তিব্বতী জাতির উত্সব সংস্কৃতি তার আচার ব্যবহার সংস্কৃতির একটি প্রধান অংশ।
তিব্বতী জাতির বহু উত্সবের মধ্যে তিব্বতী নবর্বষ সবচেয়ে চিত্তাবর্ষক উত্সব। তিব্বতী নবর্বষ সাধারনতধ ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পালিত হয়।
তিব্বতী জাতির বেশির ভাগ লোকেরা বৈদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন। সুতরাং তিব্বতী নববর্ষ জোরালো ধর্মীয় পরিবেশে ভরপুর। যেমন নববর্ষের আগের দিনে বাগিতে বাড়িতে কুওথু নামে ময়দা দিয়ে তৈরী এক ধরনের খাবার তৈরী করা হয়। তিব্বতী জাতির রুপকথায় কুওথু খাবার খেলে দৈত্য তাড়িয়ে দেয়া যেতো। গৃহিনীরা কুওথু তৈরী করার সময়ে সাধারনত: ইচ্ছাকৃতভাবে ভেড়ার কয়েকটি লোম, ছোট এক টুকরো কাঠকয়লা বা মরিচ মিশিয়ে দেন। তাতে পরিবারের সদস্যদের চরিত্র যাচায় করা যায়। যে লোক মরিচ সহ কুওথু খায়, তাকে নিষ্ঠুর; যে লোক কাঠকয়লা সহ কুওথু খায়, তাকে আবেগশুন্য আর যে লোক ভেড়ার লোম খায়, তাকে দয়ালু বলে মনে করা যায়।
চেগা সাধারনত: নববর্ষে পরিবেশন করা হয়। তার বিষয়বস্তু প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানানো। আনন্দময় চেগা সংগীতের তালে তালে তিব্বতী জাতির লোকেরা তিব্বতী নববর্ষকে স্বাগত জানানো। নববর্ষের দিনে সবাই নতুন পোষক পরেন। বাসার সকলেই এক সাথে বসে মাখন, চিনি প্রভৃতি দিয়ে তৈরী শুভ খাবার খান। খাওয়া শেষে বয়স্করা সবাইকে জাসিতেলা অর্থাত্ শুভেচ্ছাও জানাতে হবে।
নববর্ষের উস্থাপনী তত্পরতা অর্ধ মাস স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যে লোকেরা তিব্বতী অপেরা পরিবেশন করেন আর তিব্বতী নাচ করেন। পশুপালন এলাকাগুলোতে পশুপালকরা ঘোড়দৌড়, তীর-দাজ প্রভৃতি ক্রিড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেন।
গরমকালের শেষ দিকে আর শীত্কালের প্রথম দিকে যে টক দুধ পান করার উত্সব পালিত হয়, তাকে সবচেয়ে সুন্দর উত্সব বলা যায়। এই উত্সব প্রসংগে লাসার শহরবাসী ফুপুছিরেন সংবাদদাতাকে বলেছেন, তিব্বতী নববর্ষে লাসায় শীত্ পড়ে। সুতরাং আত্থীয় স্বজন আর বান্ধব বান্ধবীরা সবাই বাসায় বসে নববর্ষ পালন করেন। যখন টক দুধ পান করার উত্সব পালিত হয়, তখন গরমকাল, লাসায় আবওয়া ও পরিবেশ ভালো। লোকেরা শহরতলিত গিয়ে রেড়াতে পছন্দ করেন। এখন টক দুধ পান করার উত্সব ধীরে ধীরে তিব্বতী অপেরা পরিবেশন আর শহরতলিত রেড়ানোভিত্তিক একটি উত্সব পরিনত হয়েছে। যুবক যুবতীরা নাচ গান করেন আর বৃদ্ধ বৃদ্ধারা ঐতিহ্যিক তিব্বতী অপেরা উপভোগ করেন।
তিব্বতে আরো বহু ধর্মীয় উত্সব আছে। যেমন তিব্বতী চতুর্থ মাসের ১৫ তারিখে বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাক্যমুনির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাকাদাওয়া নামে উত্সব পালিত হয়।
উল্লেখযোগ্য যে, তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে দেশব্যবপী উত্সব ছাড়া তিব্বতী জাতির উত্সবগুলোতেও লোকেরা একই ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এই বিষয়ে তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সংখ্যালঘুজাতি বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি লুনি বলেছেন, এখন বসন্ত উত্সব, মে দিবস, পয়লা অক্টোবর জাতীয় দিবস ইত্যাদি দেশব্যাপী আয়োজিত দিবস ছাড়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল সরকার তিব্বতী নববর্ষ, টক দুধ পান করার উত্সব সহ তিব্বতী জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বহু ঐতিহ্যিক উত্সবকে আনুষ্ঠানিক উত্সব হিসেবেও ধার্য করেছে। ফলে তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহার পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে।
|