v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-30 11:19:58    
"হৈম-যুথি" বা উয়িন্টার জেস্মিন

cri
    চীনের যেমন পিওনি , অজেলিয়া , হৈম-যুথি বা উয়িন্টার জেস্মিন ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর ফুল আছে , তেমনি আছে এই সব ফুল সম্বন্ধে নানা রকম উপকথা ।

    অনেক অনেক দিন আগের কথা । বন্যায় চারদিক ভেসে যাচ্ছিল । ক্ষেতের কসল , জনপদ , ঘরবাড়ি বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল । লোকে আশ্রয় নিয়েছিল পাহাড়ের চূড়ায় । ধান্ডায় আর অনাহারে তাদের দুঃখ-দুর্দশার জীমা-পরিসীমা ছিলনা ।থৈ থৈ বন্যায় গ্রামে যেন দিগন্ত পর্যন্ত হারিয়ে গিয়েছিল , বছরের এক ঋতু থেকে আর এক ঋতুর তফাত্-পযয়ন্ত করা যেতো না ।

    সেইসময়ে সেন নামে এক সম্রাট ছিলেন । তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মন্ত্রী কুনকে । কুন বন্যা দূর করতে একটানা কয়েক বছর চেষ্টা করেছিলেন , কিন্তু জল নেমে যাওয়া দূরে থাক , আরো বেড়েই চলছিল । কুনের মৃত্যুর পর কুনের ছেলে ইউ বাবার আরব্ধ ব্রতের উত্তরাধিকার নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ।

লোকজন নিয়ে ইউ বন্যার জল বের করে দেওয়া পথ পাওয়ার জন্যে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিল , তখন থুনসান নামে এক জায়গায় একটি মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হোলো । মেয়েটি তাদের রান্না-বান্না করতো আর বন্যঅ নেমে-যাওয়ার পথ খজতে তাদের সাহায্য করতো ।মেয়েটির প্রতি ইউ খুব কৃতঙ ছিল , মেয়েটির মনেও অনুরাগ জন্মে ছিল । দুঃখকষ্টের মধ্যে তাদের প্রেম গভীর হয়ে উঠেছিল । অন্যরা উত্সাহ দিতে থাকায় শেষে তাদের বিয়ে হোলো । নতুন দাম্পত্য-জীবন কয়েকদিনমাত্র কাটলো , তারপর কর্তব্যের ডাকে দুজনের ছাড়াছাড়ির সময় হল । ইউকে এগিয়ে দিতে তার স্ত্রী তার সঙ্গে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলল । কিন্তু এগিয়ে দেওয়া আর শেষ হয় না । শেষে একটা পাহাড়ের চূড়োয় উঠে ইউ তার স্ত্রীকে আর সামনে যেতে দিতে চাইলো না , গভীর স্বরে বললো : ব্যস , এবার তুমি ফিরে যাও । আমাকে বিদায় দিতে তুমি অনেকখানি হেঁটেছ , আর না । দুর্গত মানুষকে বন্যার কবল থেকে পাকাপাকিভাবে উদ্ধার করার যে সংকল্প আমরা নিয়েছি তা পূরণ করতে আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমাকে প্রানপনে চেষ্টা করতে হবে । মেয়েটি অশ্রুভরা চোখে ইউকে বলল : তুমি যাও , তোমার কর্তব্য পালন করো , বন্যা দূর করো , তারপর আবার আমার কাছে ফিরে এসো । তুমি যতোদিন ফিরে না আসছো ততোদিন আমি এইখানেই তোমার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম । এ কথা শুনে ইউ ব্যাকুল হয়ে পড়লো , তার দু চোখে জল এল । নিজের কোমর থেকে লতার তৈরী কোমরবন্ধ খুলে সে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেটা স্ত্রীর হাতে তুলে দিল । তার স্ত্রী গভীর ভালোবাসায় সেই কোমরবন্ধে হাত বুলোতে বুলোতে বললো : তবে তুমি যাও । যে দিন বন্যা দূর হবে , সাধারন মানুষ আবার নিশ্চিন্ত জীবনযাত্রা শুরু করবে , যেদিন এই লতায় ফুল ফুটবে আর আমাদের আবার মিলন হবে , সেই দিনটি পর্যন্ত আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো ।

    স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইউ তার লোকজন নিয়ে আবা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লো । দেশের বহু জায়গায় তাদের যেতে হোলো । নানা রকম বাধা-বিঘ্নের মধ্যে তারা খাল কেটে চললো । কাজ উপলক্ষ্যে ইউকে তিন-তিনবার তার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে হয়েছিল , কিন্তু একবারও সে চলায় বিরতি দিয়ে বাড়িতে পা দেয় নি । এমনি করে কয়েক বছর পার হয়ে গেল । ক্রমে নদ-নদী সংহত হল , বন্যার পানি সমুদ্রে নেমে গেল , আবার ফসল হোলো , গাছের ডালে ডালে পাতা গাজিয়ে উঠলো , বসন্তের আকারে মাটিতে যৌবন ফিরলো , সাধারন মানুষের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছান্দ্য এলো । ইউ মনের আনন্দে দিনরাত সামনে হেঁটে বাড়ির দিকে চললো তার প্রিয়তমা স্ত্রীর সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্যে । যে এলাকায় সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল , সেই এলাকায় পৌঁছুতেই দূর থেকে তার চোখে পড়লো : পাহাড়ের চূড়োর কাছে তার স্ত্রী তার-দেওয়া সেই লতার কোমরবন্ধটি উচুঁ করে তুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । ইউ চমকে উঠে আনন্দে-উতেজনায় চিত্কার করতে করতে স্ত্রীর দিকে ছুটে চললো । ছুটতে ছুটতে পাহাড়ের চুড়োয় উঠে স্ত্রীর কাছে গিয়ে সে আচম্কা দাড়িয়ে পড়লো । ব্যাকুল দৃষ্টিতে সে দেখলো তার স্ত্রী আগাগোড়া একটা পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে ।

    ব্যাপারটা ঘটেছিল এইভাবে : ইউ চলে যাবার পর থেকে মেয়েটি দিনের পর দিন সেই একই জায়গায় ইউর প্রতীক্ষা করেছে । শীত-গ্রীষ্ম ঝড়-দৃষ্টি যাই হোক না কেন সবকিছু পাথায় করে মেয়েটি স্বামীর আসার পথ চেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছে । সে দেখেছিল , তার স্বামী তিনবার তাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে চলে গেল , একবারইও মুহূর্তের জন্যেও থামলো না , গাছের ডালে লেগে তাঁর টুপি মাটিতে পড়ে গেলেও চুপিটা কুড়িয়ে নেওয়ার অবকাশ তাঁর হোলো না । মেয়েটিও স্বামীকে একবারও ডাকলো না , স্বামীর বন্যার দূর করার ব্রতে যাতে ব্যাখাত না হয় , যাতে দেরী না হয় । দূর থেকে স্বামীকে সে দেখেছে , কিন্তু যেখানে সে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে সে এক পাও নড়ে নি । এমনি করে দিন গেছে । ক্রমে তার পা মাটির সঙ্গে গেঁথে গেছে , হাঁটি পর্যন্ত ঘাসে ডুবে গেছে , গা বেয়ে লতাপাতা উঠেছে , গায়ে উড়ন্ত বীজ পড়ে ,তা থেকে … বেড়িয়ে তার গায়ে শিকড় ছড়িয়েছে । কিন্তু হাত তুলে সে যেভাবে লতার কোমরবন্ধটি তুলে ধরেছিল সেইভাবে তোলাই আছে । দীর্খদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মেয়েটি প্রস্তরীভূত কংকালে পরিনত হয়েছিল , তার প্রতীক্ষার রূপটা পাথরে জমাট বেধে চিরায়ত রূপ নিয়েছিল । তার হাত দুটোর বিন্দু বিন্দু রক্তমাংসের সিঞ্চনে সেই শুকনো লতা একদিন সবুজ হয়ে উঠেছিল , তা থেকে কচি কচি শাখা আর পাতা বেরিয়ে এসেছিল । সব কিছু বুঝতে পেরে ইউ তার স্ত্রীর পাখুরে মূর্তির উপর লুটিয়ে পড়লো , কাঁদতে কাঁদতে বারবার স্ত্রীর নাম ধরে ডেকে চললো । তখন এক আশ্চর্য ব্যাপার হোলো । ইউর চোখের পানির এক-একটি ফোঁটা সেই লতার উপর পড়তেই এক-একটা সোনালি ফুল ফুটে উঠতে লাগলো । লোকে বলে , মেয়ের নির্মল ভালোবাসা স্বর্গের সম্রাটকে মুগ্ধ করেছিল । স্বর্গীয় সম্রাট ইউকে সাহায্য করার জন্যে ড্রাগন পাঠিয়েছিলেন । লোকে বলে , একনিষ্ঠ প্রেমে মরা লতায়ও ফুল ফোটে ।

    স্ত্রীর বিশ্বস্ততা আর নির্মল ভালোবাসার স্মরণে ইউ এই লতার ফুলের নামকরন করলেন : হৈম-যুথি বা উয়িন্টার জেস্মিন ।