v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-07-01 16:18:17    
এরবুল কান ও তার তাপেন ছেন নগরের মেয়ে

cri
    পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে অবস্থিত তাপেনছেন নামে একটি ছোট নগর প্রাচীনকালের রেশমী পথ বলে সুপরিচিত । ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে তাপেনছেন শহরের মেয়ে নামে একটি লোক সংগীত জনপ্রিয় হবার ফলে এই নগর আরও সুবিদিত হয়েছে । সবাই জানেন , তাপেনছেন শহর অসংখ্য সুন্দরী মেয়ের নিবাস। আজ এখানে বসবাসকারী কৃষক এরবুল কানও তাপেনছেন শহরের মেয়েদের জন্য সুনাম পেয়েছেন । তাহলে এই নগরের মেয়েদের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক আছে ?

    তাপেনছেন শহর আসলে মাত্র একটি ছোট থানা ছিল । তা রাজধানী উরুমুচি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । শহর বড় নয় , রাস্তায় তাপেনছেনের মেয়ে নামে একটি সীমের দোকান আছে । দোকানদার এরবুল কান আন্তরিকভাবে ক্রেতাদের স্বাগত জানাচ্ছিলেন । দোকানে নানা রকম পদ্ধতিতে সিদ্ধ সীম বিক্রি করা হচ্ছিল । তার প্রকারসংখ্যা দশ -বারো । দোকানে তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম বিক্রি করা হচ্ছিল এবং পাশাপাশি তাপেনছেনের মেয়ে নামে উইগুর জাতির লোক সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছিল , ক্রেতারা এই সংগীতের তালে তালে সীম কিনছিলেন ।

    সীম তাপেনছেনের লোকজ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের খাবার । এই খাবার যে তৈরী হয় , তা এই অঞ্চলের পানি , মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তাপেনছেনের সীম বড় , সুস্বাদু আর গুণগত মান উত্কৃষ্ট। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়েছে , যারা পাহাড় ও নদীর নিকটে থাকেন , তারা পাহাড় ও নদীর উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করেন । তাপেনছেনে বসবাসকারী এরবুল কান ও তার পরিবারের লোকেরা বংশপরম্পরায় সীম চাষ করেন আর সীম বিক্রি করেন । তার মনে আছে , শিশু জীবনে তিনি আর তার মা রাস্তার পাশে সীম কিনতেন। তখন তাপেনছেনে ফেরিওয়ালা বেশী ছিল , তারা সজোরে হেঁকে হেঁকে সীম বিক্রি করতো।

    উইগুর জাতির লোকেরা ব্যবসা পছন্দ করেন । বড় হবার পর সীম বিক্রি করার জন্য এরবুল কান খুব সকালে উঠেন আর রাতে দেরীতে ঘুমান । তাপেনছেন ঝড়ো শহর বলেও পরিচিত । জানা গেছে , যে মৌসুমে প্রবল বাতাস আছে , সে মৌসুমে বাচ্চারা যাতে ঝড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়, তার জন্য তাদের স্কুল ব্যাগে অভিভাবকরা দুটি ইঁট ঢুকিয়ে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় , তাপেনছেনের বাতাস যে কত ভয়াবহ । এখন ওখানে চীনের বৃহত্তম বায়ু- শক্তি চালিত বিদ্যুত কারখানা স্থাপিত হয়েছে । তখন ফেরিওয়ালা হিসেবে এরবুল কান যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করতেন । তার ঠেলাগাড়ি ঝড়ে উলটে যেতো । সীম চার দিকে ছড়িয়ে পড়তো ।

    গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকারের পুঁজিবিনিয়োগে বাজার নির্মিত হয়েছে । এরবুল কানের ফেরির ব্যবসা শেষ হলো । কয়েক বছরের মধ্যে এরবুল কান আ তার পরিবারের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । ছ'বছর আগে উরুমুচিতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক আর্থ-বানিজ্যিক মেলায় এরবুল কান তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করার একটি পরিকল্পনা শুরু করলেন ।

    মেলায় আমি আবিস্কার করেছি , আমাদের তাপেনছেনের সীমের ট্রেড মার্কা নেই । অন্য পন্যদ্রব্যের ট্রেড মার্কা আছে । আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে তুষার পাহাড় মার্কা রেজিষ্ট্রেশন করতে উপদেশ দিয়েছেন । ফলে ২ হাজার সালে আমি নিজের তৈরী সীমকে তুষার পাহাড় মার্কা রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি ।

    তখন থেকে এরবুল কান তাপেনছেনে একটি সীম প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলেছেন এবং তা বিক্রি করার জন্য তিনি উরুমুচিতে একটি দোকান স্থাপন করেছেন । কিন্তু তুষার পাহাড় মার্কা সীম তার পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনার মতো ভাল বিক্রি হতো না । তার ব্যবসা যে ব্যর্থ হয়েছে , তার মূল কারণ এই যে , পন্যের প্রক্রিয়াকরণের গুনগত মান তত ভাল নয় এবং পন্যের প্যাকিং দেখতে সুন্দর নয় ।

    সেজন্য এরবুল কান সীমের পুংখানুপুংখ প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন কৌশল নিয়ন্ত্রন করতে এবং পুরানো কারখানার প্রযুক্তিগত পুনর্গঠনের কাজ শুরু করলেন ।

    একদিন এরবুল কান কারখানায় কাজে ব্যস্ত ছিলেন, হঠাত্ জানালার বাইরে থেকে তাপেনছেনের মেয়ে নামে লোক সংগীত শোনা যাচ্ছিলো । তখন তার মস্তিষ্কে এমন একটি পরিকল্পনা ভেসে উঠলোঃ কেন সীমকে এই মার্কা দেয়া হবে না ?

    তাপেনছেনের মেয়ে এই লোক সংগীত ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে চীনের বিখ্যাত লোক সংগীত শিল্পী ওয়াং লুও পিন স্থানীয় লোক সংগীতের ভিত্তিতে রচনা করেছিলেন । ২০০১ সালে উত্পাদনের নতুন প্রকৌশল ব্যবহারকারী তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম উরুমুচি আন্তর্জাতিক আর্থ-বানিজ্যিক মেলায় আবার দেখা দিয়েছিলো ।

    এবারে তাপেনছেনের মেয়ে মার্কা সীম হুড়াহুগি করে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এই পন্য কেনার জন্য বিদেশী ব্যবসায়ীরা এরবুল কানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন । কোনো কোনো বিদেশী ব্যবসায়ী এই পন্যকে মেয়ের সীমের নাম দিয়েছেন । এখন এরবুল কানের তাপেনছেন মেয়ের সীম উরুমুচির সুপার মার্কেটে ভাল বিক্রি হচ্ছে ।

    পন্যের গুনগত মান নিশ্চিত করার জন্য আমরা উন্নত মানের সীম বাছাই করে প্রক্রিয়াকরণে অটল থাকি । আমরা সাধারনতঃ কৃষকদের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরনের ভিত্তিতে পুংখানুপুংখভাবে প্রক্রিয়াকরনের কাজ করি ।

    আমরা এরবুল কানের দোকানে সাক্ষাত্কার নিলাম। আমরা সময় সময় ক্রেতাদের সঙ্গে কতাবার্তা বললাম। তারা বলেছেন , এরবুল কানের সফলতাকে তার সততা থেকে আলাদা করা যায় না । তার প্রকৃতির এই সদগুণ তার পারিবারিক প্রভাব থেকে এসেছে । গ্রামবাসীদের এখনও মনে আছে যে , এরবুল কানের ছোট বেলায় তার বাবা রাস্তার পাশে ১ হাজার ইউয়ানেরও বেশি নগদ সহ একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। সেই যুগে এটা নিঃসন্দেহে এক বড় অংকের নগদ বটে । কিন্তু বাবা দ্ব্যর্থহীনভাবে মালিকের কাছে এই সব নগদ ফেরত্ পাঠিয়েছেন ।

    এরবুল কানের স্ত্রী বলেছেন , তার স্বামী একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি । আরো বেশি আর আরও উত্কৃষ্ট সীম তৈরী করার জন্য তারা অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালাবেন । বর্তমানে এরবুল কান তাপেনছেনে ৫ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের ওপর ২ হাজার টন বার্ষিক উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সীম প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলেছেন ।