তারখান নামে এই মঙ্গোলিয় রেস্তরাঁ পেইচিং শহরের পূর্বাংশের সিউস্যুই সড়কে অবস্থিত। এই সড়কের আশেপাশে পেইচিংস্থ বহু দেশের দুতাবাস ছড়িয়ে আছে। রেস্তরাঁর দরজার সামনে দুই মিটার উচ্চ সুলিতে পতাকা উড্ডীন। মঙ্গোলিয় জাতির ইতিহাসে ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে সুলিতে পতাকার শুধু শাদা ও কালো দুই ধরনের রঙ ছিল। কালো যুদ্ধের প্রতীক আর শাদা শান্তি পরিচায়ক। এখনকার পতাকা রংবেরঙের। এটা সুখ ও শুভ কামনার নিদর্শন। রেস্তরাঁ ঝলমলে পরাবেশ, উদ্ধীপনাময় সংগীত আর অঠরঙ্গ হাসিতে ভরপুর। তিন শো বর্গ মিটারেরও বেশি আয়তনের রেস্তরাঁ যেন একটি বড় মঙ্গোলিয় তাবির মতো। ভেতরে বিচিত্র মঙ্গোলিয় হস্তশিল্পজাত দ্রব্য ছড়িয়ে রেয়েছৈ দরজার এক পাশের দেয়ালে গরুর চামড়া দিয়ে তৈরী কুস্তি খেলার একটি কালো পোষাক টাঙ্গানো আছে। অন্য পাশে আস্তিয় পুঁথি পাঠ করার জন্য একটি ব্যবস্থা আছে। জানা গেছে, এই ব্যবস্থার অর্থ মানুষের আসন্ন সৌভাগ্যের সুকামান।
রেস্তরাঁর দেয়াল চিত্র আরো প্রানবন্ত। দেয়ালচিত্রে মঙ্গোলিয় জাতি সবচাইতে প্রিয় তিন ধরনের খেলা: তীরন্দাজ,
ঘোড়দৌড় আর কুস্তি দেখা যায়। অন্ত: মঙ্গোলিয় তৃণভূমিতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নাদামো ক্রীড়াপতিযোগিতায় এই তিনি ধরনের ক্রীড়া দফা আয়োজন করা হয়। মঙ্গোলিয় ভাষায় নাদামোর অর্থ আমোদ প্রমোদ ও খেলাধুলা। এ সব ক্রীড়া তত্পরতায় প্রাচুর্যময় ফসলের আনন্দ প্রতিফলিত হয়েছে। রেস্তরাঁর ম্যানজার জনাব উ ইট গা বলেছেন, চীন বহু সংখ্যালঘুজাতি একটি দেশ। এদের মধ্যে মঙ্গোলিয় জাতি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘুজাতি। তৃণভূমিতে বসবাসকারী মঙ্গেলিয় জাতির প্রধান খাবার গরু ও খাসির মাংস। এ সব সুসাদু খাবার অতিথিদের খেতে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। তারখান রেস্তরাঁয় খাসির মাংস একটি অসাধারন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যন্জ্ঞন। রেস্তরাঁর প্রধীন বাবুচি ফাং চেন বলেছেন, সাধারনত: একটি আস্ত ভেড়া আগুনে ঝলসে মসলা মাখায়ে পোড়ানো করা হয়। মাংস ভালভাবে ঝলসানোর পর অতিথিদের খাওয়ার জন্য বন্টন করা হয়। এই ব্যন্জ্ঞনের রান্না ও খাওয়ার পদ্ধতি পেইচিং হাঁসের রোসের মতো। এই ব্যন্জ্ঞন পক্ক হবার জন্য প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে।
রেস্তরাঁয় সুসাদু মাংস খাওয়অর সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গোলিয় বৈশিষ্ট্যের সংগীত উপভোগ করা যায়। এই ধরনের সংগীত ঘোগার মাথার মূতিওয়ালা এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে বাজানো হয়। মঙ্গোলিয় জাতি একটি পশুপালক জাতি। ঘোড়া এই জাতির গৌরব আর ঘোড়ার মাথার মূতিওয়ালা বাদযন্ত্র ঘোড়ার ভাবমূর্তি অনুসারে তৈরী করা হয়। এই প্রসংগে যন্ত্রশিল্পী চিন ছুয়াং বলেছেন, রুপকথা অনুযায়ী প্রাচীনকালে তৃণভূমিতে ছিণ একটি অল্পবয়সী পশুপালক। একদিন তার এতটি প্রিয় ছোট ঘোড়া মারা গেছে। তরুণটি প্রতিদিন তাকে মনে করে। একবার সে স্বপ্নে তাকে দেখেছে। ঘোড়াটা তাকে বলেছেন, আমার হাড় ও লেজ দিয়ে ঘোড়ার মাথার মতো একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরী করা হলে তুমি আমাকে মনে করবে না। পরে এই জাতের বাদ্যযন্ত্র মঙ্গোলিয় জাতির একমাত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাদ্যযন্ত্রে পরিনত হয়েছে।
তারখান রেস্তরাঁ পেইচিংয়ে বসবাসকারী মঙ্গোলিয়দের বাড়ি বলে অভিহিত করা হয়। যখন সাপ্তাহিক ছুটি, তখন ওখানে মঙ্গোলিয় জাতির রীতিসম্পন্ন নাচ গান পরিবেশন করা হয়। অতিথিরা ওখানে মঙ্গোলিয় জাতির অদ্বিতীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুভব করেন। মিস চুলি মঙ্গোলিয় জাতির লোক না হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘুজাতির বিশুদ্ধ আচার ব্যবহারবিশিষ্ট এই রেস্তরাঁ পছন্দ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে আমি বিশেষ এক ধরনের পরিবেশ অনুভব করেছি। তাদের নাচ গানে আমি মঙ্গোলিয় জাতির আন্তরিকতা ও মনখোলা প্রকৃতি জানতে পেরেছি। আমি যেন নিজেই মঙ্গোলিয়া তৃণভূমিতে এসেছি।
|