নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে ,তত্কালীন শীর্ষ নেতা মাও ছেতুং ক্রিড়া ব্রত উন্নয়ন আর জনগণের স্বাস্থ্য গঠনের স্লোগ্যান উত্থাপন করেন। সত্তোর-এর দশকের শেষ দিকে চীনের সংস্কার আর মুক্তদ্বার নীতি চালু হবার পর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সংগে সংগে চীনের জনগণ স্বাস্থ্যরক্ষার চাহিদাও অবিরাম বেড়ে গেছে । ১৯৯৫ সালে চীন সরকার গণ স্বাস্থ্যরক্ষা পরিকল্পনা কর্মসূচী প্রকাশ করে, তখন থেকে চীনের গণ ক্রিড়া ব্রত উন্নয়নের সত্যযুগে প্রবেশ করে।
চীনের জাতীয় ক্রিড়া ব্যুরোর সামাজিক ক্রিড়া কেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং শিয়াও লিন ব্যাখ্যা করেছেন যে,
পার্টি আর সরকার জনসাধারণের শারীরিক গঠনের খুব যত্ন নেয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থন দেয়। ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদ গণ-স্বাস্থ্যরক্ষা পরিকল্পনা কর্মসূচী প্রকাশের পর গণ ক্রিড়া একটি শ্রেষ্ঠ উন্নয়নের যুগে প্রবেশ হয়েছে।
ওয়াং শিয়াওলিন বলেছেন, ১৯৯৭ সাল থেকে ,জাতীয় ক্রিড়া ব্যুরো প্রতি বছর ক্রিড়া লটারির গণ কল্যাণ তহবিলের শতকরা ৪০ ভাগ মল্লক্রিড়া ওলিম্পিক গেমসে খ্যাতি অর্জন পরিকল্পনায় ব্যয় করে, অন্য শতকরা ৬০ ভাগ গণ স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য ব্যয় করে। এতে গণ ক্রিড়া ব্রত উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরের প্রত্যেক বছরে গণ স্বাস্থ্যরক্ষা সাজ-সরজ্ঞামের নির্মানে প্রায় ২০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি লটারী গণ-কল্যাণ তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক পাঁচ বছরে ,চীন সরকার বিভিন্ন শহরের আবাসিক এলাকা এবং উন্মুক্ত পার্কে পর পর ২০ হাজারটির উপর ব্যায়াম গলি নির্মান করেছে। ব্যায়াম গলির নির্মান মানে শরীর চর্চার মৌলিক যন্ত্রপাতি এবং ব্যায়ামের পদ্ধতি হাজার সাধারণ পরিবারের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। পেইচিং শহরের পূর্বাঞ্চলের ম্যাডাম শিয়াও বলেছেন,
আগে আমি ভোরে তুংতান পার্কে গিয়ে ব্যায়াম করতাম। তখন পাবলিক বাস ধরতেই হত। এখন আমি বাড়ির দরজা খুলেই ব্যায়াম করতে পারি। সময় বাঁচিয়ে ব্যায়ামের পর সময়মতো বাসায় গিয়ে স্নানও করতে পারি।
চীনের জাতীয় ক্রিড়া ব্যুরোর কর্মকর্তা ওয়াং শিয়াও লিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই ধরনের ব্যায়াম গলি ভবিষ্যতেও অব্যাহতভাবে নির্মান করা হবে, তার সংখ্যা এবং ব্যবহারকারী এলাকাও বাড়বে।
চীনে ৯০ কোটি লোক গ্রামে থাকেন। গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যরক্ষাও চীনের ক্রিড়া প্রশাসন সংস্থার কাজকর্মের প্রধান অংশ। বর্তমান চীনের বিভিন্ন প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্র-শাসিত মহানগরের সবগুলোতেই কৃষক ক্রিড়া সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ শহর এবং জেলায়ও বিভিন্ন শ্রেণীর কৃষক ক্রিড়া সমিতি গঠিত হয়েছে। আর কিছু অঞ্চলের গ্রামে স্থানীয় কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিড়া শিক্ষা কেন্দ্র আর ব্যায়াম ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চীনের শহরবাসী এবং গ্রামবাসীরা ব্যায়াম করার সময়ে যাতে সঠিক উপদেশ পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য গণ স্বাস্থ্যরক্ষা পরিকল্পনা কর্মসূচী কার্যকরী করার সাত বছরে, চীনের গণ স্বাস্থ্যরক্ষা ক্রিড়া কেন্দ্র মোট ২ লক্ষজনেরও বেশী পেশাদার সামাজিক ক্রিড়া শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন চীনের শতকরা ৯২ ভাগ জেলায় সামাজিক ক্রিড়া শিক্ষক আছেন।
বর্তমান সি আন ক্রিড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ক্রিড়া উপদেশ বিষয়ে অধ্যয়নরত উ জিয়ান সংবাদদাতাকে বলেছেন,
চীনের গণ ক্রিড়া উত্সাহব্যঞ্জকভাবে প্রসারিত হওয়ার সংগে সংগে চীনের সমাজে সামাজিক ক্রিড়া শিক্ষকের চাহিদা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক ক্রিড়া নির্দেশনাকে পেশাগত রূপ দেয়া হচ্ছে সামাজিক সভ্যতার উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের প্রতীক। ভবিষ্যতে আমি এমন একটি তাত্পর্যসম্পন্ন কাজ করতে ইচ্ছুক।
দেশবাসীদের মাঝে ব্যায়াম করার আগ্রহ জাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষ সক্রিয়ভাবে প্রচুর বর্ণাঢ্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে আরো বেশি লোক শরীর চর্চা দলে আকৃষ্ট হন।
গণ স্বাস্থ্যরক্ষা পরিকল্পনা কর্মসূচী কার্যকরী করার পর চীনের গণ ক্রিড়ায় লক্ষ্যনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন চীনে নিয়মিত শরীর চর্চাকারী লোকসংখ্যা মোট লোকসংখ্যার ৩১.২০ শতাংশ হয়েছে, এটা উন্নয়নমুখী দেশগুলোর গড়পরতা মানের চেয়ে উচু।
|