v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-27 19:21:04    
ফ্যাশন পোষাক পরা সংখ্যালঘুজাতি

cri
    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে একটি বৈদেশিক পুঁজিবিনিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাদাম হাও লি পিং দেখতে ফিটফাট আর পরিপাটি। তিনি যে তার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোষাক পরেন , তা সহকর্মী আর বন্ধু-বান্ধবের প্রশংসা পেয়েছে । দেশ-বিদেশে তিনি যেখানেই গিয়েছেন , তার অসাধারণ জামা-পোষাক বেশ কিছু লোকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে ।

    মাদাম হাও লি পিং সাধারণতঃ একটি কালো স্ক্যার্ট পরেন । মিয়াও জাতির সূচীকর্মে বানান সৌন্দর্যময় চীনের ঐতিহ্যিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কলার্ খুব আকর্ষনীয়। স্ক্যার্টের নীচের অংশে যে ঢেউয়ের মতো নক্সা দেখা যায়, তাতে তার জামা-পোষাক স্ফুর্তিপূর্ণ হয়ে উঠেছে । মাদাম হাও বলেছেন , এই পেশাগত পোষাকে সংখ্যালঘুজাতির বৈশিষ্ট্য আছে । তা আমার নিজের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ । বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও তার কোনো বাড়াবাড়ি নেই ।

    মাদাম হাও বলেছেন , ফ্যাশন কাপড়ের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিনি যে স্বজাতির পোষাক পরেন , তার আলমারিতে বেশ কয়েকটি এই ধরনের পোষাক রাখা হয় । এই সব পোষাকের উপরে দক্ষিণ চীনের মোমতুল্য পদার্থের নক্সা, বৈচিত্র্যময় তিব্বতী জাতির অলংকার আর নাসি জাতির লিখিত ভাষায় সুসজ্জিত । এই সব আধুনিক ফ্যাশন কাপড়ের ডিজাইন সরল , তবে তা অর্থপূর্ণ । সংখ্যালঘুজাতির বৈশিষ্ট্যে ভরপুর এই সব জামা পোষাকে পুরোপুরি তার ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।

    আপনি পেইচিংয়ের বানিজ্য কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ালে আবিস্কার করবেন , মাদাম হাওয়ের মতো সংখ্যালঘুজাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোষাক পরা মেয়েদের বেশি দেখতে পাওয়া যায় । তাদের উদ্দেশ্য নিজের ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুজাতির বিশিষ্ট যুগানো । তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন কি একেবারে সংখ্যালঘুজাতির স্ক্যার্ট আর রঙ্গিণ গেঞ্জি পরেন । এতে পুরোপুরি তাদের ফ্যাশনপ্রেমী স্বভাব দেখা দিয়েছে । তা ছাড়া তাদের হাতে বা গলায় যে অলংকার বা হস্তশিল্পাংকিত দ্রব্য সুসজ্জিত আছে , তাতে তাদের অদ্বিতীয় প্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে।

    শুধু পেইচিং নয় , দক্ষিণ চীনের কুয়াংচৌ আর পূর্ব চীনের শাংহাইয়েও এই অনুরুপ ফ্যাশন কাপড় দেখা যায় । বহু বছর ধরে পোষাকের ডিজাইন কর্মে নিয়োজিত মাদাম উয়ে রুন হুই মনে করেন যে , সংখ্যালঘুজাতির পোষাকের প্রচলনে একদিকে মানুষের সৌন্দর্য বিষয়ক ধারণার পরিবর্তন , অন্য দিকে সংখ্যালঘুজাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারও প্রতিফলিত হয়েছে ।

    মিয়াও জাতির মাদাম ওয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশ থেকে এসেছেন । তিনি এখন পেইচিংয়ে আরতুওয়ে নামে সংখ্যালঘুজাতির জামা-পোষাক বিক্রয়ের ব্যবসা করেন । এই মার্কার জামা পোষাকে চীনের ৫৬টি জাতি , বিশেষ করে ৫৫টি সংখ্যালঘুজাতির পোষাক সংস্কৃতির ভিত্তিতে তৈরীর কলা কৌশল, রং , ডিজাইন , কাপড় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সংস্কার চালিয়ে স্ববৈশিষ্ট্য গড়ে তোলা হয়েছে । মাদাম ওয়ে সংবাদদাতাকে বলেছেন , গত কয়েক বছরে বাজারে এই মার্কার পোষাকের বিক্রয় খুব ভাল হয়েছে ।

    এই ধরনের পোষাকে ডিজাইনের নতুন ধারণা , সংখ্যালঘুজাতির সংস্কৃতির নিবিড় রীতি-প্রথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এই পোষাকের ক্রেতা সাধারণতঃ ৩৫ থেকে পঞ্চাশাধিক বছর বয়সী কোম্পানির কর্মীরা । এই পর্যায়ের ব্যক্তিরা পোষাকের ডিজাইন আর তৈরীর কৌশলের উপর খুব গুরুত্ব দেন । তা ছাড়া অল্পবয়সীরাও এই ধরনের পোষাক খুব পছন্দ করেন । এই ধরনের পোষাক পর্যায়ের পরিচায়ক বলে তারা মনে করেন ।

    পেইচিংয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত থুচা জাতির মেয়ে আকৌ আতুওয়ে মার্কার পোষাকের একজন অনুগত ক্রেতা । তিনি মাঝে মাঝে দোকানে এসে নতুন নতুন পোষাক কিনেন । কাজের প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবহার্য পোষাক ডিজাইন করার জন্য তিনি মাদাম ওয়ে রুন হুইকে আমন্ত্রন জানান । তিনি বলেছেন , এই ধরনের পোষাক পরলে খুব আরাম লাগে । এতে স্বজাতির সংস্কৃতিও দেখা দিয়েছে ।

    মহা-নগরীতে নিছক ঐতিহ্যিক পোষাক পরলে সুবিধা হবে না । চাকরির জন্য তার কিছুটা সংস্কার করা উচিত । যেমন সকালে অফিসে যাওয়ার সময়ে পোষাকে বেশি বোতাম থাকলে অসুবিধা , তার পরিবর্তে ডিজাইনার চেইন ব্যবহার করেন । এতেও খুব ফ্যাশন হবে । সুতরাং ফ্যাশন পোষাকের উপরে সংখ্যালঘুজাতির একটু বৈশিষ্ট্য দিলে যেমন স্বজাতি , তেমনি জীবনযাত্রা আর চাকরির জন্য সুবিধা হবে ।

    আকৌ বলেছেন, পাহাড়ী গ্রাম থেকে মহা নগরীতে আসার পর তিনি স্বজাতির পোষাকের কথা খুব মনে করেন । এখন তার জন্মস্থলে বহু মেয়ে জিনস্ কাপড় আর পাশ্চাত্ত্য পোষাককে ফ্যাশন কাপড় বলে মনে করেন । তবু তারা থুচা জাতির ঐতিহ্যিক কাপড় ও পোষাক বানানের কৌশল পরিত্যাগ করেছেন । তাতে তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করেন ।

    একটি বহু জাতিক দেশ হিসেবে চীনে বিভিন্ন জাতির যার যার পোষাক তৈরীর কলা-কৌশল আর রীতি-নীতি আছে । যেমন তাই জাতির লম্বা স্ক্যার্ট , মঙ্গোলিয় জাতির লম্বা পোষাক ইত্যাদি । পোষাক এক জাতির প্রতীক এবং এক জাতির সংস্কৃতির পরিচায়ক । মাদাম ওয়ে রুন হুই মনে করেন যে , তার পোষাক কারখানায় বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতি এলাকা থেকে আগত দক্ষ দর্জি আছেন । তারা বুনন, সূচীকর্ম , রং করা প্রভৃতি কৌশলে পারদর্শী । তার মতো বেশ কিছু ডিজাইনার ফ্যাশন কাপড়ের উপরে স্বজাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নক্সা বানাতে সক্ষম । বিশেষ ধরনের সূচীকর্ম ও বস্ত্রজাত দ্রব্য সংগ্রহ করার জন্য তিনি ও তার সংগীরা প্রতি বছর সংখ্যালঘুজাতি এলাকাগুলোতে যান ।

    শ্রেষ্ঠ সূচীকর্মজাত দ্রব্য নকল ও কপি করা যায় । যার সূচীকর্ম ভাল হয়েছে , তাকে ব্যবহার না করলে তার প্রচলন হবে না । তা নিরন্তর উত্পাদন আর বিক্রি করলে তাদের উত্পাদনের কৌতুহল বেড়ে যাবে এবং তার তৈরীর কৌশলও বজায় থাকবে । আমরা ভাল ভাল কলা-কৌশল বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

    আজ মাদাম ওয়ের আতুওয়ে মার্কার পোষাক যেমন দেশের ভিতরে তেমনি বিদেশেও বিপুল পরিমানে বিক্রি হচ্ছে । সিংগাপুর , ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশে তার অনুগত ক্রেতা আছেন । মাদাম ওয়ে বলেছেন , আরো বেশি লোক চীনা জাতির পোষাকের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।