v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-31 13:47:01    
নারী সংগীতবিদ সোন ফেই

cri
    কিছু দিন আগে চীনের লোক সংগীতের রানী হিসেবে পরিচিত সোন ফেই ও তার ছাত্ররা মিলিতভাবে লোকসংগীতের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন , অনুষ্ঠানে তারা চীনা দোতারা আর হুর তারে অনেক ঐতিহ্যিক ও আধুনিক সুর বাজিয়েছেন এবং দর্শকদের সমাদর পেয়েছেন । চীনা দোতারা আর হু এক পুরানো বাদ্যযন্ত্র , বাদ্যযন্ত্রটি দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের দোতারার মতো ।

    সোন ফেইয়ের বাজানো একটি সুরের নাম ' পাইন গাছ ' । এই সুর পাইন গাছের নতি স্বীকার না করার গুনাবলীর প্রশংসা করা হয়েছে । সোন ফেইয়ের বাজানো এই সুর সতেজ ও সুক্ষ্ম , সুর শুনে অনেক শ্রোতাই সুরের আবেশে নিমজ্জিত ও বিমোহিত হন । সোন ফেই চীন সংগীত ইন্সটিটিউটের বাদ্যযন্ত্র বিভাগের শিক্ষক , এ বছর তার বয়স ৩৫ বছর । তিনি চীনের লোকসংগীত মঞ্চের এক উজ্জ্ল তারকা ।

    মনোরম বসন্তকালের এক দিন আমাদের সংবাদদাতা সোন ফেইয়ের বাসায় গিয়েছেন , তার বাসা চীন সংগীত ইন্সটিটিউটের ভিতরে , তার বাসায় সাজ-সজ্জা ঐতিহ্যিক স্টাইলের , আসবাবপত্র প্রাচীনকালের , এক টুপি ও জামা পোশাক রাখার কাঠের তৈরী তাকিয়ায় তার ছোট-বড় দশ বারোটি আর হু রাখা আছে । সোন ফেই দেখতে সুন্দর , ব্যবহার ভদ্র , কথা বলার স্বর নরম । তিনি শিক্ষকতা পেশা পছন্দ করেন এবং শিক্ষককে শ্রদ্ধা করেন । সোন ফেইয়ের বাবা থিয়েনচিন সংগীত বিদ্যালয়ের আর হু সংগীতের প্রফেসার , তিনি সর্বপ্রথমে সোন ফেইকে আর হু বাজানো শিখিয়েছেন এবং তাকে পেশাদার শিল্পী হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়েছেন । সোন ফেই বলেছেন , তার বয়স যখন পাঁচ বছর , তিনি আর হু বাজানোর কৌশল শিখতে শুরু করেন । প্রথমে তার বাবা যখন তার ছাত্রছাত্রীদের আর হু শিখান , তখন সোন ফেই পাশে বসে শোনেন , বাবার ছাত্রছাত্রীরা চলে যাওয়ার পর সোন ফেই নিজে থেকে আর হু হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করেন । মেয়ের আগ্রহ লক্ষ্য করে বাবা খুব খুশী , তিনি সোন ফেইকে আর হু শেখাতে শুরু করেন । তার বয়স যখন সাত , পাল্লা অঞ্চলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাবার উত্সাহে সোন ফেই প্রথমবার মঞ্চে উঠে একটি সুর বাজিয়েছেন । সেই বারের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে সোন ফেই বলেছেন , আমার বাবা 'ভারুই পক্ষী' নামে একটি সুর অনুষ্ঠানে বাজাতে আমাকে বলেছেন । আমি যখন মঞ্চে উঠি ,তখন হাতের বাদ্যযন্ত্র আর হু পরীক্ষা করে আবিষ্কার করেছি আর হুটির দুটি তার ঠিক করা হয় নি , তখন আমার ভয় লেগেছিল , মুখ ফিরে দেখেছি বাবা মঞ্চের পাশে দাড়িয়ে আমাকে দেখছেন । আমি মঞ্চ থেকে আবার তার কাছে গিয়ে আর হু ঠিক করার অনুরোধ জানালাম । বাদ্যযন্ত্র ঠিক করে বাবা আমাকে বল্লেন , যাও , ভয় পেয়ো না , উড়তে যাও ! তার এই কথা শুনে নিজের উপর বিশ্বাস আবার ফিরে পাই , আমি মঞ্চে ফিরে সুর বাজাতে শুরু করি । সেই অনুষ্ঠান থেকে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর হু দিয়ে সুর বাজিয়েছি ,   আমি সত্যিই বাবার কথার মতো শিল্প চর্চার পথে উড়তে শুরু করেছি ।

    ১৯৮১ সালে বারো বছরের সোন ফেই থিয়েন চিন সংগীত ইন্সটিটিউটের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন , ১৯৮৭ সালে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের সংগীত ইন্সটিটিউটের বাদ্য যন্ত্র বিভাগে ভর্তি হন , এই ইন্সটিটিউটে সোন ফেই অব্যাহতভাবে আর হু চর্চা করার সংগে সংগে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রও শিখেন । মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনার সময় থেকেই সোন ফেই বিভিন্ন লোক সংগীত উত্সবে সুর বাজিয়েছেন এবং চীনের অথবা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছেন । ১৯৯১ সালে চীনের সংগীত ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা শেষ করে সোন ফেই চীনের কেন্দ্রীয় লোকসংগীত দলে পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন । দেশবিদেশের আরো বেশী লোক যাতে চীনের লোক সংগীত উপভোগ করতে পারে , সোন ফেই সেই লক্ষ্যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । তিনি চীনের নারী আই ইয়ে বাদক দলে অংশ নিয়ে দলের অন্যান্য সদস্যদের সংগে পেইচিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে অনুষ্ঠান করেন এবং নতুন সুর বাজানোর প্রয়াস নেন । তার প্রচেষ্টা অনেক সংগীত অনুরাগীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছে , অনেক শ্রোতা সোন ফেইয়ের বাজানো সুর শুনে চীনের ঐতিহিক বাদ্যযন্ত্র --আর হুর কোমল ও মধুর সুর পছন্দ করেছেন ।

    ১৯৯৬ সালে সোন ফেই অন্য আটজন যুবতী সংগীতবিদের সংগে হুয়া ইউন চিউ ফান নামে একটি ছোট লোকসংগীত দল গঠন করেন । তাদের বাজানো সুর ঐতিহিক লোকসংগীতে নতুন প্রান শক্তি যুগিয়েছে ,কাজেই এই ছোট বাদকদল সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের প্রশংসা জয় করেছে ।

    ১৯৯৮ সালে সোন ফেই চীনের কেন্দ্রীয় লোকসংগীত দলের সংগে আমন্ত্রনক্রমে অষ্ট্রিয়ার সোনালী হলে অনুষ্ঠান করেছেন ।সোন ফেই লাল রংয়ের লম্বা স্কাট পরে মঞ্চের কেন্দ্রস্থলে বসে দুটি সুর বাজিয়েছেন । দুটি সুরের নাম হলো ' পাহাড়ে পাখির কিচির মিচির ' আর 'ঝরনার পানিতে চাঁদ দেখা ' । ' পাহাড়ে পাখির কিচির মিচিরের ' প্রানবন্ত সুর আর ' ঝরনার পানিতে চাঁদ দেখার গম্ভীর ও সুমিষ্ট সুর পাশ্চাত্যের দর্শকদের মুগ্ধ করেছে । ভাষায় প্রকাশ করা অসুবিধা হলেও দর্শকদের মুখের ভঙ্গী দেখে বোঝা যায় তারা চীনের সংগীত পছন্দ করেন । ১৯৯৮ আর ১৯৯৯ সালের বসন্ত উত্সবচলাকালে সোন ফেই দু দু বার অষ্ট্রিয়ার সোনালী হলে অনুষ্ঠান করেছেন , ফলে চীনের লোকসংগীত মহল ও শ্রোতাদের মধ্যে সোন ফেই আরো জনপ্রিয় হয়েছেন । ঠিক এই সময় সোন ফেই যে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন , তা পরিবার পরিজনসহ তার প্রায় সব পরিচিত লোকের কল্পনার বাইরে । এই সিদ্ধান্ত হলো তার মাতৃবিদ্যালয় --চীনের সংগীত ইন্সটিটিউটে ফিরে গিয়ে শিক্ষকতা করা । এই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্পর্কে সোন ফেই বলেছেন , একদিকে বাবার মতো নিস্বার্থ শিক্ষকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি , তা ছাড়া আমি মনে করি লোকসংগীতের উত্কৃষ্ট উওরাধিকারী গড়ে তুলতে হবে , আমার বয়স এখনো বেশী নয় , শরীরও ভালো , আরো বেশি যুব সংগীতবিদ গড়ে তোলার কাজে আমি আমার শক্তি নিয়োগ করতে চাই । চীনা সংগীত ইন্সটিটিউটে ফিরে যাওয়ার পর সোন ফেই একজন টেলিভিশন শিল্পীকে বিয়ে করলেন , দু হাজার এক সালে তার একটি মেয়ে হলো । সংগীত ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতার বাইরে সোন ফেইয়ের উদ্যোগে আর হুর পুরো একসেট ভিসিডি বেরিয়েছে এবং প্রাচীন ও আধুনিককালের এক শ'রও বেশী আরহু সুর রেকর্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন । সোন ফেই বলেছেন এই সব কাজ করার সংগে সংগে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র আর হু আর লোকসংগীত সম্বন্ধে তার উপলব্ধি আরো বেড়েছে । তিনি লোক- সংগীতের সুর বাজানো আর মঞ্চায়ন সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ্ও লিখেছেন ।

    দু হাজার দুই সালে সোন ফেই একটি একক সংগীতানু্ষ্ঠানের আয়োজন করেছেন , অনুষ্টানে তিনি আর হু , ফিফাসহ মোট ১৩ ধরনের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন ,অনুষ্ঠানটি সাফল্যমন্ডিত হয়েছে ।

    এই বছর সোন ফেইয়ের প্রথম কিস্তির ছাএছাত্রীরা পড়াশুনা শেষ করে স্নাতক হবেন , তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চীনের অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে , সোন ফেই আনন্দের সংগে বলেছেন , আমার ফসল কাটার মৌসুম এসেছে ।