v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-14 12:12:40    
নারী চলচ্চিত্র পরিচালক সুই চিংরেই

cri
    চীনের চলচ্চিত্র জগতে সুই চিং রেইয়ের নাম সবাই জানেন । তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী , তিনি ২০-২২টি ছায়াছবি ও সিরিজ নাটকে অনেক চরিত্রেঅভিনয় করেছেন । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি দুটি ছায়াছবি পরিচালনাও করেছেন ।

    সম্প্রতি সুই চিংরেইয়ের পরিচালিত ও অভিনয় করা 'এক অজানা নারীর চিঠি ' নামে একটি ছায়াছবি চীনের বিভিন্ন স্থানে দেখানো হচ্ছে । ছবিটি অষ্ট্রিয়ার সাহিত্যিক জ্উয়িগ স্টিফ্যানের লেখা একটি গল্পের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে । পরিচালিকা সুই চিংরেই এই কাহিনীর ভিত্তিতে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে চীনের পেইচিংয়ে ঘটিত একটি প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করেছেন । এই ছায়াছবির সারমর্ম হলো, একটি কিশোরী মেয়ে অল্পবয়সে গোপনে এক সাংবাদিক ও লেখককে ভালোবাসেন । বড় হয়ে তাদের বিয়ে হয় নি , তবে সম্পর্কও ছিন্ন হয় নি । মেয়েটি পরে সাংবাদিকের একটি ছেলে জন্ম দেন , মেয়েটি একা ছেলেকে দেখাশোনা করেন । আর সাংবাদিকটি মেয়েটিকে একেবারে ভুলে গেলেন । মেয়েটি একদিনও তাকে ভুলে নি । মৃত্যুর আগে মেয়েটি সাংবাদিকের কাছে একটি লম্বা চিঠি লেখেন । এই মর্মান্তিক কাহিনীর ছবি তৈরী সম্পর্কে সুই চিংরেই বলেছেন , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি এই কাহিনী পড়েছি । এই কাহিনী পড়ে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তখন থেকে আমি শুধু এই মেয়েটিকে সহানুভুতি জানাই এবং সাংবাদিককে ঘৃণা করি । কিন্তু দশ বছর পর আমি যখন আরেকবার এই কাহিনী পড়ি , তখন আমি এই কাহিনীতে আরো অনেক কিছু দেখতে পাই , যেমন মানুষের ভাগ্য , মানুষের আত্মা আর ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিবর্তনের সামনে নারীর হালছাড়া অবস্থা ইত্যাদি । এগুলোই আমাকে এই কাহিনীকে রুপালী পর্দায় তুলে ধরার প্রেরনা শক্তি দিয়েছে । সুই চিংরেই এই ছায়াছবিতে প্রধান চরিত্রের মানস ক্রিয়া চমত্কারভাবে প্রকাশ করেছেন । এই ছবি গত বছর স্পেনের সান সেবাস্টিয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরষ্কার জয় করেছে ।

    সুই চিংরেই বলেছেন , এই ছবির কাহিনী গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের । তবে এই ধরনের প্রেমের ছবি এখনও দর্শকরা দেখতে পছন্দ করেন । ছবিটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত হওয়ার পর দর্শকদের মধ্যে অনেক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে । অনেক দর্শক এই প্রশ্ন তুলেছেনঃ একটি নারী সারা জীবন একজন পুরুষকে এতো ভালোবাসেন , তার এই নিরলস ভালোবাসার কোনো মূল্য আছে ? সুই চিংরেই এই ছবিতে সাহসের সঙ্গে প্রেম সম্বন্ধে নিজের মত প্রকাশ করেছেন । তার ধারণা , আমি হয়ত একজন পুরুষকে ভালোবাসি , কিন্তু সেই পুরুষের সঙ্গে তার কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তিনি মনে করেন প্রেমে একজন নারী যে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দের মনোভাব পোষন করেন , তা এক আনন্দের ব্যাপার । প্রেমে অপর পক্ষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার চাইতে নিজে আনন্দ বোধ করাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ ।

    সুই চিংরেইয়ের বয়স ৩০ বছর । ১৯৯৭ সালে তিনি পেইচিং চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা শেষ করে অভিনেত্রীর জীবন শুরু করেন । চীনের চলচ্চিত্র জগতে সুই চিংরেইকে খুব সুন্দর বলা যায় না । কিন্তু তার অকৃত্রিম অভিনয় শৈলী দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । ১৯৯৫ সালে সুই চিংরেই ' এক প্রেমের কাহিনী 'নামে এক সিরিজ নাটকে শহরের এক আধুনিক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন । আর পবিত্র প্রতিবিম্ব ও অকৃত্রিম অভিনয়ের জন্য তিনি দ্রুত দর্শকদের সমাদর পেয়েছেন ।

    তার পর সুই চিনরেই ছায়াছবি ' প্রেমের স্বাদ ' , ' বসন্তগামী সাবওয়ে ট্রেন ' , ' আমি তোমাকে ভালোবাসি ' , সিরিজ নাটক ' পেইচিংয়ের প্রেম কাহিনী ' , ' ফিলি বৌদ্ধদেব ' আর ' প্রেমকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যান ' –তে বৈশিষ্ট্যময় নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন ।

    চলচ্চিত্র ' এক অজানা নারীর চিঠি ' –তে সুই চিং রেই এই অজানা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন । তিনি ২০ বছর থেকে ৫০ বছর , মৃত্যু পর্যন্ত নারীটির দীর্ঘ ৩০ বছরের জীবন জীবন্তভাবে তুলে ধরেছেন । ছবিতে সুই চিংরেইকে যেমন চীনের চল্লিশ দশকের হাতাহীন ছিফাও পরতে হয় , তেমনি সিগারেট হাতে নিয়ে পুরুষকে খুশি করার চেষ্টা করতে হয় । কঠিন হলেও সুই চিংরেইয়ের অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে ।

    সুই চিংরেই শুধু একজন ভালো অভিনেত্রী হয়ে ক্ষান্ত হন নি , তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালকও হতে চান । তার মতে অভিনেত্রী হওয়া নেতিবাচক ব্যাপার , অভিনেত্রীকে ভালো নাটক ও ভালো চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তিনি মনে করেন , পরিচালকের কাজ ইতিবাচক কাজ , স্টুডিওতে সবাইকে পরিচালকের নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে হয় । ২০০২ সালে সুই চিংরেই নিজের পরিচালনা ও অভিনয়ে ' আমি ও বাবা ' নামে তার প্রথম ছবি তৈরি করেন । এই ছবিতে এক বিয়ে-বিচ্ছেদ পরিবারে বাবা ও মেয়ের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবি তৈরীর পর সুই চিংরেই পরিচালক হতে আরো আস্থাবান হয়েছেন । অভিনেত্রীর চেয়ে এখন সুই চিংরেই পরিচালক হতে বেশী আগ্রহী। তিনি বলেছেন , আমার পক্ষে ভালো পরিচালক হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আমি দর্শকদের পছন্দ অনেক ছায়াছবি তৈরী করতে চাই । আমি যুক্তরাজ্য , ফ্রান্স ও যুক্ত রাষ্ট্রের ছায়াছবি দেখতে পছন্দ করি । পাশ্চাত্য দেশগুলোর ছায়াছবি তৈরীর কৌশল ও শৈলী চীনের ছায়াছবিতেও ব্যবহার করা যায় , এই সব পদ্ধতির উপযুক্ত ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

    সুই চিং রেই বলেছেন , ' আমি ও বাবা ' আর ' এক অজানা নারীর চিঠি ' –এই দুটি ছায়াছবি পরিচালনার পর তিনি আরো তিনটি ছবি পরিচালনা করবেন । এগুলোর মধ্যে একটি প্রাচীনকালের কাহিনীর ছবি , একটি তার নিজের লেখা কাহিনীর ছবি আর তৃতিয়টি হলো পৃথিবীর দশটি দেশের পরিচালকের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত ছবি তোলার কাহিনী । বর্তমানে  এই  তিনটি ছায়াছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজ পুরোদমে চলছে ।

    সুই চিং রেই খুব ব্যস্ত মানুষ । পরিচালক ও অভিনেত্রী এই দুটি কাজ করার দরুণ তার অবসর নেই বললেই চলে । নিজের প্রেম সম্বন্ধে তিনি মনে করেন , একজন লোকের স্বাধীন হওয়া উচিত । ছেলে ও মেয়ে পরস্পরকে ভালোবাসতে পারেন , কিন্তু বিয়ে করে সে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে না । তার মতে বিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয় । তিনি বলেছেন , আমি মনে করি , প্রেম এক নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার , প্রত্যেকের মনে প্রেম এক নয় । আমি বিশ্বাস করি পৃথিবিতে নানান ধরনের প্রেম ও বিয় আছে ।

    সুই চিং রেই একজন বৈশিষ্ট্যময় মেয়ে । তিনি মনে করেন নিজের ইচ্ছা অনুসারে জাপা কাপড় পড়তে হবে । তিনি সাধারণতঃ গরমকালে প্যান্ট পরেন , শীতকালে স্ক্যার্ট পরেন । তার মতে , নিজের উপযোগী জামা কাপড় পরাই ফ্যাশন ।