হান রাজবংশের ইউয়ান তি'র রাজত্বের(খৃঃপুঃ৪৮-৩৩) অর্ধ শতাব্দী পর থেকে পশ্চিম হান রাজবংশের পতন শুরু হয়; রাজদরবারে দুর্নীতি দেখা দেয়, এবং রাজপরিবারের মহিলাদের আত্মীয়স্বজন ও সম্রাটের প্রিয় মন্ত্রীরা রাজনীতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। তাঁরা তহবিল আত্মসাত্, বলপ্রয়োগ, চুরি, ঘুষ এবং রাজদরবার প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির মাধ্যমে বিরাট সম্পত্তির অধিকারী হয়ে ওঠেন।
উ তি'র রাজত্বকালে এবং তার পরেও বিভিন্ন প্রকার করধার্য করা হয় যা লোকেদের বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভূমি-রাজস্ব, মাথাপিছু ধার্য-কর, সেনা-কর, তৃণ ও খড়-কর বাণিজ্যিক ও সম্পদ-কর এবং উ তি কর্তৃক স্থাপিত লবণ ও লৌহর একচেটিয়া উদ্যোগগুলো থেকে সম্রাটের বাত্সরিক আয়ের পরিমাণ হত কোটি মুদ্রা। কর প্রদান ছাড়াও প্রত্যেক কৃষককে বত্সরে নব্বই দিন বেগার খাটতে হত। এই ধরণের নির্মম শোষণের ফলে কৃষকেরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।
খৃঃপূঃ প্রায় ৫০ সালের নিকটবর্তী সময়ে ভূমি মালিকানা সমস্যা যার আগেই সমাধান হওয়া উচিত ছিল তা একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি ধারণ করে। পশ্চিম হান সরকার সব অনাবাদী জমি এমনকি রাজকীয় উদ্যানের পার্শ্ব বর্তী সরকারী জমিও কৃষকদের চাষ করতে দিতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিক নির্যাতন এবং তার সঙ্গে তেজারতি সুদখোরদের শোষণে গ্রামীণ অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়ে। অথচ সারা দেশে রাজকর্মচারী এবং ভূস্বামীদের হাজার হাজার মু বিশিষ্ট জমিদারী নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল। একবার, সম্রাট তার একজন প্রিয় মন্ত্রীকে ২০০,০০০ মু জমি দান করেন।
২য় খৃষ্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী তখন চীন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি, এবং চাষবাসের জন্য জমির পরিমাণ ছিল ৮০ লক্ষ মু। নিরন্তর শোষণের ফলে বহু কৃষক ভূমিহীন ও গৃহহারা ব্যক্তিতে পরিণত হতে বাধ্য হয়। অনেকে গবাদি পশুর সঙ্গে বিক্রীত হয়, আবার অনেকে নিজেদের বিক্রয় করে ক্রীতদাসে পরিণত হয়। রাজকর্মচারী ও ধনী ব্যক্তিদের অধীনে পোষ্য ব্যক্তিদের সংখ্যা এক লক্ষর অধিক ছিল। এরা কোন উত্পাদনের কাজ করত না। এদের প্রতিপালন করা কৃষকদের এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সৌভাগ্য বলে মনে করতেন, কারণ এইসব খাদ্যশস্য-উত্পাদনকারী কৃষকদের বুভৃক্ষু অবস্থায় থাকতে হত। অথচ, কৃষকদের বঞ্চিত করে সম্রাট, ধনী এবং প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিরা খাদ্যশস্য ঘোড়াকে খাওয়াতেন।
|