দক্ষিণ ইউরোপের ইতালি দেশটিকে দেখে মনে হয় ভূমধ্য সাগরের বুকে ভেসে থাকা এক খানি বুট জুতা যেন। উত্তর দিকে আল্পস্ পর্বতমালা ইতালিকে ফ্রান্স, সুইজ্যারল্যানড, অস্ট্রিয়া এবং স্লোভেনিয়া থেকে পৃথক করে রেখেছে। ফুটবল সদৃশ সিসিলি প্রভৃতি দ্বীপসহইতালির মোট আয়তন হচ্ছে তিন লক্ষ এক হাজার বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা পাঁচ কোটি আটাশি লক্ষ।
১৮৭০ সালে রাজতান্ত্রিক ইতালি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালে মোসুলিনি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ফ্যাসিবাদী শাসন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে ইতালির রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং ইতালি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইতালির নাম উচ্চারিত হবার সংগে সংগে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রোমসাম্রাজ্য, ১৯০০ বছর আগেকার প্রাচীন পম্পেই নগরীর ধ্বংসাবশেষে, বিশ্ব বিখ্যাত লীনিং টাওয়ার অফ পিসা, রেনেসাঁর জন্মভূমি ফ্লোরেন্স, আনন্দময় জলের নগর ভেনিস, বিশ্বের অষ্টমাশ্চর্য বলে পরিচিত রোম সাম্রাজ্য এরীন্যা ইত্যাদি মানুষের মনে পড়ে যায়।
চৌদ্দতম শতাব্দী থেকে পনেরতম শতাব্দী পর্যন্ত, ইতালির সাহিত্য ও শিল্পকলা খুব সমৃদ্ধ তা হচ্ছে ইউরোপীয় "রেনেসাঁ" আন্দোলনের জন্মভূমি। দান্তে, দ্য ভিঞ্চি, মিশেল এন্জ্ঞেলো, রাফায়েল, গ্যালিলিও প্রমূখ খ্যাতনামা সাহিত্যিক এবং বৈজ্ঞানিকরা মানবজাতির জীবনযাত্রা ও সংষ্কৃতির উন্নয়নে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। বর্তমানে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকা তত্কালীন রোমসাম্রাজ্যের মহত্ অট্টালিকা এবং রেনেসাঁর যুগের ছবি, ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক স্থান ও সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তিগুলো সযত্নে সংরক্ষিত আছে।
ইতালির সুগভীর সাহিত্য ও শিল্পকলার উত্তরাধিকার হচ্ছে দেশের মূল্যবান এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের অফুরন্ত ভান্ডার। নিসর্গের বিশেষ উপহার ভৌগোলিক অবস্থান এবং আবহাওয়া, সর্বমুখী সম্প্রসারিত জল, স্থল ও আকাশ পথের পরিবহণ নেটওয়ার্ক পরিসেবা এবং মানুষের সাংষ্কৃতিক ঐশ্বর্যের আকর্ষনে প্রতি বছর তিন-চার কোটি বিদেশী পর্যটক ইতালি ভ্রমণ করেন। সুতরাং পর্যটন শিল্প হচ্ছে ইতালির জাতীয় অর্থনীতির স্তম্ভ।
ইতালি একটি অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ। তার বার্ষিক অশোধিত তেল শোধনের সামর্থ্য কম-বেশী ১০ কোটি টন। তাই ইতালিকে "ইউরোপের তেল শোধনাগার" বলা হয়। তার ইস্পাতের উত্পাদন ইউরোপে দ্বিতীয়; প্লাস্টিক, ট্রাক্টর, বৈদুতিক শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতালি বিশ্বের একেবারে পুরোভাগে রয়েছে। ইতালির ৭০ শতাংশ জিডিপি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান। তাই ইতালিকে ক্ষুদ্র্র ও মাঝারি শিল্পের সাম্রাজ্য বলা হয়।
ইতালি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নেটোর সদস্য। দক্ষিণ ইউরোপে নেটো বাহিনীর ৫টি সদর দফতর রয়েছে ইতালিতে। ইতালিতে অনেক মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং স্থাপনা রয়েছে।
চীন এবং ইতালির মধ্যে ১৯৭০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিরন্তর উন্নত হচ্ছে এবং উচ্চ পর্যায়ের সফরবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। ইতালির প্রেসিডেন্ট পেরতিনি, প্রেসিডেন্ট স্কালফারো এবং প্রধান মন্ত্রী আমাতো প্রমূখ নেতারা অনেকবার চীন সফর করেছেন। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট লি শিয়েন নিয়েন, প্রেসিডেন্ট চিয়াং জেমিন, প্রধান মন্ত্রী লি পেং, প্রধানমন্ত্রী জু রোংজি প্রমূখ নেতারাও ইতালি সফর করেছেন।
|