২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালে উত্তরপশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের গ্রামাঞ্চলের ফান লিন লি পরীক্ষার মাধ্যমে এই প্রদেশের সি আন শহরের সি পেই শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন । কিন্তু তার পরিবারের আথির্ক অবস্থা খুবই খারাপ বলে তিনি এক সময় এই সুযোগ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন । পরে যখন তিনি জানতে পান যে ,গরীব ছাত্রছাত্রীরা রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষা সহায়তা ঋণ পাওয়ার আবেদন জানানোর মাধ্যমে বেতন সমস্যা সমাধান করতে পারেন শুধু তখনই তার বাবা-মা'র যেখান-সেখান থেকে ধার নেয়া জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অল্পকিছু টাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হাজির হন ।
নিরিবিলি রুদ্ধ গ্রামাঞ্চল থেকে কর্মব্যস্ত বড় শহরে এসে দন্ডায়মান সারি সারি অট্টালিকা ,প্রশস্ত পিচ-ঢালা রাস্তা ,ছুটন্ত যানবাহনের স্রোত আর জমকালো দোকানপাট দেখে ফান লিন লি হতবাক হন । বিশ্ববিদ্যালয়ের অত বড় গ্রন্থাগার ,নতুন জিমন্যাজিয়াম ও প্রশস্ত ক্লাসরুম দেখে তিনি খুব খুশী হন ও অপ্রতিভ হন । কিন্তু তার সবচেয়ে দু:খের বিষয় হলো আথির্ক টানাটানি ।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথমদিকে ফান লিন লি সহপাঠীদের সঙ্গে খেতে ও বাইরে বেরোতে চাইতেন না অথার্ত্ সমষ্টিগত জীবনযাত্রায় মিশে যেতে পারতেন না । সহপাঠীরা ভুল করে বোঝেন যে , তার সঙ্গে একসঙ্গে থাকা দায় । তখন সহপাঠীদের সঙ্গে ফান লিন লির সম্পর্ক আদৌ সন্তোষজনক ছিলো না ।
জীবনযাত্রার অসুবিধায় কষ্ট অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও ফান লিন লি বিরাট চাপ অনুভব করেন । গ্রামাঞ্চল থেকে আসা ফান লিন লি কখনও কম্পিউটার ব্যবহার করেন নি । তার ইংরেজীর উচ্চারণও সঠিক নয় । তাই কম্পিউটার ও ইংরেজী এই দুটি বিষয় তার মাথাব্যথার কারণ ছিলো । নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে দু'মাস পরের কম্পিউটার পরীক্ষায় তিনি শেষ পযর্ন্ত উত্তীর্ণ হন । কিন্তু ইংরেজী পরীক্ষায় তিনি ফেল হন । পরীক্ষার ফলাফল জেনে ফান লিন লি "হাঁ" বনে যান ।
"পরীক্ষার ফলাফল জানতে পেরে আমার হৃত্পিন্ড একবার কেঁপে ওঠে ,চোখের সামনে ধূসর অন্ধকার দেখে আর মাথা একেবারে ফাপা হয়ে যায় । ইংরেজী পরীক্ষায় শুধু ৫৯ পয়েন্ট পেয়েছি ? আগে পরীক্ষাগুলোতে কখনও তোএমন হই নি । তখন আমি নিজকে খুবই ঘৃণা করি । কেনো এত কম পয়েন্ট পেয়েছি ।"
ব্যাকরণ জ্ঞান আর কথা বোঝার শক্তির সীমাবদ্ধতাই পরীক্ষায় ফেলের প্রধান কারণ । এজন্য ফান লিন লি প্রায়ই সময় করে শিক্ষকের কাছে শেখেন । শিক্ষায় খুবই মনোযোগী এই ছাত্রী ইংরেজী শিক্ষিকা হু হুয়া রংয়ের মনে গভীর দাগ দিয়েছে । তিনি বলেছেন ,
"তিনি প্রায়ই আমার কাছে এসে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করেন । আমিও তাকে সাহায্য করি , তাকে ব্যাকরণ শেখাই । যেমন তার লেখা রচনায় ব্যাকরণের ভুলগুলো তাকে বলি ।"
শিক্ষিকা হু হুয়া রং বলেছেন ,প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফান লিন লি অবশেষে ইংরেজী ক্ষতিপূরণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ।
শিক্ষায় নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী ফান লিন লি ক্রমেই সহপাঠীদের সমাদর পেয়েছেন । তার পরিবারের আথির্ক অবস্থা জানার পর সবাই তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন এবং তাকে যথাসাধ্য কিছু সাহায্য দিয়েছেন ।
একদিন একটি বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপন দানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি অবসর সময়ে প্রাইমারী স্কুলের চতুথর্শ্রেণীর একজন ছাত্রীর গৃহশিক্ষক হন এবং প্রথমবারের মতো অর্থ উপাজর্ন করেন । তাছাড়া শিক্ষকের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দু'মাস পর শিক্ষকদের কায্যালয়ে নথিপত্র সাজানোর কাজও পান । এই সব উপাজর্ন বেশী না হলেও ফান লিন লির জীবনযাত্রার উপর চাপ স্পষ্টভাবে কমেছে । ফান লিন লি বলেছেন,
"গরীব পরিবারেই আমার জন্ম , এটা আমি বাছাই করতে পারি না । কিন্তু আমি এই অবস্থা পরিবতর্ন করবো । আমার বিশ্বাস , একটু বেশী পরিশ্রমী আর একটু বেশী প্রচেষ্টা করলে আমি শিক্ষা ক্ষেত্রে আর জীবনযাত্রা ক্ষেত্রে অন্যান্য সহপাঠীদের নিশ্চয়ই ছাড়িয়ে যেতে পারবো ।"
ফান লিন লি তাকে ভালবাসা ও সাহায্য দেয়ার জন্য সহপাঠীদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ ।
|