v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-06-02 16:07:30    
নিজের সন্তান মিথ্যা কথা বললে আপনি কি করবেন?

cri
    বন্ধুরা, নিজের সন্তান মিথ্যা কথা বলে জানলে নিশ্চয় আপনি দুঃখ ও কষ্ট পাবেন । এসময়ে আপনি কি করবেন ? রেগে বাচ্চাকে মারধর করবেন না ,মাথা ঠান্ডা করে বসে ভেবে দেখবেন ,বাচ্চা যে মিথ্যা বলে তা কার দোষ? ভুল কোথায়? এসম্পর্কে " যখন আপনি সন্তানের মিথ্যা বলা টের পান " শিরোনামে এক প্রতিবেদন নিয়ে কিছু আলোচনা করি ।

    মায়েরা বলেন, বাচ্চার মিথ্যা কথা সবচেয়ে অসহ্যনীয়:

    কিছু দিন আগে চীনের জাতীয় নারী ফেডারেশনের শিশু বিষয়ক বিভাগ , চীনের পারিবারিক শিক্ষা সমিতি আর চীনা নারী পত্রিকা মিলিতভাবে লিখিত প্রশ্ন-উত্তর ফর্মের সাহায্যে এক হাজার মায়ের মধ্যে জরীপ চালিয়েছে । কি কারনে আপনি সন্তানকে মারধর করেন এই প্রশ্ন করা হলে ২৯.৮৫শতাংশ মা উত্তর দিয়েছেন ,যে কোনো কারণে তারা সন্তানকে মারধর করেন না । যে মায়েরা সন্তানকে মারধর করেছিলেন মিথ্যা কথা বলার জন্যে তাদের অনুপাত ১৬.৯১ শতাংশ ।

    বাচ্চারা বলে, আমরা কেন মিথ্যা কথা বলি ?

    যুক্তরাষট্রের লস এন্জেলেসের সংশ্লিষ্টবিভাগ ৩৬৮১জন ১১-১৭বছর বয়সী মাধ্যমিক স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক জরীপ চালিয়েছে ।যে কারনে বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলে তা অনুসারে বাচ্চাদের মিথ্যা বলার সত্যিকার কারণ নিম্নে দেয়া হল:

    এক,আত্মরক্ষা :কোনো কোনো প্রতিকুল পরিনাম যেমন বাবামার তিরস্কার বা শাস্তি এড়ানোর জন্যে ।দুই,বাস্তব অবস্থা গ্রহনে অসম্মতি:মিথ্যা বলার মাধ্যমে নিজের দুঃখের অনুভূতি বা পর্যালোচনাসান্তনা দেয়ার জন্যে। তিন , অনুকরণ করা: মিথ্যাবাদী বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে শিখে নেয়া খারাপ অভ্যাস ।চার,আত্ম-প্রশংসা : নিজের অহংকারবোধকে তৃপ্ত করার জন্যে আত্মপ্রশংসা করার মাধ্যমে অন্য লোকদের দৃষ্টিআকৃর্ষণ করা । পাঁচ, বাস্তবতা পরীক্ষা করা : কৌতুহলের কারনে মিথ্যাকথার পরিনাম পরীক্ষা করার অপচেষ্টা করে। ছয়,মাঝেমাঝে সাথীকে রক্ষা করার জন্যে মিথ্যাকথা বলা । সাত, কোনো এক লোকের প্রতি শত্রুতার মনোভাব পোষনের কারনে মিথ্যা বলার মাধ্যমে তার ক্ষতিসাধন ।আট,কিছু লাভের জন্যে মিথ্যাকথা বলা । নয়,অন্য লোকের ভুল বুঝাবুঝির কারনে সবার কাছে ক্ষুদ্র মিথ্যাবাদী বলে নিজের ডাক নাম হয়েছে ।সময়ের তালে তালে নিজেও এই নাম গ্রহন করে এবং ভুল বুঝাবুঝি অনুযায়ী নিজেকে তৈরী করে । দশ, অনাস্থা আর ভুল বুঝাবুঝির কু-ফল:দীর্ঘকাল ধরে বাবামা আমাদের কথা সন্দেহ করেন বলে আমরা মিথ্যা কথা বেছে নিই ।এগারো:খেলার সময়ে বা সাধারন দৈনিক জীবনযাপনের সময়ে বাবামার মনে আমাদের কপট বুদ্ধিমানের অভিব্যক্তি ,এসময়ে তারা আমাদের সমালোচনা করেন না বরং প্রশংসা করেন, তাই সময়ের সংগে সংগে আমাদের মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস হয়েছে ।

    মনস্তত্ত্ববিদপন্ডিত বলেছেন , বাচ্চাদের মিথ্যা কথা সম্ভবত অভিভাবকদের চাপেই বলা হয় ।

    যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তত্ত্ববিদপন্ডিতদের এক জরীপ পরিসংখ্যান-উপাত্তথেকে আশ্চযভাবে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ২-তৃতীয়াংশ বাচ্চা তিন বছর বয়সের আগেই মিথ্যাকথা শিখেছে , ৯৮শতাংশের সাত বছর বয়সের বাচ্চা মিথ্যা কথা বলেছিল ।

    বাইরে থেকে দেখতে গেলে বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলার কি পরিনাম হবে তা জানে না বলে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলে। এধরনের মত পোষনকারীরা আসলে বাচ্চাদের মনস্তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য জানেন না । মনস্তত্ত্ববিদপন্ডিতদের গবেষনা থেকে জানা গেছে যে , বাচ্চাদের মিথ্যা বলার নানা ধরনের কারণ আছে , এক প্রধান কারণ হল বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলা । তারা বলেছে যে ,অভিভাবকের চাপেই তারা মিথ্যা না বলে পারে না ।বাচ্চাদের একথাটা হয়ত অনেক অভিভাবক ভাবতে পারেন নি ।

    আসলে কোনো কোনো সময়ে বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলতে চায় না , কিন্তু ঘটনার বাস্তবতা বলতে পারে না, অভিভাবকরা যদি জোর করে সন্তানকে বলতে চাপ দেন , তাহলে তাদের বাধ্য হয়ে মিথ্যা কথা বলতে হয় ।আসলে এই সময়ে আভিভাবকদের উচিত বাচ্চাকে নীরব থাকতে অনুমোদন করা, তার নীরব থাকার অধিকার আছে ।এ বিষয়ে অভিভাবকদের ভালভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে যে , বড় মানুষ দ্বন্দ্ব সমস্যা নিস্পতি করার সময়ে নীরব থাকার মাধ্যমে নিজের অধিষ্ঠানে অটল থাকতে পারেন, বরং অভিভাবকের জিজ্ঞাসায় বাচ্চাদের কিছু বলতে হয় , সত্যিকথা বললে শাস্তি পাবে,বাধ্য হয়ে তারা শুধু মিথ্যা কথা বলতে পারে ।

    কিভাবে বাচ্চাদের মিথ্যা বলার অভ্যাস শুধরানো যায় সে সম্পর্কে শিক্ষা-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

    এক, নৈতিকদিক থেকে বাচ্চাকে দুষ্টামি ছেলে বলে অভিভাবকদের সহজে ডাকা উচিত নয় ।যদি আপনার সন্তান মিথ্যা বলেছে , তাহলে আপনাকে মনোযোগের সংগে তার প্রথমবার ভূল শুধরাতে হবে ।রেগে লম্ফ-ঝম্ফকরা উচিত নয় , বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে তা ক্ষমা করাও উচিত নয় । দুই, অভিভাবকদের সময়োচিত ও কৌশলগতভাবে বাচ্চার মিথ্যা বলার আচরন উপলব্ধি করতে হবে । যে কোনো কারনে হোক না কেন , প্রথমবার বাচ্চারা ভয়ে ভয়ে মিথ্যা কথা বলে ,তারা এক দিকে অভিভাবক তাকে সমালোচনা করবেন বলে ভয় করে , অন্য দিকে বাবামা জানতে না পারলে নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে করে ।বাবামা সময়োচিতভাবে তার মিথ্যা উপলব্ধি করতে না পারলে সে গোপনে গোপনে আত্মতৃপ্ত হতে পারবে এবং পরবর্তীকালে বারবার মিথ্যা বলবে ।যদি অভিভাবক সময়োচিতভাবে তার মিথ্যা বলা টের পান তাহলে সে সহজে মিথ্যা বলতে সাহস করবে না ।তিন, সন্তানের মিথ্যা উপলব্ধি করার পর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল তাকে শিক্ষা দেয়া এবং তাকে মিথ্যা বলার ক্ষতি উপলব্ধি করতে সাহায্য করা । যখন বাচ্চা নিজের ভুল স্বীকার করে এবং পরে আরও মিথ্যা না বলার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অভিভাবকদের স্বাগত জানানো এবং তাকে ভুল সংশোধন করে এক সত মানুষ হতে পারবে বলে বিশ্বাস করা উচিত ।এইভাবে বাচ্চারা উত্সাহিত হয়ে মিথ্যা বলার অভ্যাস সংশোধন করে ধাপেধাপে সত্ ছেলে হয়ে উঠতে পারবে ।চার , শিক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন করার সময়ে অভিভাবকের উচিত বাচ্চার সংগে সহানুভূতি জোরদার করা উচিত । সন্তান নিজের ভুল স্বীকার করার পরও কোনো কোনো অভিভাবক তাকে মারধর সহ শাস্তি দেন এমন কি ভুল স্বীকৃতিদেয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়ালে লাগিয়ে দিতে বলেন । এটা সাংঘতিকভাবে সন্তানের গর্ববোধকে আঘাত করবে । পাঁচ, বাচ্চার মিথ্যা বলার অভ্যাস শুদ্ধ করার চাবিকাঠি হল বাচ্চার সত্ভাবে অন্য লোকের সাথে আচরনের নৈতিকতা লালন করা ।সত্ভাবে অন্যের সাথে আচরন করলেই কেবল অন্যলোকের আস্থা পেতেপারে ,অন্য লোকের সংগে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে । সত্ভাবে কাজ চালালে সমস্যা সমাধানের উত্তম উপায় খুজে বের করতে পারে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারে ।