ইং পা , তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের বর্ষপঞ্জী গবেষনাগারের প্রধান । তিনি তিব্বতী বর্ষপঞ্জী গবেষনা ও নির্ধারণ করতে পছন্দ করেন । তিনি যেমন কম্পিউটারে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থা রচনা করেছেন , তেমনি এ সম্পর্কিত বহু গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন । তার সাফল্য ও পরিশ্রম থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে , একাগ্রচিত্তে কাজে নিয়োজিত থাকলেই কেবল সাফল্য পাওয়া যাবে ।
ইং পা তিব্বতী বর্ষপঞ্জী গবেষনা ও নির্ধারণ করে চলেছেন বিশাধিক বছর হয়ে গেছে । যখন তার বয়স ২০ বছরের কম ছিল , তখন তিনি তার জন্মস্থল-কান সু প্রদেশের দক্ষিণাংশে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শেষ গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাচ্ছিলেন। এক দিন তিব্বতী বর্ষপঞ্জী প্রশিক্ষণ কোর্সে আরো বেশি শিক্ষার্থী চাওয়ার হচ্ছে খবর পেয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছেন এবং কৌতুহলের আকর্ষণে এই কোর্সে ভর্তির আবেদন জানিয়েছেন । এক মাসের শিক্ষা কোর্স শেষ হল । প্রাদেশিক রাজধানীতে অবস্থিত লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইং পা'র ভর্তি হবার কথা । বর্ষপঞ্জী বিষয়ক প্রতিভা দেখে শিক্ষা কোর্সের শিক্ষক তাকে লানচৌয়ের প্রসিদ্ধ বর্ষপঞ্জীবিদ আকাসানজুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ।
লানচৌয়ে চার বছর ছাত্র জীবনে অবসর হলে ইং পা শিক্ষক আকাসানজুর কাছে গিয়ে বর্ষপঞ্জীর খুঁটিনাটী বিষয় শিখতেন । তিনি স্মরণ করে বলেছেন , শিক্ষক আকাসানজু নিঃস্বার্থভাবে আমাকে তার বর্ষপঞ্জী সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞান শিখিয়েছেন। এই সম্পর্কিত জ্ঞান ভালভাবে শিখে নেয়ার জন্য আমি শিক্ষকের বাসায় থাকতাম । তিনি আমাকে তার ছেলের মতো যত্ন করতেন। আমরা পরস্পরকে দেখাশুনা করতাম ।
শিক্ষক আকাসানজু পাহাড়ে অধ্যয়ন করতে পছন্দ করেন । তিনি মনে করেন , মানুষ ও প্রকৃতির মিলন হলেই প্রকৃতভাবে বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণের জ্ঞান আয়ত্তে আনা যায় । এক শীত শিক্ষক আকাসানজুকে একটি পাহাড়ী বনাঞ্চলে নিয়ে গেলেন । ইং পার এখনো স্পষ্ট মনে আছে যে , যখন গোটা পাহাড়ী বন সূর্যোলোকে ঝলমল করছিল, তখন তার মন হঠাত্ উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো । পরিষ্কার বায়ু , বিস্তীর্ণ বন বিশিষ্ট সেই এলাকাটিতে অবস্থানের এক মাসে তিনি প্রচুর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণ সম্পর্কিত বহু রেকর্ড রচনা করেছেন ।
তিব্বতী বর্ষপঞ্জী আর তিব্বতী চিকিত্সা তত্ত্বের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে । তিব্বতী চিকিত্সা তত্ত্ব অনুযায়ী , ঋতুর পরিবর্তনের সংগে সংগে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত চলাচলও ভিন্ন । সুতরাং তিব্বতী চিকিত্সায় তত্ত্ব তারা , মেঘ, হ্রদ ও পাখির পরিবর্তনের উপর খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। তিব্বতী জাতির রীতি-প্রথা অনুযায়ী , বর্ষপঞ্জী গবেষনা ও নির্ধারণ তিব্বতী হাসপাতালে চালাতে হয়। ওখানে বহু বর্ষপঞ্জী পন্ডিত আছেন , তারাই প্রতি বছর বর্ষপঞ্জী প্রণয়ন করেন ।
যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হলেন , তখন ইং পা পুংখানুপুংখভাবে বর্ষপঞ্জী গবেষনা ও নির্ধারণের জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন । শিক্ষক আকাসানজুর সুপারিশে তিনি তিব্বতের তিব্বতী হাসপাতালে চাকরি করেন। সেই সময়পর্বে তিনি কয়েকজন বর্ষপঞ্জী পন্ডিতের উপদেশ আর পরামর্শ পেয়েছেন । এই ক্ষেত্রে তার জ্ঞান বেড়ে গেছে । অবসর সময়ে তিনি গবেষনার মাধ্যমে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী নির্ধারণ বিষয়ক ব্যবস্থা রচনা করেছেন । এতে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী গবেষনা সংক্রান্ত আধুনিকায়নের মান অনেক উন্নত হয়েছে । এর সংগে সংগে ইং পা তিব্বতী ভাষার সফট্ ওয়্যারের ভিত্তিতে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী রচনার চেষ্টা করছেন এবং কম্পিউটারে আগের বছরগুলোর বর্ষপঞ্জী রচনার কাজ সম্পন্ন করেছেন । তিনি ও তার সহকর্মীরা যৌথভাবে খৃষ্টাব্দের শুরু থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত তিব্বতী বর্ষপঞ্জী রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন । এটা তিব্বত তত্ত্ব অধ্যয়নের জন্য মূল্যবান তথ্য যুগিয়েছে । বছরে তাদের রচিত তিব্বতী বর্ষপঞ্জী প্রকাশের কপি সংখ্যা দশ বারো লক্ষে দাঁড়িয়েছে । এগুলো বর্ষপঞ্জী তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া ভারত , নেপাল , ভূটান প্রভৃতি দেশেও বিক্রি করা হচ্ছে ।
জানা গেছে , তিব্বতী বর্ষপঞ্জী যে একটি বিজ্ঞানে পরিনত হয়েছে , তার ইতিহাস এক হাজার বছর পুরানো । তিব্বতী বর্ষপঞ্জী থেকে আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসও করা যায় , বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে পরামর্শ আর উপদেশ দেয়া যায় এবং কয়েক শো জাতের তিব্বতী বনৌষধি সংগ্রহের জ্ঞান শেখানো যায় । বলা যায় , একটি বর্ষপঞ্জীর মধ্যে বৈচিত্র্যময় বিষয়বস্তু রয়েছে ।
বর্ষপঞ্জী গবেষনাগারে আমরা জুমা নামে একজন তিব্বতী নারীর সংগে দেখা করেছি । তিনি বলেছেন , কয়েক বছর আগে আমার জন্মস্থল-রি খা জে অঞ্চলে একটি ভূকম্প হয়েছে । সৌভাগ্য এই যে , আমরা আগে থেকে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী থেকে এবারের ভূকম্প বিষয়ক পূর্বাভাস পেয়েছি । সুতরাং আমরা এই দুর্যোগের কবল থেকে রেহাই পেয়েছি ।
আজ তিব্বতী বর্ষপঞ্জী যেমন তিব্বতীদের বাসায় প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিনত হয়েছে , তেমনি আবহাওয়া বিভাগও তা আবহাওয়া পূর্বাভাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন তিব্বতের সংবাদ মাধ্যম থেকে আবহাওয়া বিভাগ আর তিব্বতী বর্ষপঞ্জী এই দুই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার করা হয় । ইং পা বলেছেন , তিব্বতী বর্ষপঞ্জীতে বৈচিত্র্যময় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মজবুত রয়েছে । এটা অধ্যয়ন , গবেষনা আর ব্যবহারের জন্য খুব উপকারী।
বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণ বরাবরই তিব্বত তত্ত্বের একটি প্রধান অংশ বলে পরিগণিত। কৃষক আর পশুপালকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে তিব্বতী বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণ আর আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিহার্য । আমার মনে হয় , তিব্বতের বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণের বিরাট অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে ।
২০০২ সালে ইং পা তিব্বতী হাসপাতালের বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নির্ধারণ গবেষনাগারের প্রধান নিযুক্ত হন । তিনি তিব্বতী বর্ষপঞ্জী রচনা বিষয়ক দায়িত্ব পালন করেন । তিনি বর্ষপঞ্জী গবেষনা আর নিধারণকে নিজের প্রানের এক অংশ হিসেবে মনে করেন । তিনি অন্যদের মর্যাদা প্রদর্শন করেন , অন্যরাও তাকে খুব শ্রদ্ধা করেন ।
|