দক্ষিণপশ্চিম চীনের ইউন নান প্রদেশের ইউছি শহরে থুও নামে তায় জাতি অধ্যুষিত একটি গ্রাম আছে । গ্রামের প্রত্যেক লোক মৃত্পাত্র তৈরী করতে পছন্দ করেন । এমনকি মৃত্পাত্র অর্থাত মাটির পাত্র তৈরীর সংগে গ্রামের নামের উত্পত্তিও সম্পর্ক আছে । জনশ্রুতি অনুসারে , অনেক অনেক দিন আগে তায় জাতির পূর্বপরুষরা এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও উর্বব জমি দেখে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।
থুও গ্রামের পরিবেশ শান্ত সুন্দর । একটি ছোট নদী , গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে । ফলগাছ ও সবুজ বাঁশবনের মধ্যে রয়েছে একেকটি বাঁশোর ঘর । গ্রামের চারপাশের উর্বর জমিতে সবুজের সমারোহ । গ্রামটি আদৌ বড় নয় । মাত্র বিশটি পরিবার থাকে । মাঝে মাঝে দেখা যায় ,তিন পাঁচজন করে তায়জাতির মেয়েরা হাসতে হাসতে গ্রামের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন এবং রুপার ঘন্টার ঠুনঠন আওয়াজের মতো সেই হাসির রেশা রেখে চলে যাচ্ছেন।
তায় জাতির লোকেরা প্রধানত : দক্ষিণপশ্চিম চীনের ইউন নান প্রদেশে বাস করেন । তায়জাতি তিনভাগে বিভক্ত: সুই তায় , হান তায় ও হুয়া ইয়াও তায় । থুও গ্রামের অধিবাসীরা হচ্ছেন হুয়া ইয়াও তায়ের অন্তর্ভূক্ত । মেয়েরা কোমবে রঙিন ফিতা পরতে পছন্দ করেন । থুও গ্রামের অধিকাংশ মেয়েই খুবই সুন্দর ।
শোনা যায় , গ্রামের প্রত্যেক লোকই মাটির পাত্র তৈরীতে পারদর্শী । থুও গ্রাম যেমন মৃত্শিল্পের জন্যে বিখ্যাত হয়েছে ,থুও গ্রামের লোকেরাও তেমনি এই শিল্পের কল্যানে ক্রমে ক্রমে ধনী হয়ে উঠেছেন ।
থুও গ্রামের অধিবাসী তাও মিন চেন একজন সুদক্ষ মৃত্শিল্পী । তিনি শুধু তক্তা, কাঠের লাঠি ,নূড়িপাথর প্রভৃতি সহজ হাতিয়ার ব্যবহার করে পুরোপুরি হাত দিয়েই মাটির পাত্র তৈরী করে থাকেন । তার তৈরী পাত্রের কোনো নির্দিষ্ট বাঁধা ধরণ নেই । পুরোপুরি তার হাতের কেশিল , তার পছন্দ ও কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর করেই তৈরী মাটির পাত্রের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে ।
সংবাদদাতা প্রশ্ন করেছেন : "থুও অর্থাত মাটির হাঁড়ি কিভাবে তৈরী হয় ?"
উত্তরে তাও মিন চেন বলেছেন : "এই শিল্পকৌশল খুবই আলাদা ধরনের । বড় ছোট সব মৃন্ময় হাঁড়িই তৈরী করা হয় হাতে কাদার তাল পাকিয়ে । কারণ তেমন হাতিয়ার নেই "।
সংবাদদতা প্রশ্ন করেছেন : "হাতে কাদা মাটির তাল পাকানোর পরই তা পোড়ানো হয় , তাই না ?"
উত্তরে তাও মিন চেন বলেছেন : হাতে পাকানো মাটির দলা রোদে শুকানো হয় ।শুকানোর পর পোড়ানো হয় । সাধারণত : খড় বা তুষ দিয়ে পোড়ালেই চলে "।
সংবাদদাতা প্রশ্ন করেছেন : আপনারা কিভাবে পুড়িয়ে থাকেন ?
উত্তরে তাও মিন চেন বলেছেন :তারপর একটা খোলা সমতল জায়গায় হাতেগড়া মাটির দ্রব্য পোড়াই।
তাও মিন চেন কথা বলতে বলতে একটা মাটির হাতে নিয়ে তার কার্যপ্রণালী দেখাতে শুরু করলেন এবং আবেগে আয়জাতির একটা পাহাড়ী গান ধরলেন ।
তাও মিন চেনের কণ্ঠে পাহাড়ী গান শুনতে শুনতে সংবাদদতা তাকে প্রশ্ন করলেন : আপনার স্ত্রীকে আপনি কি গানের প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে গেয়ে পেয়েছেন ? তাও মিন চেন হেসে সংবাদদতাকে জানালেন যে , তার স্ত্রীকে তিনি সত্যিসত্যিই ড্রাগন পুজার সময়ে আয়োজিত গানের প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে গেয়ে পেয়েছেন ।
তাও মিন চেন তার মৃত শিল্পের সুবাদেই তার স্ত্রীকে পেয়েছেন । আর একাওর বছর বয়সী মিসেস তাও লা আই তার মৃত শিল্প নৈপুনোর জন্যই বিখ্যাত প্রবীন কারু শিল্পী হয়েছেন । তার তৈরী দুয়েকটা মাটির দ্রব্য পাওয়ার আশায় কিছু কিছু তাইওয়ান , হংকং ও ম্যাকাওবাসী হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে থুও গ্রামে এসেছিলেন । ১৯৯৯ সালের জুন মাসে ইউন্নান প্রদেশের সংস্কৃতি বিভাগ বৃদ্ধা তাও লা আইকে "জাতীয় কারুশিল্পী" খেতারে ভূষিত করে ।
বৃদ্ধা তাও লা আই সংবাদদতাকে বলেছেন ,তিনি এখন তার ছেলে ,ছেলে বৌ ও নাতির সংগে থাকেন । ছেলে ও ছেলের বৌ তাকে খুবই শদ্ধা ও যত্ন করে । খেতের কাজ ও বাড়ীর কাজ ও বাড়ীর কাজ এখন তাকে আর করতে দেয়া হয় না । কিন্তু মাটির দ্রব্য তৈরীর কাজ তিনি একদিনও বন্ধ করেন নি । তার জীবন যেন বিভিন্ন আকারের একেকটি মাটির দ্রব্যের সংগে মিশে গেছে । সংবাদদতার সংগে আলপের দিনই তিনি তার সুনিপুন হাতে কাদার তাল পাকিয়ে দুটো মাটির দ্রব্য গেড়েছেন । একটি কফি-কাপের মতো । আকার সাদাসিধে ও নিখুঁত। অপরটি হলো একটা সুন্দর চায়ের কেতিলি । টি-কেতলির গায়ে গাছের পাতার মতো দাগ । বৃদ্ধা বলেছেন , এরকম কেতলি সমপূর্ণ তৈরী হয়ে গেলে ,তার প্রতিটির দাম হবে দশ ইউয়ান । এগুলো বেচে বেচে এক বছর এক হাজার ইউয়ানেরও বেশী অর্থ উপার্জন করা যায় ।
|