পূর্ব হান রাজবংশের (২৫-২২০ খৃষ্টাব্দ) উত্থান এবং অগ্রগতিঃ যখন কৃষক বিদ্রোহের অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হচ্ছিল তখন লিউ সিউ(খৃঃ পূঃ৫--৫৭ খৃষ্টাব্দ) নামে হান রাজবংশভুক্ত একজন ভূস্বামীর পুত্র হোনান প্রদেশের নানইয়াং-এ একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী জড়ো করেন। তিনি বিদ্রোহী কৃষক সেনাদের দমন করেন এবং যে সকল স্থানীয় নেতারা অরাজকতার সুযোগ গ্রহণ করে স্বধীন রাজ্য স্থাপিত করেছিল তাদের উত্খাত করেন। ২৫ খৃষ্টাব্দে তিনি লুওইয়াং-এ তার রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করে পুনরায় হান রাজবংশের শাসন কায়েম করেন। রাজধানী পূর্বদিকে অবস্থিত থাকায় চীনা ইতিহাসে এই রাজবংশ পূর্ব হান রাজবংশ নামে অভিহিত হয়।
লিউ সিউ সম্রাট কুয়াং উ তি নামে পরিচিত। তিনি ভূমি-কর সম্পূর্ণ আদায় করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, এবং সেজন্য সারাদেশে নূতন করে জরিপ করার আদেশ দেন। তিনি সকল ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য আদেশ জারী করেন যাতে যেসব কৃষকেরা উত্পাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়ে পড়েছিল তারা পুনরায় কৃষিকাজে নিয়োজিত হতে পারেন। ভূস্বামীশ্রণীর বাধাদানের ফলে এই আদেশ পুরোপুরিভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু বিদ্রোহী কৃষকেরা ভূস্বামীদের কিছু সুবিধা দান করতে বাধ্য করান। ফলস্বরূপ , সম্রাট মিং তি'র শাসনকালে(৫৮--৭৫ খৃষ্টাব্দে) সামাজিক আর্থনীতি উন্নতি লাভ করে, এবং বহু পরিত্যক্ত জলাশয় পুনরুদ্ধার করা হয়। যেমন , বর্তমানকালের হোনান প্রদেশের রুনান নামক স্থানে পুকুর খনন করে যে জলসংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তা ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল। এই ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এক বছরে খরচা হয় তিন কোটি মুদ্রো। ইয়াংসি নদী উপত্যকা পশ্চিম হান যুগ থেকে আরও উন্নতি লাভ করে, এবং কৃষি মোটামুটি ঐ যুগের মতনই সমৃদ্ধিলাভ করে।
হস্তশিল্প উত্পাদনের কৌশল উন্নত হয় এবং লৌহ গলানো ও ঢালাইয়ের কাজে হাপর চালনার জন্য জলবিদ্যুত্ ব্যবহৃত হয়। পশ্চিম হান যুগে প্রচলিত অন্যান্য হস্তশিল্পও এই যুগে আরও উন্নতি লাভ করে। প্রধানতঃশ্রম বিভাজনের জন্য এই সব শিল্পের উত্পাদিত দ্রব্যের পরিমাণ পূর্ববর্তী যুগ থেকে বহুগুণ বৃদ্ধি লাভ করে। কোরিয়া দেশের লাক লাং নামক স্থানের ভূগর্ভ থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি লাক্ষার পেয়ালায় খোদিত লিপি থেকে জানা যায় যে, এই সব পেয়ালা তৈরি করে তাদের পূর্ণ রূপ দিতে বহু কারিগর নিয়োজিত হয়েছিল।
আলোচ্য যুগে বহু নূতন জিনিষ উদ্ভাবিত হয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১০৫ খৃষ্টাব্দে ছাই লুন কর্তৃক কাগজ তৈরি। চীনামাটি দিয়ে জিনিষ তৈরির কাজও এই যুগে শুরু হয়।
শহর ও নগরগুলোও পশ্চিম হান যুগের তুলনায় অনেক বেশী সমৃদ্ধিলাভ করে। রাজধানী লুওইয়াং রাজনীতিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ছাংআনের স্থান দখল করে নেয়। নূতন শাসকের আমলে পশ্চিম হানের সময়কার নগরগুলোও অগ্রগতি লাভ করতে থাকে, কুয়াংচৌ শহরের ফানইয়ু এবং কুয়াংতোং প্রদেশের স্যুওয়েন বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য উপকূলবর্তী বন্দরে পরিণত হয়।
পূর্ব হান রাজবংশের শুরুর কয়েকটি বছরের মধ্যে সিয়োংনু উত্তর এবং দক্ষিণ এই দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয় উত্তর সিয়োংনু গোষ্ঠীকে আক্রমণ করার জন্য দক্ষিণ সিয়োংনু গোষ্ঠী পূর্ব হানের সঙ্গে হাত মেলায়।
যখন পূর্ব হান রাজবংশ এবং উত্তর সিয়োংনুদের মধ্যে সংগ্রাম তীব্রতর হয়ে ওঠে তখন পূর্ব হান রাজবংশ পান চাও(৩৪--১০২) নামে একজন কর্মচারীকে রাজনৈতিক দূতালির উদ্দেশ্যে পশ্চিম অঞ্চলে পাঠান। পান চাও-এর আগমনে পশ্চিম অঞ্চল পুনরায় চীনের ইতিহাসের পাতায় আবির্ভাব হয়। পূর্ব-হান রাজবংশেরর প্রতিপত্তির জন্য পান চাও ঐ অঞ্চলকে পূর্ব-হানের শাসনাধীনে আনতে সমর্থ হন, এবং এই অঞ্চল দিয়ে চীনা ব্যবসায়ীরা পুনরায় বাণিজ্য শুরু করে।
|