোঃ কেন সীমকে এই মার্কা দেয়া হবে না ?
তাপেনছেনের মেয়ে এই লোক সংগীত ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে চীনের বিখ্যাত লোক সংগীত শিল্পী ওয়াং লুও পিন স্থানীয় লোক সংগীতের ভিত্তিতে রচনা করেছিলেন । ২০০১ সালে উত্পাদনের নতুন প্রকৌশল ব্যবহারকারী তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম উরুমুচি আন্তর্জাতিক আর্থ-বানিজ্যিক মেলায় আবার দেখা দিয়েছিলো ।
এবারে তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম হুড়াহুগি করে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এই পন্য কেনার জন্য বিদেশী ব্যবসায়ীরা এরবুল কানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন । কোনো কোনো বিদেশী ব্যবসায়ী এই পন্যকে মেয়ের সীমের নাম দিয়েছেন । এখন এরবুল কানের তাপেনছেন মেয়ের সীম উরুমুচির সুপার মার্কেটে ভাল বিক্রি হচ্ছে ।
পন্যের গুনগত মান নিশ্চিত করার জন্য আমরা উন্নত মানের সীম বাছাই করে প্রক্রিয়াকরণে অটল থাকি । আমরা সাধারনতঃ কৃষকদের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরনের ভিত্তিতে পুংখানুপুংখভাবে প্রক্রিয়াকরনের কাজ করি ।
আমরা এরবুল কানের দোকানে সাক্ষাত্কার নিলাম। আমরা সময় সময় ক্রেতাদের সঙ্গে কতাবার্তা বললাম। তারা বলেছেন , এরবুল কানের সফলতাকে তার সততা থেকে আলাদা করা যায় না । তার প্রকৃতির এই সদগুণ তার পারিবারিক প্রভাব থেকে এসেছে । গ্রামবাসীদের এখনও মনে আছে যে , এরবুল কানের ছোট বেলায় তার বাবা রাস্তার পাশে ১ হাজার ইউয়ানেরও বেশি নগদ সহ একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। সেই যুগে এটা নিঃসন্দেহে এক বড় অংকের নগদ বটে । কিন্তু বাবা দ্ব্যর্থহীনভাবে মালিকের কাছে এই সব নগদ ফেরত্ পাঠিয়েছেন ।
এরবুল কানের স্ত্রী বলেছেন , তার স্বামী একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি । আরো বেশি আর আরও উত্কৃষ্ট সীম তৈরী করার জন্য তারা অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালাবেন । বর্তমানে এরবুল কান তাপেনছেনে ৫ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের ওপর ২ হাজার টন বার্ষিক উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সীম প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলেছেন ।
|