সিনহুয়া সংবাদ সংস্থার সংবাদদাতা সম্প্রতি চীনের কুয়াংসি চুয়াংজাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কংছেন ইয়াও জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায় গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।
ইয়ে কুই রোং বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ীতে আসার সময়ে তার শ্বশুড় বাড়ী এত দরিদ্র ছিলো যে , রোজ শুধু পান্তাই মিলতো । তিনি জানেন না যে , তিনি কত চোখের পানি ফেলেছেন । বেশ কয়েকবার তিনি বাপের বাড়ীতে পালিয়ে গিয়েছেন । আজকের জীবনযাত্রা সম্পর্কে তিনি হাসিমুখে বলেছেন , "এখন আমাকে তাড়িয়ে দিলেও আমি চলে যাবো না ।"
ইয়ে কুই রোং হচ্ছেন কংছেন ইয়াওজাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলার হুয়াং লিন গ্রামের অধিবাসী । বিয়ের পর সবেমাত্র হুয়াংলিন গ্রামে আসার সময়ে তার শ্বশুড় বাড়ীতে শুধু যে পান্তাই মিলতো তাই নয় , বরং জ্বালানি লাকড়িও একটা বড় সমস্যা ছিলো । গ্রামের অধিবাসীরা রান্নার জন্য পাহাড়ে গিয়ে গাছ কেটে লাকড়ি যোগাড় করতেন । পাহাড়ের গাছ দ্রুত কমে যায় । অধিবাসীরা আরও দূরে গাছ কাটতে যান । পরে ৫ কিলোমিটার বাইরের গভীর পাহাড়ে গিয়েই গাছ কেটে লাকড়ি সংগ্রহ করতে হয় । ভোর ৬টায় বাড়ী থেকে বেরোন , সন্ধ্যা ৬টায় বাড়ী ফেরেন । পাহাড় নেড়া হয়েছে , গাছ নিশ্চিহ্ন হয়েছে , বন্যা খরা ইত্যাদি দুযোর্গ একটার পর একটা ঘটেছে , খাদ্য উত্পাদন কমে চলেছে । ইয়ে কুই রোং বলেছেন ,"আমি তখন সত্যিই বিবাহবিচ্ছেদ করতে চেয়েছিলাম । স্বামীই আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার বাপের বাড়ী থেকে আমার শ্বশুড় বাড়ীতে নিয়ে আসেন । তখন কত দু:খ সয়েছি , কত চোখের পানি ফেলেছি ।"
গ্রাম কমিটির পরিচালক হুয়াং কুয়াং ফা সংবাদদাতাকে বলেছেন ,লাকড়ির অভাবই হুয়াংলিন গ্রামকে সংস্কারের পথ ধরতে বাধ্য করেছে । ১৯৮৩ সালে গ্রামবাসী হুয়াং কুয়াং লিন প্রথম মিথেন গ্যাসের আধার তৈরী করেন । মিথেন গ্যাস ব্যবহার করে যেমন রান্নাবান্না করা যায় তেমনি আলোর ব্যবস্থাও করা যায় । এর উপকারিতা দেখে অনেক গ্রামবাসী তা অনুসরণ করেন । মিথেন গ্যাস দ্রুত গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে যায় ।
মিথেন গ্যাস শুধু লাকড়ি সমস্যার সমাধানই করে নি , বরং গোটা গ্রামের উন্নয়নের পথও সুগম করেছে । মিথেন গ্যাস উত্পাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে বিপুল পরিমাণ পশুর বিষ্ঠার দরকার । মিথেন গ্যাস গাঁজানোর পর ত্যাজ্য তলানি হচ্ছে ভালো জৈব সার । এই সার দিয়ে জমি উবর করা যায় । বহু গ্রামবাসী ব্যাপকাকারে শূয়োর পালন করতে শুরু করেন এবং মিথেন গ্যাসের ত্যাজ্য তলানি ব্যবহার করে জমি উবর করেন । ধীরে ধীরে গ্রামে "পশুপালন-মিথেন গ্যাস-চাষাবাদ"এই প্রাকৃতিক কৃষির ছাঁচ গড়ে ওঠে । কয়েক বছর পর হুয়াংলিন গ্রামের পাহাড় সবুজ হয়েছে এবং খাদ্য উত্পাদনও বেড়েছে ।
সংবাদদাতা হুয়াংলিন গ্রামে দেখেছেন ,গ্রামের চারদিকের পাহাড়েই সবুজের আস্তরণ পরেছে ,পাহাড়ের নীচে ফলগাছের জঙ্গল গড়ে উঠেছে ,কৃষক পরিবারগুলোর বাড়ীর সামনে আর পেছনে গাড়ীবোঝাই ও বিক্রির জন্য ফল স্তুপীকৃত রয়েছে । হুয়াং কুয়াং ফা সংবাদদাতাকে বলেছেন ,গ্রামবাসীরা জেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের পথনিদের্শে ফলগাছ রোপণ , মত্স্য চাষ ইত্যাদি প্রকল্প উন্নয়ন করতে শুরু করেছেন । তাদের আয় বেড়েছে । বতর্মানে গ্রামে "শূয়োর-মিথেন গ্যাস-ফলগাছ" ,"শূয়োর-মিথেন গ্যাস- ধান-ফলগাছ-মত্স্যচাষ" ইত্যাদি অনেক ধরণের ছাঁচ গড়ে উঠেছে । প্রাকৃতিক কৃষির কল্যানে গ্রামবাসীদের নীট আয় বেড়েছে , মাথাপিছু নীট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫০০ ইউয়ান ।
কংছেন জেলা কমিটির সম্পাদক চিয়াং হোন বলেছেন , হুয়াংলিন গ্রামের প্রাকৃতিক কৃষির সমৃদ্ধি আনয়নের পথ হচ্ছে গোটা জেলার গ্রামাঞ্চলের পরিবতর্নের একটি প্রতিচ্ছবি । এতে দুটি ভিন্ন উন্নয়ন পথের ভিন্ন ফল প্রতিফলিত হয়েছে । অতীতে শুধু খাদ্য উত্পাদন আঁকড়ে ধরতাম , ফলে হ্রদের পানি নিষ্কাশন করে মাছধরার মতো প্রকৃতির গুরুতর ক্ষতি করেছে এবং তা আবার অথর্নৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্ণিত করেছে । এখন জেলা প্রাকৃতিক কৃষি উন্নয়ন এবং অথর্নৈতিক ও প্রাকৃতিক সমন্বিত বিকাশ ত্বরান্বিত করার পথ ধরেছে । এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নের পথ ।
|