v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-27 22:05:21    
বিনামূল্যের প্রশিক্ষণ কোর্স কৃষকদের ধনী হতে সাহায্য করছে

cri
    বিশ বছর বয়স্ক লিউ কো ফাং হচ্ছেন পূর্বচীনের চেচিয়াং প্রদেশের ছাংসান জেলার একজন সাধারণ কৃষক । তিনি সাধারণত: বেশী কথা বলেন না । কিন্তু সম্প্রতি তিনি অন্যদের সংগে আলাপ করতে খুবই পছন্দ করেন । যদি কেউ তাকে প্রশ্ন করেন , "আপনি সম্প্রতি কি কাজ করছেন ?" তাহলে তিনি সংগে সংগেই আপনাকে বলবেন , "আমি কম্পিউটার ব্যবস্থাপনা করছি।" মাত্র নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন লিউ কো ফাং চার বছর ধরে শহরে মজুরি খেটেছেন । তিনি রাজমিস্ত্রী করেছেন , মুটেও করেছেন । এই সব কাজ ক্লান্তিকর তো বটেই , মাসিক বেতনও মাত্র চার পাঁচ শো ইউয়ান রেনমিনপির মতো । এখন মিষ্টার লিউ একটি নতুন চাকরি পেয়েছেন । তার জন্মভূমি থেকে দু'শো কিলোমিটারের বেশী দূরের নিংপো শহরের একটি কারখানায় তিনি কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ করেন । কাজ হাল্কা ও আরামদায়ক , মাসিক বেতনও হয় এক হাজার তিনশো ইউয়ান রেনমিনপি । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , স্থানীয় সরকার বিনামূল্যে তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়েছে । ফলে তিনি এই ভালো চাকরি পেয়েছেন ।

    ব্যাপারটা এমনি : গত বছরের গ্রীষ্মকালে স্থানীয় গ্রামবাসী স্বশাসন কমিটির পরিচালক লিউ কো ফাংকে হাতের তালির মতো বড় একটি কাগজের টিকেট দিয়ে বললেন , এটি জেলা সরকারের দেয়া প্রশিক্ষণ টিকেট । টিকেটের মূল্য দু'শো ইউয়ান রেনমিনপি । কৃষক যেটিই শিখতে চান না কেন , এই টিকেট নিয়ে জেলা শহর বা টাউনে গিয়ে যে কোনো প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন , নিজে কোনো বেতন দিতে হয় না । লিউ কো ফাং এই টিকেট নিয়ে কম্পিউটার শিখলেন । কম্পিউটার শেখা তার বরাবরের আশা আকাংক্ষা । কিন্তু এর আগে তার এমন কোনো সুযোগ হয় নি । তিনি বলেছেন ,

    "বাড়ীতে কোনো কাজ নেই । বামি চেষ্টা করে দেখার মনস্তত্ত্ব নিয়ে কম্পিউটার শিখতে গেলাম । প্রায় এক মাস শিখলাম । শুরু তে টাইপ শিখলাম । তারপর ধীরে ধীরে কিছু প্রধান প্রধান সফ্ট ওয়্যার চালাতে শিখলাম । বাইরে চাকরি পাওয়ার পর আমার কম্পিউটার চালানো আরো নিপুণ হয়েছে ।" লিউ কো ফাং প্রশিক্ষণ কোর্সে কম্পিউটার চালানো ও মেরামতের প্রযুক্তি শিখে বাইরে এসে বর্তমানের এই চাকরি পান এবং তার আয়ও প্রায় তিন গুণ বেড়েছে ।

    লিউ কো ফাং বলেছেন , তাদের গ্রামের অনেক যুবকযুবতীও প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর বারে এসে সন্তোষজনক চাকরি পেয়েছেন । তাদের দক্ষতা বর্ধনের এই উপায় উদ্ভাবন করেছেন ছাংসান জেলার প্রধান চৌ লিয়াও চু । এই জেলা প্রধান ক্ষমতাসীন হওয়ার দু' বছরে গোটা জেলার দুই লক্ষ আশি হাজার কৃষকের আঢ বাড়ানোর জন্য সবসময়ে চিন্তাশীল ।তিনি দেখেছেন , যদি কৃষক শুধু জমিচাষ করতে পারেন তাহলে তাদের বিপুল আয়বৃদ্ধি খুবই কঠিন ব্যাপার । তাই তিনি কৃষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ টিকিট দেয়ার উপায় উদ্ভাবন করেছেন । অনুন্নত মহকুমাগুলোর কৃষক ও ন্যূনতম জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা ভাতা ভোগীদের সবাই প্রশিক্ষণ টিকেট পাবেন এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একবার করে প্রশিক্ষণ পাবেন ।জেলার প্রধান চৌ লিউ চুন এ সম্পর্কে বলেছেন ,

    "কৃষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারের কয়েকটি দিক আমি বিবেচনা করেছি । আমি মনে করি , কৃষকদের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে কঠিন দিক হলো তাদের গুনগত মান ও দক্ষতার অভাব । কৃষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার অর্থ হলো কৃষকদের নিজেরা বাছাই করতে দেয়া এবং কৃষকদের স্বেচ্ছার ভিত্তিতে কোনো প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের পূর্বশর্তে আমাদের সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণ টিকেটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণদাতা ইউনিটের খরচ চুকানো । আসলে এটা উত্পাদনশক্তিকে রক্ষা ও উন্নত করে ।"

    ছাংসান জেলায় কৃষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার নীতি প্রবর্তনের মাত্র এক বছরেই সাফল্য পরিলক্ষিত হয়েছে । দুই হাজার তিন সালে বাইরে মজুরি খাটতে যাওয়া এই জেলার ছয় হাজার চারশো'রও বেশী কৃষকের মধ্যে তিন হাজার সাতশো'রও বেশী লোক এই উপায়ে কোনোনা কোনো প্রযুক্তি শিখেছেন । তাদের মধ্যে কিছু কিছু লোক রাষ্ট্রের স্বীকৃত পেশাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটও পেয়েছেন । যেমন ডিজিটাল-নিয়ন্ত্রিত মেশিন টুলের মাঝারী স্তরের সার্টিফিকেট ইত্যাদি । তাদের মাসিক আয় সাধারণত: এক হাজার তিনশো ইউয়ানের বেশী । দুই হাজার তিন সালে ছাংসান জেলার কৃষকদের আয় তার আগের বছরের তুলনায় বারো দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে । এই বৃদ্ধিহার ওই বছরের চীনের কৃষকদের আয়ের গড়পড়তা বৃদ্ধিহারের চেয়ে অনেক বেশী । ওই বছরে চীনের কৃষকদের আয়ের গড়পড়তা বৃদ্ধিহার ছিলো মাত্র চার দশমিক তিন শতাংশ ।

    প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুধু বাইরে মজুরি খাটতে যাওয়া তরুণ কৃষকদেরই আয় বাড়ে নি , বরং গ্রামান্চলে থেকে যাওয়া অনেক স্থানীয় কৃষকেরও উপকার হয়েছে । চল্লিশাধিক বছর বয়স্ক লি সিয়াও লিন তাদের মধ্যে একজন ।

    মিষ্টার লি হচ্ছেন ছাংসান জেলার কু সিয়েন গ্রামের অধিবাসী । তার বাড়ীর আঙিনায় দুটো বড় খোঁয়াড় আছে । অতীতে অকৃষি মওশুমের সময়ে মিষ্টার লি সামান্য কয়েকটি শূয়র কিনে নিয়ে টাউনে গিয়ে বিক্রি করে ছোটখাট ব্যবসা করতেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , গত বছর প্রশিক্ষণ টিকেট পাওয়ার পর তিনি চেষ্টা করে দেখার মনোভাব নিয়ে কম্পিউটার কোর্সে গিয়ে প্রশাক্ষণ নিয়েছেন । অতীতে কম্পিউটার সম্পর্কে তিনি কিছুই বুঝতেন জানতেন না ।