কন্ঠশিল্পী সুন উয়ে লিয়ান 'হলুদ নদী মা ' নামে একটি গান গেয়েছেন , অনেকে এই গান শোনার মাধ্যমে গায়ক সুন উয়ে লিয়ানের পরিচয় পেয়েছেন । তার গান শুনে লোকেরা যেন চীনা জাতির মাতৃনদী-- হলুদ নদীর স্পন্দন অনুভব করতে পারেন এবং গান থেকে প্রেরনা পান ।
উওর পূর্ব চীনের এক কৃষক পরিবারে সুন উয়ে লিয়ানের জন্ম । তার পরিবারে নয় ভাইবোন আছে , নয়জনের মধ্যে তার স্থান সপ্তম । এখনও তার মনে আছে ছোট বেলায় বাবা মা জীবীকার জন্য সব সময় ক্ষেতে চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত , বাসায় ফিরে মা গান গেয়ে এই গরীব পরিবারের জন্য আনন্দ নিয়ে আসেন । সুন উয়ে লিয়ান বলেছেন , অনেক গান তার মা তাকে শিখিয়েছেন । তিনি বলেছে , আমার মা গান গাইতে পছন্দ করেন , তাঁর গলা মিষ্টি, রাত্রে আমরা মায়ের ঘুম পাড়ান গানের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তাম , এ কথা বলা যায় যে আমরা মায়ের গান শুনতে শুনতে এবং গান গাইতে গাইতে বড় হয়েছি । মায়ের গান সুন উয়ে লিয়ানের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে , বাড়ীতে একটি পুরানো রেডিওসেট কেনার পর সুন উয়ে লিয়ান রোজ লেপের ভিতরে রেডিও কোলে নিয়ে গান শুনতেন , গান যতোই শুনে গানের উপর তার আগ্রহ ততই বাড়ে , গান গাওয়ার ইচ্ছাও ক্রমেই বাড়ে ।
মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের একটি গান প্রতিযোগিতায় সুন উয়ে লিয়ান 'সমুদ্রমুখী' নামে একটি গান গেয়ে প্রতিযোগিতার প্রথম শ্রেনীর পুরষ্কার পেয়েছিলেন । সেই সময় থেকে তিনি স্কুলের প্রতিভাবান গায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন । কিছু দিন পর একজন বিখ্যাত গান শিক্ষক সুন উয়ে লিয়ানকে নিজের ছাত্র হিসেবে গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন , এটা সুন উয়ে লিয়ানের পক্ষে মহা খুশির ব্যাপার । কিন্তু গান শেখার জন্য প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হয় , যদিও তার শিক্ষক তাকে সাহায্য করার জন্য শিক্ষার ফি অনেক কমিয়ে দিয়েছেন , দু বছরস্থায়ী শিক্ষা কোর্সে সুন উয়ে লিয়ানকে মাত্র ১২০ ইউয়ান চীনা মুদ্রা দিতে হয় , তবে এই সংখ্যা সুন উয়ে লিয়ানের পক্ষে এক বড় সংখ্যা । তার মা তার গান শেখার আশাকে সমর্থন করেন , তার বাবা কিন্তু দৃঢভাবে তার বিরোধিতা করেন । তার ধারনা , পরিবারের ১১জন সদস্যের খাওয়াপরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । সে সময়ের কথা স্মরণ করে সুন উয়ে লিয়ান বলেছেন , আমি গান শিখতে চাই , কিন্তু পরিবারে সাত ভাইবোনের খাওয়াপরা বাবা মার পক্ষে এক বড় চাপ , গান শেখার জন্য বাবাকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করলেও বাবা রাজী হন নি । বাবা বলেছেন , গান শেখা কি কাজে লাগবে ? তুমি বরণ এখন ভালো করে পড়াশুনা করো , এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী হবে , পড়াশুনা শেষ করে তুমি ভালো চাকরীও পাবে ।
গান শেখার আশা পূরণের জন্য সুন উয়ে লিয়ান পরিশ্রম করে শিখার ফি জমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তিনি অবসর সময় পাহাড়ে উঠে কাঠ ও ভেষজ ওষুধ সংগ্রহ করে বিক্রি করেন , তার মা ছেলের অতিরিক্ত পরিশ্রম সহ্ দেখতে পারেন না , তিনি আতমীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে ছেলেকে দিলেন । গান শিখার ফি জমা দিয়ে সুন উয়ে লিয়ান শিক্ষকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখতে শুরু করেন । প্রতি দিন ভোর বেলায় সুন উয়ে লিয়ান বাসা থেকে এক ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে উপকন্ঠের মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করেন , সন্ধ্যাবেলায় স্কুল থেকে ৪০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে গান শিক্ষকের বাসায় গিয়ে গান শিখেন , গভীর রাতে তিনি আবার পাহাড়ী পথ বেয়ে সাইকেল চালিয়ে বাসা ফিরে যান ,তিনি গান শিক্ষকের কাছে দু বছর গান শিখেছেন , এই দুই বছরে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন সত্য , তবে গান চর্চা ক্ষেত্রে তার যথেষ্ঠ অগ্রগতি হয়েছে ।
১৯৮৭ সালে সুন উয়ে লিয়ান ওয়া ফান তিয়ান শহরের যুব কন্ঠশিল্পী প্রতিযোগিতায় প্রথম শ্রেণীর পুরষ্কার পেয়েছেন , সেই বছর তিনি নৌ বাহিনীর ইউনিফোর্ম পরে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের নৌ বাহিনীর এক ঘাটি এলাকার একজন সৈনিক হয়েছেন । জীবনের এই অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সুন উয়ে লিয়ান বলেছেন , মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় আমি সমুদ্রমুখী নামে একটি গান গেয়ে পুরষ্কার পেয়েছি এবং কন্ঠশিল্পী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছি , এবার আমি সত্যই নৌ বাহিনীতে যোগ দিয়েছি , আমি সত্যই সমুদ্রমুখী হয়েছি , সমুদ্র আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ , আমি কোনো দিন এই গান ভুলবো না ।
১৯৮৮ সালে সুন উয়ে লিয়ান পরীক্ষার মাধ্যমে হোনান প্রাদেশিক শিল্পকলা বিদ্যালয় ভর্তি হন , সেখানে তিনি সংগীত তত্ব শিখেছেন এবং লোক সংগীত পরিবেশনের সার্বিক প্রশিক্ষন পেয়েছেন । হোনান প্রাদেশিক শিল্পকলা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে তিনি আবার নৌঘাঁটিতে ফিরে গিয়েছেন । তিনি নৌঘাঁটির শিল্পী দলের অন্যান্য সদস্যের সংগে বিভিন্ন সামুদ্রিক দ্বীপ ও চৌকিতে গিয়ে নৌসেনাদের জন্য গান পরিবেশন করেন । দৌড়াদৌড়ির জন্য সুন উয়ে লিয়ান যদিও ক্লান্ত মনে করেন , কিন্তু তিনি এতে আনন্দও পেয়েছে , নৌসেনাদের সংগে মেলামেশার কল্যানে তিনি তাদের সুখদুঃখ উপলব্ধি করতে পারেন , নৌসেনাদের বাস্তব জীবন সুন উয়ে লিয়ানের গানে প্রান শক্তি যুগিয়ে দিয়েছে ।অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী হয়েছেন , ১৯৯৫ সালে সুন উয়ে লিয়ান আনুষ্টানিকভাবে চীনের নৌবাহিনীর নৃত্যসংগীত দলে ভর্তি হন এবং পেশাদার কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করতে শুরু করেন ।
প্রতি বছর তিনি নৌবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের জন্য এক শ'টি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন , কোনো কোনো সময় দর্শকের সংখ্যা চার- পাঁচ শ' , কোনো কোনো সময় মাত্র একজন সৈনিক । একবার সুন উয়ে লিয়ান কুয়ান চৌ শহরে মোতায়েন দক্ষীণ- চীন নৌবহরের অফিসার ও সৈনিকের জন্য গান পরিবেশন করেন , একজন নৌসেনা ডিউটিতে থাকার দরুন তার গান শুনতে পান নি , এ খবর পেয়ে সুন উয়ে লিয়ান একটুও দ্বিধা না করে চৌকিতে গিয়ে বিশেষভাবে তার জন্য গান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তার ধারনা , নৌ বাহিনীর একজন কন্ঠশিল্পী হিসেবে নৌসেনার জন্য গান করা তার এক পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব।
|