সম্প্রতি চীনের বৃতমো বিশিষ্ট ব্যক্তির মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হল রাজধানী পেইচিংয়ের জাতীয় যাদুঘরে উদ্বোধন করা হয়েছে । দেশবিদেশের আর প্রাচীনকাল ও আধুনিককালের এক শ'রও বেশী বিশিষ্ট ব্যক্তির মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হলে স্থান পেয়েছে , এই সব প্রানবন্ত প্রতিকৃতি চীনের মোমের প্রতিকৃতি তৈরীর সর্বোচ্চ মানের প্রতিনিধিত্ব করে ।
নতুন প্রতিষ্ঠিত এই মোমের প্রতিকৃতির প্রদর্শনী হল হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হল , তিন হাজার বর্গমিটার বিস্তৃত এই হলে ১২৬জন বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রতিকৃতি দেখানো হয়েছে । দর্শকরা এই প্রদর্শনী হলে খৃষ্ট পূর্ব ২২১ সালে চীনের সামন্ত রাজ্যের প্রথম রাজা ছিন সি হুয়ান , ইতিহাসের বিখ্যাত চিন্তাবিদ কনফুসিয়াস , চীন গণ প্রজাতন্ত্রের প্রয়াত বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ , বিখ্যাত বাস্কেট বল খেলোয়াড় ইয়াও মিং , বিখ্যাত চলচিত্র অভিনেত্রী চান মান ইউ , বিশ্ববিখ্যাত চিন্তাবিদ মার্ক্স ও এনগেল্স আর বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পিকাসো প্রমুখ ব্যক্তির প্রকৃতি দেখতে পান । চীনের জাতীয় যাদু ঘরের উপপ্রধান মিঃ চিয়ান ফোং ই বলেছেন , এই প্রদর্শনী হল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো দেশেবিদেশের আর প্রাচীন ও আধুনিককালের বিশিষ্ট ব্যক্তির মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে মানব জাতির সভ্যতা প্রদর্শন করা । বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে চীনের আধুনিককালের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রাধান্য পান , প্রাচীনকালের আর বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ।
মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হলের প্রবেশদ্বারে গাঢ নীল রংয়ের গোল আকারের প্রদর্শনীকক্ষ রহস্যময় মহাকাশের মতো দেখায়। চীনের বিখ্যাত নভোচারী ইয়াং লি উয়েই প্রদশনীকক্ষের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে সহাস্যে দর্শকদের স্বাগত জানাচ্ছেন । অনেক দর্শক ইয়ান লি উয়েকে দেখে হাত নেড়ে তার সম্ভাষনের উত্তর দেন , কাছে গিয়ে হঠাত বুঝতে পেরেছেন তারা ইয়াং লি উয়ের প্রতিকৃতিকে সম্ভাষন জানাচ্ছেন । ইয়াং লি উয়ে চীনের বিখ্যাত নভোচারী , গত বছর তিনি চীনের সেন চৌ পাঁচ নম্বর খেয়াযান চালিয়ে সাফল্যের সংগে চীনের প্রথম মানুষবাহী নভোযাত্রা সম্পন্ন করেছেন , ইয়াং লি উয়েই চীনের একজন জাতীয় বীর । বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমে চীনারা ইয়াং লি উয়েইকে দেখেছেন , কাজেই তার সহাস্য প্রতিকৃতি সবার পরিচিত , ইয়াং লি উয়ের মোমের প্রতিকৃতি নভোচারীর পোশাক পড়ে , হাতে নভোচারীর টুপি , মুখে তার স্ববৈশিষ্ট আত্মবিশ্বাসের হাসি , সত্যিই যেন ইয়াং লি উয়েই প্রদর্শনী কক্ষে এসেছেন । দর্শকরা প্রশংসা করে বলেছেন , এই প্রতিকৃতি একদম ইয়াং লি উয়ের মতো হয়েছে ।
প্রবেশ দ্বার পার হয়ে ভিতরের কক্ষের প্রতিকৃতি দেখে দর্শকরা আরো মুগ্ধ হন । এই প্রদর্শনী কক্ষে চীনের জনগনের শ্রদ্ধেয় প্রবীন নেতৃবৃন্দের প্রতিকৃতি রাখা হয় । এই সব প্রতিকৃতি হচ্ছে চীনের প্রয়াত নেতা মাও সে তুঙ , প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই , প্রেসিডেন্ট লিউ শাও ছি , চীনের বিখ্যাত সমরবিদ চু দ্য ও চীনের সংস্কার অভিযানের স্থপতি তেং সিয়াও পিং । এই সব বিশিষ্ট ব্যক্তি কেউ বসে আছেন , কেউ দাড়িঁয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে যেন কোনো বিষয় চিন্তা করছেন , কেউ হাত পিছনে রেখে হাসছেন অথবা দুই বাহু জড়িয়ে দর্শকদের দেখছেন । দর্শকরা যেন হঠাত প্রবীন নেতৃবৃন্দের সভাকক্ষে প্রবেশ করেন , কেউ জোরে কথা বলার সাহস পান না , তারা নীরবে তাদের শ্রদ্ধেয় নেতাদের প্রতিকৃতিগুলো পরিদর্শন করেন । দর্শকরা লক্ষ্য করেছেন , এই সব প্রতিকৃতির মুখে বৃদ্ধদের দাগ ও ভাঁজ আছে , তাদের হাতের চামড়া পাতলা , নীচের রক্তনারীর নীল রং আর নখের বাদামী রংও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। মোমের প্রতিকৃতি তৈরী শিল্পীদের চমত্কার নৈপুন্য সত্যিই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে ।
এই প্রদর্শনী হল প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের সবচেয়ে উচ্চমানের খোদাই শিল্পী ও মোমের প্রতিকৃতি শিল্পীদের জড়ো করা হয়েছে । যেমন থিয়েন চি শহরের আর পাও রুই , পেইচিংয়ের চান শৌ সিয়ান , সি আন শহরের চৌ রেন ছৌ সবই চীনের বিশিষ্ট শিল্পী । থিয়েন চিন শহরের মোমের প্রতিকৃতি শিল্পী আর পাও রুই বলেছেন , আমি মনে করি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোমের প্রতিকৃতি তৈরী শুধু চীনা জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রদর্শনই নয় , মোমের প্রতিকৃতি তৈরীর মাধ্যমে বিশ্ব সভ্যতা ও বিশ্ব সংস্কৃতির অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে চীনা শিল্পীদের নৈপুন্য দেখানো হয়েছে ।
জানা গেছে , মোমের প্রতিকৃতি তৈরী শিল্প প্রথমে পাশ্চাত্য দেশে শুরু হয় । যুক্র রাষ্ট্রের মাদাম দুসাউন্ড্স মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হল আর ফ্রান্সের প্যারিস মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হল বিশ্বের নামকরা মোমের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হল । গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চীনে মোমের প্রতিকৃতি তৈরী শুরু হয়। চীনা শিল্পীদের নিরলস প্রয়াসে চীনের তৈরী মোমের প্রতিকৃতি বিশ্বের উন্নত মানে পৌছেঁছে অথবা ছাড়িয়েছে । যেমন গত শতাব্দীর আশির দশক শিল্পী চান সৌ সিয়ানের তৈরী মোমের প্রতিকৃতির গায়ের চামড়ায় সূক্ষ্ম লোমের ছিদ্র ছিল , কিন্তু সেই সময় যুক্ত রাষ্ট্রের শিল্পীদের তৈরী মোমের প্রতিকৃতিতে এই সমস্যার সমাধান হয় নি ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোমের প্রতিকৃতি আরো জীবন্ত করার জন্য শিল্পীরা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন , যেমন তাদের উচ্চতা , গড়ন , চেহারা , চামড়ার রং , মাংসপেশী , চুল , মুখের ভাঁজ ও দাগ ইত্যাদি । তাছাড়া শিল্পীরা বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কিত বইপত্র ও ছায়াছবি দেখেন , তাদের সংগে সাক্ষাত অথবা তাদের পরিবার পরিজনের সংগে আলাপ করেন ।
এই ধরনের উচ্চমানের মোমের প্রতিকৃতির প্রদর্শনী চীনে এই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় , এই প্রদর্শনী চীনের বিভিন্ন জায়গার দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে । এই প্রদর্শনীতে দর্শকদের ঠাট্টা করার প্রোগ্রাম আছে । যেমন দর্শকদের বিশ্রামের জন্য রাখা চেয়ারে এক মোটা প্রৌঢ ব্যক্তি মাথা হেট করে ঘুমাচ্ছেন , তার চোখের চশমা পড়ে যাচ্ছে , কাছে গেলে তার নাকের ডাকও শোনা যায় । অনেক দর্শক মনে করেন একজন দর্শক ক্লান্ত হয়ে ঝিমুচ্ছেন । প্রদর্শনীর কর্মচারীরা বলেছেন এটাও এক মোমের প্রতিকৃতি , সত্যিই মোমের প্রতিকৃতি কিনা তা দেখার জন্য অনেক দর্শক ঘুমন্ত পুরুষের নাকের নীচে হাত দিয়ে তার শ্বাস পরীক্ষা করেন । প্রদর্শনী কক্ষে অনেক দর্শক পাশে সহাস্যে দাড়ানো কর্মচারীকেও মোমের প্রতিকৃতি মনে করেন । উত্তর-পূর্ব চীন থেকে আসা দর্শক ফান হাই ছিন বলেছেন , এই প্রদর্শনী সত্যই চমত্কার । আগে শুনেছি যুক্ত রাষ্ট্য ও যুক্ত রাজ্যের মতো পাশ্চাত্য দেশে মোমের প্রতিকৃতির প্রদর্শনী হল আছে , আমি চিন্তাও করতে পারি নি যে চীনেও এত চমত্কার মোমের প্রতিকৃতির প্রদর্শনী হল আছে , এখানে প্রদর্শিত মোমের প্রতিকৃতিগুলো সত্যিকার ব্যক্তির সংগে কোনো তফাত নেই , চীনা শিল্পীর নৈপুন্য সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে ।
|